সাইকেলে চেপে আইমুদ্দিন চলেছেন। পথচলতি জনতা হাঁ করে তাকিয়ে। শিশু-কিশোররা পেছনে ছুটছে। ব্রেক কষতেই তাঁকে ঘিরে ভিড় জমে যায়। এটা-ওটা জানতে চান সবাই।
আসলে আইমুদ্দিন নন, মানুষের আকর্ষণের লক্ষ্য তাঁর সাইকেল। বাঁশের সাইকেল। টায়ার-টিউব, চেন আর স্ক্রু-ক’টি বাদ দিলে পুরোটাই বাঁশের তৈরি। এমনকী চালকের বসার আসনটিও। সেটি বানিয়েছেন বাঁশ গাছের গোড়া দিয়ে। স্টিয়ারিং, তালা, চেন-কভার, স্ট্যান্ড, পা-দানিসবই ওই এক উপাদানে নির্মিত। একই বাঁশের একেক অংশ একেক জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে।
এমন জিনিসটি আইমুদ্দিনই বানিয়েছেন জেনে সবাই অবশ্য সাইকেল থেকে চোখ সরিয়ে তাঁকেই ভাল করে দেখে নেন। পুরো নাম আমিুদ্দিন লস্কর। বয়স ৪৫। বাড়ি সোনাই থানার নতুন রামনগর। এক বছরই স্কুলে গিয়েছিলেন। নাম লেখাটা তখনকারই শেখা। ছাত্রজীবনের পাওনা বলতে ওইটুকুই। দশ বছর বয়স থেকে সাইকেল মেকানিকের কাজ করছেন। ফলে এই জিনিসটির প্রতিটি অংশই তাঁর খুব চেনা। এত চেনা যে মাঝেমধ্যেই মনে হত, এই অংশটি না দিলে কী হত বা এর বদলে কি অন্য কিছু দেওয়া যেত না? |
সেখান থেকেই এক সময় বাঁশের সাইকেল তৈরির বিষয়টি মাথায় আসে। ফলে চার বছর ধরে চলে ভাঙাগড়া। শেষ পর্যন্ত গত শনিবার তাঁর ‘সৃষ্টি’ যে-চেহারা নেয়, তাতেই তিনি তৃপ্ত! বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। বাড়ি থেকে সোনাই বাজার। সেখান থেকে সোজা শিলচর। আসা-যাওয়ায় ৪০ কিলোমিটার। এক বারের জন্যও পথে কোনও সমস্যা হয়নি। তাই সোমবার ফের এই সাইকেলে শিলচর চলে আসেন।
এ কেমন সাইকেল, তাকিয়ে থাকেন সবাই। আইমুদ্দিন জানান, খরচ বেশি নয়। এক বাঁশেই যথেষ্ট। সঙ্গে টায়ার-টিউব ইত্যাদি। সব মিলিয়ে বড়জোর এক হাজার টাকা। উপরন্তু লোহার সাইকেলের থেকে অনেক বেশি টেঁকসই বলে তাঁর দাবি। লোহায় মরচে ধরে। বাঁশে সেই আশঙ্কা নেই। বাঁশের সাইকেল তৈরিতে সফল হওয়ার পর এখন বাঁশের মোটর সাইকেল তৈরির স্বপ্ন। সেখানে তিনি আরও কঠিন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে চান। মোটর সাইকেলের ইঞ্জিনের বদলে ব্যবহার করবেন জল তোলার মোটর!
তিনি যে পারবেন সে ব্যাপারে নিশ্চিত সোনাইয়ের মানুষ। কারণ বহু মানুষের খেতে তাঁর তৈরি লাঙল ব্যবহার হয়। বড় ফলা, কম ওজন। দুর্বল বলদ বা মোষও ভার বহনে সক্ষম। সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তি। এত সব করেন কী করে? আইমুদ্দিন জানান, টিভি খুললেই দেখা যায়, বিদেশের মানুষ কত কী তৈরি করছে। আমরা কেন পারব না! এই ভাবনা থেকেই লাঙল নিয়ে কাজ শুরু। পরে সাইকেলের কথা মাথায় এল। এ বার মোটর সাইকেল। এর পর? আইমুদ্দিনের সহাস্য জবাব, “ইচ্ছে তো হয়হেলিকপ্টারও বানিয়ে ফেলি!” |