|
|
|
|
পদত্যাগপত্র দিলেন উপপ্রধান, নূন্যতম পরিষেবা নিয়ে সংশয় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
আর্থিক দুর্নীতিকে অভিযুক্ত আরামবাগের মাধবপুর পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান শেখ মুজিবর রহমান চার মাসের উপরে ‘ফেরার’। অসুস্থতা এবং পারিবারিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে মঙ্গলবার বিকেলে ব্লক অফিসে পদত্যাগপত্র জমা দিলেন ওই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সিপিআইয়ের সুস্মিতা দে।
এই পরিস্থিতিতে গ্রামোন্নয়নের কাজ কী ভাবে হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ওই পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা। সে জন্য পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত সুস্মিতাদেবীকে শংসাপত্রে সই করার কাজটুকু অন্তত চালিয়ে যেতে অনুরোধ করেছেন তাঁরা। কিন্তু বুধবার সুস্মিতাদেবী আর পঞ্চায়েত অফিসে আসেননি।
বিডিও মৃণালকান্তি গুঁই বলেন, “পদত্যাগপত্রটি গৃহীত হওয়ার আগে নিয়মমতো শুনানির ব্যবস্থা করা হবে। পঞ্চায়েতটিকে সক্রিয় করারও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গত লোকসভা ভোটের পর থেকেই আরামবাগ ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতের (সব ক’টিই বামফ্রন্ট পরিচালিত) অধিকাংশের ক্ষেত্রেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা আন্দোলনে নামেন। চলতে থাকে বিক্ষোভ, ঘেরাও, দফতরে তালা মারা। জুন মাসের গোড়ায় মাধবপুর পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে দু’টি রাস্তা নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। লাগাতার বিক্ষোভের জেরে ওই মাসের মাঝামাঝি থেকে প্রধান অফিস আসা বন্ধ করে দেন। বাড়ি থেকে কাজকর্ম চালাচ্ছিলেন। তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে বিডিও তদন্ত করেন। তার পরে প্রধান এবং পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ক অরুণ কোনার-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন। নির্বাহী সহায়ককে গ্রেফতার করা হয়। প্রধান তার পর থেকেই ফেরার। বর্তমানে নির্বাহী সহায়ক জামিনে মুক্ত হয়ে পঞ্চায়েতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত সইসাবুদ করতে পারছেন না। আর্থিক লেনদেনে প্রধান এবং নির্বাহী সহায়ক দু’জনেরই সই থাকার নিয়ম।
প্রধান ফেরার হওয়ার পর বিডিও উপপ্রধানকে সেই দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন। কিন্তু উপপ্রধান সেই দায়িত্ব নেননি। তাঁর যুক্তি, “আমাকে দায়িত্ব আনুষ্ঠানিক ভাবে হস্তান্তর করা হয়নি। কোনও লিখিত সিদ্ধান্তও (রেজুলেশন) নেওয়া হয়নি।”
ওই পঞ্চায়েত এলাকার ৭টি গ্রামে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বাস। আর্থিক লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রামোন্নয়নের কাজ প্রায় স্তব্ধ হয়ে যায়। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ১০০ দিনের কাজ মিলছে না। অকেজো নলকূপগুলি সারানো হচ্ছে না। খালি শংসাপত্র দেওয়ার পরিষেবাটুকু উপপ্রধান চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সব রকম পরিষেবা না পাওয়ায় এলাকায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়ে। পঞ্চায়েত সূত্রেই জানা গিয়েছে, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ২৮ লক্ষ টাকা-সহ ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন এবং তৃতীয় রাজ্য অর্থ কমিশনের বরাদ্দকৃত অর্থ পড়ে রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বিডিও গত ৯ নভেম্বর উপপ্রধানের কাছে আর্থিক দায়িত্ব সম্পন্ন না করার কারণ লিখিত ভাবে জানতে চান। সাত দিনের মধ্যে তাঁকে জবাব দিতে বলা হয়। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, উপপ্রধান সেই কারণ দর্শানোর নোটিসের কোনও জবাব না দিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিলেন।
সুস্মিতাদেবী বলেন, “পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির চাপ আর নিতে পারছি না। অসুস্থতা এবং পারিবারিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেই কারণেই পদত্যাগ করেছি।” পঞ্চায়েতের অচলাবস্থার জন্য সিপিএম অবশ্য তৃণমূলকেই দুষেছে।
আরামবাগের সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক বিনয় দত্তের অভিযোগ, “তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে গ্রামোন্নয়নের কাজ একেবারে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে। পঞ্চায়েতগুলিকে অকেজো করে দিচ্ছে ওরা।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে আরামবাগের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা জানান, মাধবপুর পঞ্চায়েতের অচলাবস্থা কাটাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ওই পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য এবং স্থানীয় বাম নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করা হবে।
কলেজে সংঘর্ষ, জখম ৬। সদস্য সংগ্রহ করাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে জখম হলেন ৬ জন। এঁদের মধ্যে চারজনকে ডায়মন্ড হারবার মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে বুধবার বিকেলে ডায়মন্ড হারবারের ফকিরচাঁদ কলেজে। এই ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে ডায়মন্ড হারবার স্টেশন রোড মোড়ে বিকেল চারটে থেকে পথ অবরোধ করে ছাত্র পরিষদের সমর্থকেরা। এক ঘণ্টা অবরোধ চলার পরে পুলিশ গিয়ে দোষীদের ধরার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। |
|
|
|
|
|