|
|
|
|
ইসিএলের খনি আবাসন |
পুনর্বাসন দিয়ে দখলদারের তকমা, নালিশ বাসিন্দাদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
ইসিএলের দখল করে রাখা আবাসন খালি করার নির্দেশে ক্ষুব্ধ দিসেরগড়, সাঁকতোড়িয়ার ধসপ্রবণ এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, ধসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ইসিএল কর্তৃপক্ষ পুনর্বাসন হিসেবে নিজেদের আবাসনে থাকতে দিয়েছিলেন। এখন অবৈধ দখলদার তকমা দিয়ে উঠে যেতে বলা হচ্ছে। বিহিত চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁরা আবেদনও করেছেন বলে জানান। তাঁদের দাবি, সরকারি পুনর্বাসন না পেলে তাঁরা ইসিএলের আবাসন ছাড়বেন না।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী অবৈধ ভাবে দখল করে রাখা আবাসন খালি করতে সম্প্রতি মাইকে করে ঘোষণা শুরু করেছে ইসিএল। আবাসন খালি করা না হলে কর্তৃপক্ষ কঠোর আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, অবৈধ দখলদারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি সোদপুর এরিয়ায়। সেখানে প্রায় ১৩৫০টি আবাসন দখল হয়ে রয়েছে। দিসেরগড়, সাঁকতোড়িয়া এলাকাটি এই এরিয়ার মধ্যে পড়ে। অবৈধ দখলের ব্যাপারে দ্বিতীয় স্থানে আছে সাতগ্রাম এরিয়া। সেখানে প্রায় সাড়ে বারোশো আবাসন দখলদারদের কবলে। সংস্থার পার্সোনেল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ইসিএলের ১৪টি এরিয়ায় মোট পাঁচ হাজার আবাসন দখলকারদের কব্জায় আছে। ইসিএলের আইনি চরম পত্রে বেশ কিছু আবাসন খালি হলেও এখনও অনেকটাই মুক্ত করা যায়নি বলে জানান সংস্থার কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়। তিনি বলেন, “আমরা প্রক্রিয়া জোরদার করেছি। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনারের সাহায্য চেয়ে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। পুলিশের তরফে সময়সীমার মধ্যে ঘর খালি না করা আবাসিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হবে।”
ইসিএলের এমন পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে সাঁকতোড়িয়া ভিলেজ সমিতি। সমিতির সহ-সম্পাদক বাচ্চু মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “আমাদের গ্রামে একাধিক বার ধস নেমেছে। একাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ইসিএল নিজের আবাসনে পুনর্বাসন দিয়েছে। এখন তাঁদের গায়েই অবৈধ দখলদারের তকমা লাগিয়ে আবাসন খালি করার নোটিশ পাঠানো হচ্ছে।” প্রতিবাদে ইসিএলের সদর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভও করেছেন তাঁরা। বিহিত চেয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদনও করেছেন। ভিলেজ সমিতি দাবি তুলেছে, সরকার যে পুনর্বাসন প্রকল্প ঘোষণা করেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে অবিলম্বে তা দেওয়া হোক। তা না হলে তাঁরা আবাসন ছেড়ে উঠে যাবেন না। দরকারে আদালতে যাবেন।
ইসিএল কর্তৃপক্ষ অবশ্য ভিলেজ সমিতির এই অভিযোগ মানতে রাজি নন। সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, পুনর্বাসনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত যে পরিবারগুলিকে আবাসনে থাকতে দেওয়া হয়েছে, তাদের উঠে যাওয়ার নোটিশ ধরানো হয়নি। কিন্তু ধসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির বেশ কয়েক জন ইসিএলের দেওয়া আবাসন ছাড়াও অন্য কয়েকটি আবাসন জোর করে দখলে রেখেছে। নীলদ্রিবাবু বলেন, “নিয়ম বহির্ভূত ভাবে দখল করে রাখা আবাসনগুলি আমরা অবশ্যই খালি করব।” ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁকতোড়িয়া গ্রামে প্রথম বার ধস নামে ২০০০ সালে। সে বার বেশ কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাটি ফুঁড়ে ধোঁয়া, আগুন বেরোতে থাকে। ভূগর্ভে বালি ভরাটের কাজ শুরু করে ইসিএল। ক্ষতিগ্রস্তদের সংস্থার আবাসনে সরানো হয়। এর পরে ফের একই ঘটনা ঘটে ২০০৪-এ। ২০১০-এর ২৭ জুলাই ও ৮ অগস্ট দু’বার ধস নেমেছিল। গত ১১ নভেম্বরও ধস নামে সাঁকতোড়িয়া কলোনি এলাকায়। নীলাদ্রিবাবু আরও জানান, ধসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির অনেকেই ইসিএলের দেওয়া আবাসন নিয়ে রেখেছেন। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ছেনে যাননি। তাঁর কথায়, “ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি নিয়ম অনুযায়ী ভেঙে ফেলার কথা। আমরা এত দিন কিছু বলিনি। এ বার সংস্থার তরফে এ সব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|