ভোট-ঘুষ কাণ্ডে দলের সদস্যরা জামিন পাওয়ার পর আরও আক্রমণাত্মক হওয়ারই কৌশল নিল বিজেপি।
দিল্লির আদালত আজ লালকৃষ্ণ আডবাণীর প্রাক্তন সহযোগী সুধীন্দ্র কুলকার্নি-সহ বিজেপি-র প্রাক্তন দুই সাংসদ মহাবীর সিংহ ভাগোড়া ও ফগ্গন সিংহ কুলস্তের জামিন মঞ্জুর করেছে। বিজেপি-র অন্য সাংসদ অশোক অর্গলের আগাম জামিনের আবেদনও মঞ্জুর হয়েছে। এই ঘুষ-কাণ্ডে মধ্যস্থ হিসেবে কাজ করার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল সঞ্জীব সাক্সেনা ও সোহেল হিন্দুস্থানিকে। জামিন পেয়েছেন তাঁরাও। যে দিল্লি পুলিশের তদন্তের ভিত্তিতে বিজেপি-র এই সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, আজ তারাই এঁদের জামিনের বিরোধিতা করেনি।
বিজেপি নেতৃত্ব এতে ‘খুশি’ হলেও বিষয়টি তাঁরা সহজে ছেড়ে দিতে নারাজ। লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, “আমি খুশি আমাদের সদস্যদের জামিন দেওয়া হয়েছে। তাঁরা কোনও অন্যায় করেননি।
শুধুমাত্র দুর্নীতি ফাঁস করেছিলেন। কিন্তু আমরা শুধুমাত্র তাঁদের জামিন পাওয়াতেই সন্তুষ্ট থাকব না। যত ক্ষণ না তাঁরা আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে ছাড়া পাচ্ছেন, তত ক্ষণ চুপ করে বসে থাকব না আমরা।” আরও এক ধাপ এগিয়ে বিজেপি-র মুখপাত্র রাজীব প্রতাপ রুডি বলেন, “যাঁরা দুর্নীতি ফাঁস করলেন, তাঁরা এত দিন জেল খাটলেন। অথচ ২০০৮ সালে সাংসদদের ঘুষ দিয়ে আস্থা ভোটে সরাসরি লাভবান হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকার। ফলে প্রকৃত দোষীরা শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে বিজেপি।”
আডবাণী নিজে অবশ্য আজ ভোট ঘুষ-কাণ্ড নিয়ে বা দলের সদস্যদের জামিন পাওয়া নিয়ে একেবারেই মুখ খোলেননি জম্মুতে। যদিও বিজেপি-র এই সদস্যদের গ্রেফতার করার পরেই রথযাত্রায় বেরনোর কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি।
যাত্রাপথে প্রতিটি সভায় তিনি এই বিষয়েই জনমত গঠন করে সরকারের উপর চাপ বাড়িয়ে আসছেন। আডবাণীর পাশাপাশি সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি, নিতিন গডকড়ীর মতো শীর্ষ নেতারাও তিহাড় জেলে দলের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে সরকারের উপর রাজনৈতিক চাপ বাড়িয়েছেন। বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী অভিযোগ করেছেন, সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলেই ‘প্রধান চক্রান্তকারী’।
এই অবস্থায় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে কংগ্রেস যতই দুর্নীতি দমনে নিজেদের তৎপরতার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করুক, বিজেপি সরব হবে সরকার পক্ষেরই নানা দুর্নীতি নিয়ে। লোকসভায় দুর্নীতি নিয়ে আলোচনার জন্য ইতিমধ্যেই নোটিস দিয়েছে তারা। সেই আলোচনায় ভোট ঘুষ-কাণ্ড নিয়ে সরকারকে চেপে ধরার তোড়জোর চলছে বিজেপি-তে।
কংগ্রেস অবশ্য জামিন নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইছে না। দলের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেছেন, “বিজেপি খুশি বা আমরা খুশি, সেটা প্রশ্ন নয়। গোটাটাই বিচার ব্যবস্থার প্রশ্ন। দলের পক্ষে আলাদা করে কোনও প্রতিক্রিয়া নেই।”
এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত রাজ্যসভার সাংসদ অমর সিংহ অসুস্থতার কারণে জামিন পেয়েছেন গত মাসেই। অভিযুক্তদের জামিন দিলেও আদালত আজ স্পষ্ট করে দিয়েছে, ভোট-ঘুষ কাণ্ডের ভিডিও ও অডিও টেপগুলি বিকৃত করা হয়েছে, এমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মেলেনি। |