বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গত কাল রাতে ঝাড়খণ্ডের পাকুড় জেলায় পিটিয়ে ও টাঙ্গি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে এক মাঝ বয়সী মহিলা সমাজকর্মীকে। মালয়ালি খ্রিস্টান এই সন্ন্যাসিনীর নাম সিস্টার ওয়ালসা (৪৭)। এই বীভৎস হত্যাকাণ্ডের নৃশংতার সাক্ষী হয়ে রইল পাকুড়ের আমরাপাড়া থানার পাচুয়ারা গ্রাম। জোরদার তদন্ত শুরুর দাবি করলেও বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত একজন অপরাধীরও গ্রেফতারের খবর পুলিশ জানাতে পারেনি। এই ঘটনা খ্রিস্টান মিশনারি গ্রাহাম স্টেনের হত্যার ঘটনাকেই মনে করিয়ে দিয়েছে।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু করার তাগিদ নিয়ে ১৩ বছর আগে দক্ষিণ ভারতের কেরল থেকে পাচুয়ারা গ্রামে এসে উঠেছিলেন সিস্টার ওয়ালসা। থাকতেন একটি ভাড়া বাড়িতে। প্রায় দেড় দশক ধরে ওই এলাকায় একটি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা করছিলেন তিনি। ওয়ালসার সামাজিক কর্মকাণ্ডের আকর্ষণে অল্প সময়ের মধ্যেই গ্রামবাসীরা, বিশেষ করে গরিব আদিবাসী মানুষগুলি ওয়ালসার ভক্ত হয়ে ওঠে। এলাকার গরিব মানুষের কাছে ওয়ালসার পরিচয় হয়ে ওঠে শুধুই ‘সিস্টার’।
পুলিশ জানায়, বছর দশেক আগে এলাকার একটি বেসরকারি কয়লাখনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন সিস্টার। তখন ওই খনির-বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের নিয়ে আন্দোলনও গড়ে তোলেন তিনি। গ্রামবাসীদের আন্দোলনে সেই সময় এলাকার পরিস্থিতি প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয়েও উঠেছিল। পরিস্থিতির চাপে তখন বেশ কিছু দিন সিস্টারকে গা-ঢাকা দিয়েও থাকতে হয়।
রাজ্য পুলিশের পদস্থ কর্তারা জানান, তাঁর উপর যে আক্রমণ নেমে আসতে পারে সেটা সিস্টার নিজেও খুব ভাল করেই জানতেন। লাঠি, টাঙ্গি, তীর-ধনুক নিয়ে বেশ কিছু আদিবাসী যুবক সব সময় সিস্টারের পাহারায় থাকত। ইদানীং বেশ কিছু দিন সিস্টারকে এলাকায় দেখা যায়নি। মাস চারেক আগে ফের তিনি ফিরে আসেন। কিন্তু ফিরে আসার পর তাঁর পুরনো ঘনিষ্ঠ গ্রামবাসীদের অনেকেই সিস্টারের কাছে যায়নি। গ্রামবাসীদের একাংশের সঙ্গে সিস্টারের দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কেন, সেটা এখনও পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়।
এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে রাজ্য পুলিশের মুখপাত্র তথা আইজি (আইন ও শৃঙ্খলা) রাজকুমার মল্লিক বলেন, “ঘটনার তদন্তে পুলিশ সর্বশক্তি নিয়ে নেমেছে। দোষীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। নামানো হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। কেন এমন ঘটনা ঘটল এবং কারা ঠিক কী উদ্দেশে এই ঘটনা ঘটাল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” শোনা গেছিল মৃতদেহের কাছে বেশ কিছু মাওবাদী পোস্টার পাওয়া গিয়েছে। যদিও পুলিশ এই ব্যাপারে নীরব। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, সাধারণত মাওবাদীরা এলাকায় সাধারণের জন্য ভাল কাজ করছেন, এমন মিশনারিদের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয় না। সেই কারণেই এ কাজ মাওবাদীদের বলে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে মনে করছে না। তবে তদন্তে এ দিকটিও খতিয়ে দেখা হবে বলে পুলিশের এক পদস্থ সূত্র জানিয়েছেন। |