জয়দেব-খাগড়া প্রকল্প নাম দিয়ে বেসরকারি উদ্যোগে দুবরাজপুরের লোবা পঞ্চায়েত এলাকায় হবে খোলামুখ কয়লাখনি। সেই জন্য ওই বেসরকারি সংস্থা বেঙ্গল এমটা বেশ কিছু দিন আগে থেকে ওই এলাকার জমি কেনা শুরু করেছে। সংস্থার দাবি, এলাকার মানুষ তাঁদের স্বস্ফূর্তভাবে জমি বিক্রি করছেন। যদিও এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বাস্তবে চিত্রটা সে রকম নয়। ‘উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ’ না দিয়ে ‘বিক্ষিপ্ত ভাবে’ কিছু জমি কিনে কয়লা উৎপাদন শুরু করতে চাইছে ওই সংস্থা।
তাঁদের আরও অভিযোগ, শুধু তাই নয়। এলাকার কিছু বড় চাষির কাছ থেকে কিছু জমি কিনলেও এলাকার বহু গরিব, প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে জমি কেনার ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখাচ্ছে না তারা। উল্টে এলাকার বর্গাদার, পাট্টাদার, ভূমিহীন এবং মাছ চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও স্পষ্ট নীতি নেয়নি ওই সংস্থা। ফলে ভবিষ্যতে ওই সব চাষিরা কী করবেন, কোথায় যাবেন এবং তাঁদের জীবিকা কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা।
রবিবার ওই সব ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা ওই সব দাবিতে দুবরাজপুরের পলাশডাঙা গ্রামে কৃষি জমি রক্ষা কমিটির ব্যানারে সভা করেছেন। সেই অর্থে সেটা রাজনৈতিক মঞ্চ না হলেও দুবরাজপুরের এক তৃণমূল নেতা প্রভাত চট্টোপাধ্যায় এবং দুবরাজপুর ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি অরুণ চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা দাবি করেন, “এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগের সত্যতা আছে। বর্তমান সরকারের ঘোষিত জমি নীতি মেনে কেউ যদি শিল্প করতে চান, তা হলে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু সেটা যদি না করা হয়, তা হলে প্রতিবাদ হবেই।”
কৃষি জমি রক্ষা কমিটির পক্ষে জয়দীপ মজুমদারের অভিযোগ করেন, “অত্যন্ত চালাকির সঙ্গে কিছু মধ্যস্থাকারীর মাধ্যমে এলাকার জমিগুলি হাতাতে চাইছে ওই বেসরকারি সংস্থাটি। মধ্যস্থাকারীদের মধ্যে এলাকার বেশ কিছু লোকজনও রয়েছেন।” তাঁর দাবি, “প্রথমে এই এলাকার লোবা, বড়ারি, পলাশডাঙা, বাবুপুর, ফকিরবেড়া, জোপলাই, কমলপুর-সহ ১০টি মোজা থেকে মোট ৩৫৫৩ একর জমি কেনার কথা ঘোষণা করেছিল ওই বেসরকারি সংস্থা। এবং একই সঙ্গে সঠিক মূল্যে ও প্রয়োজনীয় প্যাকেজ ঘোষণা করে সমস্ত জমি একবারে কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে পুরোটাই ধাপ্পা। বিক্ষিপ্ত ভাবে দু’চারটি মৌজায় কিছু জমি কিনে কার্যত ওই জমির পাশে থাকা জমির মালিক, বর্গাদার, পাট্টাদাদের উপরে চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে সংস্থাটি।”
জয়দীপবাবুর ব্যাখ্যা, “ধরা যাক একটি বড় পুকুরের দুপাশে কিছু জমি কিনেছে তারা। যন্ত্র দিয়ে সেখানে বড় গর্ত করে দিলে ওই পুকুরের ভাগচাষিরা পুকুর বিক্রি করতে অনিচ্ছুক থাকলেও তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন বিক্রি করে দিতে। কারণ পুকুরের পাশে বড় গর্ত থাকলে সেই পুকুরের জল ধারণ ক্ষমতা কমে যায়।” তাঁর ক্ষোভ, “বিষয়টি নিয়ে প্রশানের বিভিন্ন মহলে জানানো হলেও কেউ ব্যাপারি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে চাননি।” যদিও দুবরাজপুরের বিডিও গোবিন্দ দবের কথায়, “বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বৈঠক হয়েছে। এলাকার কিছু বাসিন্দা তাঁদের অভিযোগ জানিয়েছিলেন। সেই অভিযোগ, আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” বিডিও আরও বলেন, “সোমবার জেলা ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আকিারিকের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।”
জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক শ্যামাশিস রায় বলেন, “সোমবার বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য দু’পক্ষকে ডাকা হয়েছিল। কৃষি জমি রক্ষা কমিটির পক্ষে জয়দীপ মজুমদার মুখ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখেছিলেন এই মর্মেওখানে জোর করে অল্প দামে চাষিদের কাছ থেকে জমি কিনছে ওই সংস্থা। তবে বৈঠকে এ বিষয়ে কোনও প্রমান দেখাতে পারেনি অভিযোগকারীরা। তাঁদের আরও কিছু অভিযোগ লিখিত আকারে জেলাশাসককে জানাতে বলা হয়েছে। এর পরে জেলাশাসক যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন।”
যে সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই জয়দেব-খাগড়া প্রকল্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্মল সরকার বলেন, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের সর্বস্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত মেনেই জমি কিনছি। এই মুহূর্তে এক হাজার একর জমি কেনা হয়েছে। স্বেচ্ছায় সেই সব জমি বিক্রি করেছেন এলাকার চাষিরা।” তিনি জানান, পলাশডাঙার ৮০ শতাংশ জমি কেনার কাজ শেষ। ৫ শতাংশ জমি দিতে অনিচ্ছুক। বাকি ১৫ শতাংশ জমি আইনগত জটিলতার জন্য কেনা সম্ভব হয়নি। তবে সেগুলি কেনার চেষ্টা চলছে। তাঁর দাবি, “যথেষ্ট পরিমাণ মূল্য ও পুনর্বাসন প্যাকেজ দিয়েই কাজ করা হচ্ছে। মুষ্টিমেয় দু’চার জন নিজেদের অনৈতিক ইচ্ছা চরিতার্থ করার জন্য এ সব করছেন। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।”
|