কাঠ মাফিয়াদের দাপট দক্ষিণ বাঁকুড়ায়
কাঠ মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য চলছে দক্ষিণ বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে। সম্প্রতি বারিকুল, সারেঙ্গা ও রানিবাঁধের জঙ্গল থেকে বেশ কিছু কাটা শাল গাছ উদ্ধার করা হয়েছে। তার পরেই এলাকাবাসীর ধারনা, জঙ্গলমহলে কাঠ মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গিয়েছে।
রাতের অন্ধকারে একের পর এক গাছ কেটে পাচারের ঘটনায় স্থানীয় কাঠ মাফইয়াদের ‘কালো ছায়া’ দেখছে বন দফতরও। এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন বন দফতরের কর্তারা। গাছ চুরি ঠেকাতে বনকর্মীদের রাত পাহারা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তাঁরা। ডিএফও (বাঁকুড়া দক্ষিণ) সুধীর দাস বলেন, “জঙ্গল থেকে রাতের অন্ধকারে কয়েকটি এলাকায় গাছ কেটে পাচারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় কাঠ মাফিয়াদের একটি চক্র। সম্প্রতি ওই পাচার চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গাছচুরি ঠেকাতে বনকর্মীদের তাই পাহার দিতে বলা হয়েছে।”
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর রানিবাঁধের বাঁশডিহা গ্রামের এক কাঠ ব্যবসায়ীর বাড়ির পাশ থেকে দুই ট্রাক কাটা শালগাছ উদ্ধার করা হয়। প্রায় দেড় লক্ষ মূল্যের আটক ওই শালগাছগুলির স্বাভাবিকভাবে এর পরে কোনও দাবিদার মেলেনি।এ থেকেই বন দফতর নিশ্চিত, রাতের অন্ধকারে বারিকুলের ঝিলিমিলি রেঞ্জের জঙ্গল থেকে গাছগুলি কেটে নিয়ে গিয়ে বাঁশডিহা গ্রামে মজুত করে রাখা হয়েছিল। খবর পেয়ে বন দফতরের আধিকারিকরা গিয়ে তা উদ্ধার করেন। মাসখানেক আগে রাইপুরের বড়পচা এলাকা থেকে প্রায় ১০ টন কাঠ উদ্ধার করা হয়। এর পর সিমলাপাল থেকে ট্রাক বোঝাই শালগাছ আটক করা হয়। একের পর এক চোরাই কাঠ উদ্ধারের ঘটনায় গাছ চুরি যে বেড়ে গিয়েছে বন দফতর তার প্রমাণ পেয়ে গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সারেঙ্গার পিড়রগাড়ি রেঞ্জের বালিগুমা-ভাঙাদেউলি, কাড়ভাঙা, রাইপুরের ফুলকুসমা, মটগোদা, রানিবাঁধের বারোমাইল, সুতান, ঝিলিমিলির জঙ্গল থেকে গাছ চুরি হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাতে বনকর্মীরা পাহারা দেন না। সেই সুযোগে গাছ কেটে নিয়ে পালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। স্থানীয় বন সংরক্ষণ কমিটির সদস্য চুয়াগাড়া গ্রামের বাসিন্দা সুবোধ সিংহ, ভাঙাদেউলি গ্রামের বাসিন্দা অমিয় মাহাতোদের দাবি, “ইতিপূর্বে গাছ চুরি করে পাচার করার সময়ে আমরা জঙ্গল থেকে কয়েক জনকে ধরে বন দফতরের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। আমরা জঙ্গল পাহারা দিচ্ছি। তার পরেও নজর এড়িয়ে কিছু লোক গাছ কেটে নিয়ে পালাচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, বছর দু’য়েক আগে জনগণের কমিটির অবোরধ আন্দোলনের সময় সুযোগ বুঝে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ রাস্তার পাশের কিছু গাছ গাছ কেটে নেয়। তারমধ্যে বেশ কিছু গাছ প্রায় অর্ধেক দামে কিনেছিলেন স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দক্ষিণ বাঁকুড়ার বেশ কয়েকটি জঙ্গল থেকে রাতের অন্ধকারে শাল, আকাশমনি, ইউক্যালিপটাস, সোনাঝুরি, শিশু, গামার গাছ কেটে নিয়ে পালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। কাটা গাছ পিক আপ ভ্যানে চাপিয়ে দুষ্কৃতীরা চম্পট দিচ্ছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, রানিবাঁধ, সারেঙ্গা, রাইপুর ও বারিকুলের জঙ্গল থেকে গত তিন মাসে শ’পাঁচেক শালগাছ কেটে নিয়ে গিয়েছে চোরেরা।
গাছ চুরি ঠেকাতে বন দফতর ও বন সংরক্ষণ কমিটি কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে দাবি করলেও তা মানতে নারাজ দক্ষিণ বাঁকুড়ার বাসিন্দারা। বন দফতরের কর্মীদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রামবাসী থেকে রাজনৈতিক নেতা-সকলেই। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, “শুধু রাতের অন্ধকারে নয়, দিনের বেলাতেও বনকর্মীদের নজর এড়িয়ে জঙ্গল থেকে গাছ কেটে পাচার করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বনকর্মীরা নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকেন।” বাসিন্দাদের এই অভিযোগকে সমর্থন করেছএন সিপিএমের সারেঙ্গা জোনাল কমিটির সম্পাদক অজিত চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বনকর্মীদের নজর এড়িয়ে গাছ চুরি হয়ে যাচ্ছে! এটা সন্দেহজনক।” জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক অলক বিশ্বাস, এবং জেলা তৃণমূল নেতা দিলীপ পাণ্ডাও বলেন, “গাছ চুরি ঠেকাতে বনকর্মীরা সেভাবে তৎপর নয়। তাই অবাধে গাছচুরির ঘটনা ঘটছে।” তবে গাছ চুরির পিছনে স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীদের কোনও হাত নেই বলে দাবি করেছে বাঁকুড়া জেলা কাষ্ঠ ব্যবসায়ী সমিতি। সংগঠনের জেলা সম্পাদক শিবদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, “গাছ চুরির পিছনে বেআইনিভাবে চলা কয়েকটি কাঠচেরাই কলের মালিক এবং স্থানীয় চক্র জড়িত। এর সঙ্গে আমাদের সংগঠনের সদস্যেরা কোনওভাবেই যুক্ত নয়।” তাঁর দাবি, “দক্ষিণ বাঁকুড়ার জঙ্গল থেকে যে গাছ চুরি হচ্ছে, সে কথা বন দফতরকে জানিয়ে আগাম সতর্ক করা হয়েছিল।”
বাঁকুড়ার ডিএফও (দক্ষিণ) সুধীর দাস বলেন, “গত তিন মাসে ওই এলাকার জঙ্গল থেকে বেশ কিছু গাছ চুরি হয়েছে তা ঠিক কথা। তবে বেশ কিছু চোরাই গাছ ও কাঠ উদ্ধার এবং আটক করা হয়েছে। বনকর্মীদের সঙ্গে কাঠচোরদের আঁতাতের অভিযোগ ভিত্তিহীন।” তিনি জানান, গাছ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বনকর্মীদের পাহারা দিতে বলা হয়েছে। চুরির ঘটনাগুলি সম্পর্কে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। বেআইনিভাবে চলা কয়েকটি কাঠ চেরাইয়ের কল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, “গাছ চুরির সব ঘটনার তদন্ত চলছে। চুরি ঠেকাতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.