একশো দিনের কাজে হুগলি জেলার পরিস্থিতি/২
সচেতনতা বাড়াতে গড়িমসি প্রশাসনের
কশো দিনের প্রকল্পে চলতি আর্থিক বছরে জেলায় সব থেকে কম কাজ হয়েছে গোঘাট ১ ব্লকে (৫.৫৫ দিন)। বিডিও জয়ন্ত মণ্ডল বলেন, “কাজে এলেই ১৩০ টাকা দিতে হবে, শ্রমিকদের এই অন্যায় দাবির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হয়েছে। কাজের পরিমাণের হিসেব-নিকেশ করে সেই মতো মজুরি দেওয়া হচ্ছে। এতে আবার শ্রমিকেরা উৎসাহ হারাচ্ছেন। তা ছাড়া, ভোটের জন্যও কয়েক মাস কাজ হয়নি। রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে একশো দিনের প্রকল্পের সুপারভাইজারেরা অনেকে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।” বিডিও জানান, অনেক ক্ষেত্রে নতুন সুপারভাইজার নিযুক্ত হলেও তাঁরা ভাল ভাবে কাজ বুঝেই উঠতে পারেননি এখনও। যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব আছে। খানাকুল ১ ব্লকে কাজ হয়েছে গড়ে ১০.৪৯ দিন। বিডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় জানান, “প্রকল্পটির গতিহীনতার মূল কারণ, গণসচেতনতার অভাব। কাজ চাইলে কাজ দিতে যে প্রশাসন বাধ্য, এই ব্যাপারটাই মানুষ জানেন না।” বিডিও জানান, প্রচারের কথা ত্রিস্তর পঞ্চায়েত থেকে। কিন্তু সে জন্য আবার তহবিলের সমস্যা আছে।
ধনেখালিতে কাজ হয়েছে গড়ে ৭.০৬ দিন। বিডিও পূর্ণিমা দে-র বক্তব্য, কাজের দাবিই এসেছে কম। তারকেশ্বরের বিডিও সুমন মজুমদারে বক্তব্য, নির্বাচন, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বর্ষার ফলে এ বছর কাজ কম হয়েছে। কিন্তু প্রচারের অভাব একটা বড় কারণ।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, হরিপাল ব্লকে চলতি আর্থিক বছরে একশো দিনের প্রকল্পে কাজ হয়েছে গড়ে ৭.৫৬ দিন। পাণ্ডুয়ায় ১০.৬২ দিন। সিঙ্গুরে ১৬.২৩ দিন। খানাকুল ২ ব্লকে ১০.৭৫ দিন। একমাত্র শ্রীরামপুরে গড়ে ৩০.১৫ দিন কাজ দেওয়া গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, এখানে জবকার্ডের সংখ্যাও কম। মাত্র ৫৬৪১টি। সংশ্লিষ্ট বিডিও শ্রাবন্তী দাস বলেন, “জবকার্ডের সংখ্যা কম হওয়াতেই মাথা-পিছু কাজ বেশি হয়েছে। তবে আরও বেশি কাজ হতে পারত। কিন্তু এখানে কাজের জায়গা কম। রাজনৈতিক অস্থিরতা তুলমায় কম হলেও কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে কাজ ব্যাহত হয়েছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, একশো দিনের প্রকল্পে গতি আনতে গত ১০ অগস্ট জেলাশাসকের দফতরে প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছিল। সেখানে প্রচারে জোর দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তারপরে কয়েক মাস কেটে গেলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।
এ ব্যাপারে প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) আর এলিস ভাজ জানান, আগে আমরা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রচার চালিয়েছি। এ বছর বিডিওদের বলা হয়েছে, কোথায় কাজ কম হচ্ছে, তা চিহ্নিত করে বিশেষ ক্যাম্প করতে হবে। সার্বিক ভাবে ব্যাপক প্রচারের প্রক্রিয়া চলছে।” তিনি অবশ্য রাজনৈতিক অস্থিরতাকে প্রকল্প রূপায়ণের বাধা বলে মানতে চাননি। এ বছর বন্যা দফায় দফায় দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় সমস্যা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
একশো দিনের প্রকল্পে জেলার এই হাল নিয়ে সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক বিনয় দত্ত বলেন, “রাজ্য সরকারের গাফিলতিতেই প্রকল্পটির ছন্নছাড়া দশা।” প্রশাসনিক আধিকারিকদের ক্ষমতাবৃদ্ধি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “সব কিছু জেলাশাসক, বিডিওদের হাতে তুলে দিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতকে ঠুঁটো জগন্নাথ করে রাখা হচ্ছে।” অন্য দিকে, তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “বাম জমানায় একশো দিনের প্রকল্পে লুটেপুটে খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। আমরা স্বচ্ছ্বতা এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতির উপরে ভিত্তি করে উন্নয়নের চেষ্টা করছি।” তপনবাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সব প্রকল্পে ফেলে রাখা টাকা খরচ করতে হবে। একশো দিনের কাজেও গতি আনতে যা যা করার করা হবে।

(শেষ)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.