র্যাগিংয়ে অভিযুক্ত ছয় ছাত্রকে হস্টেল থেকে বহিষ্কার করল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (ইউআইটি)। মঙ্গলবার ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে ওই ছাত্রদের হস্টেল ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।
কয়েক দিন আগেই হিন্দি বিভাগের এক ছাত্রীকে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্গী হস্টেলে। পরে অভিযুক্তেরা তাঁর নামে চুরির পাল্টা নালিশ জানান। তবে পরপর ঘটনা ঘটতে থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেমন বিব্রত হয়েছেন, সতর্কও হয়েছেন। ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে দ্রুত।
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার দুপুরে কলেজ সংলগ্ন নতুন হস্টেলে। কম্পিউটার সায়েন্সের প্রথম বর্ষের ছাত্র জিৎ দাসের অভিযোগ, আগের দিন সামান্য বচসার জেরে কলেজ চলাকালীন দুপুরে তাঁকে হস্টেলে ডেকে নিয়ে গিয়ে মেঝেতে ফেলা থুতু চাটতে বাধ্য করা হয়েছিল। মেঝেতে পেন্সিলের দাগ টেনে নাক দিয়ে তা মুছতেও বাধ্য করা হয়। প্রথমে এ সব করতে না চাওয়ায় ঘণ্টাখানেক ধরে তাঁর উপরে মারধর ও নির্যাতন চালানো হয়। কলেজের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি অমিয় ঘোষের কাছে লিখিত ভাবে এই অভিযোগ জানিয়েছিলেন দুর্গাপুরের তিলক রোডের বাসিন্দা জিৎ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ষোড়শীমোহন দাঁকে বিষয়টি জানান কলেজ কর্তৃপক্ষ। তিনি অবিলম্বে তদন্ত শুরু করতে বলেন। অমিয়বাবু বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে দ্বিতীয় বর্ষের ছয় ছাত্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাই তাঁদের বুধবার বিকেল ৫টার ভিতরে হস্টেল ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। এমনিতে না গেলে নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে তাঁদের বের করে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল।”
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি এসএমএস পাঠানো নিয়ে ছাত্রদের মধ্যে গোলমাল বেধেছিল। জিৎ এমনিতে বনবাস কুটির হস্টেলে থাকেন। এক ছাত্রকে তিনি এসএমএস পাঠিয়েছিলেন। ওই ছাত্রটিই সোমবার কলেজ চলাকালীন তাঁকে নতুন হস্টেলে ডেকে নিয়ে যান বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার দুপুরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করান। তখনও তাঁর মুখ, হাঁটু, কনুই, নাকে চোট ছিল। অভিযোগপত্রে জিৎ জানিয়েছেন, নিগ্রহকারীরা তাঁকে প্রথম বর্ষের আরও দুই ছাত্রকে ডেকে নিয়ে আসতে বলেছিল। উদ্দেশ্য, তাদেরও র্যাগিং করা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের ডেকে আনতে না পারলে তাঁর কপালে আরও দুঃখ আছে বলে হুমকিও দেওয়া হয়। এর পরেই মঙ্গলবার বিকেলে বাবা প্রিয়রঞ্জন দাসকে সঙ্গে নিয়ে ইউআইটি-র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম কর্মাধ্যক্ষ দেবীদাস মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করেন জিৎ। দেবীদাসবাবুর নির্দেশেই পরে তিনি অমিয়বাবুর কাছে অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযুক্ত ছাত্রেরা অবশ্য দাবি করেছেন, জিৎকে তেমন মারধর করা হয়নি। সামান্য ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল মাত্র। এর জন্য তাঁরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দুঃখপ্রকাশও করেন। তবে তাতে কর্তৃপক্ষ নরম হননি। এ দিন দেবীদাসবাবু বলেন, “আমাদের অনুমোদিত কোনও কলেজ র্যাগিংয়ের অভিযোগ পেলেই আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব। ওই ছয় ছাত্র যদি হস্টেল থেকে বহিষ্কারের শাস্তিতেও নিরস্ত না হয়, প্রয়োজনে ওদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করা হবে।” |