ইডেনে সৌরভের সারাদিন
আমার মনে হয় না সচিন চাপে আছে
জায়ান্ট স্ক্রিনে তাঁকে দেখানো মাত্র গর্জন করে উঠল ইডেন। ‘দাদা দাদা’! তার পর সেই পরিচিত দৃশ্য। ভেতরে তখন লক্ষ্মণ আর ধোনির দুর্দান্ত পার্টনারশিপ চলছিল। কিন্তু খেলা ছেড়ে জনতার চোখ খুঁজে নিতে চায় ক্লাব হাউসের লোয়ার টিয়ারে আসন নিয়ে ফেলা প্রিয় তারকাকে।
এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেও যে তাঁর প্রাক্তন সতীর্থের শততম সেঞ্চুরি হল না সেটা বিস্ময়কর তো বটেই। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যদিও চিন্তার কারণ দেখছেন না, “আরে, হয়ে যাবে। হয়ে যাবে।” কিন্তু এমন একটা বিরল মাইলস্টোনের সামনে বলেই কি সচিন চাপে পড়ে যাচ্ছেন? সৌরভ বললেন, “আমার মনে হয় না। সচিনের একশো সেঞ্চুরি শুধু কিছু সময়ের অপেক্ষা। কোটলাতেই সেঞ্চুরিটা হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। দুর্ভাগ্যজনক যে, হল না।” গাওস্করকে পেরিয়ে সচিন যখন পঁয়ত্রিশতম সেঞ্চুরি করছেন, তখন সৌরভই ছিলেন ক্রিজের উল্টো দিকে। সেই গাঁটটা পেরোতে এক বছর লেগেছিল।
দ্রাবিড়ের সোনার ফর্ম নিয়ে তেমনই বলে গেলেন, “আবার প্রমাণ হল ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট। ফর্ম নয়।” রাহুল কি এখন জীবনের সেরা ব্যাটিংটা করছেন? সৌরভ মনে করেন না, “আমি রাহুলকে এর চেয়েও ভাল ব্যাটিং করতে দেখেছি। সেরা ব্যাটিংটা ও করেছিল ২০০২ থেকে ২০০৫ এই চার বছর।”
সৌরভকে সেই ব্যাট দেখাচ্ছেন স্যামুয়েলস। ছবি: উৎপল সরকার।
আচ্ছা, গ্রেগ যে আবার এই সব কথাবার্তা লিখলেন বইতে, আপনি কি মামলা-টামলা করবেন ভাবছেন?
সৌরভ এই প্রথম এ নিয়ে মুখ খুললেন। বিরক্ত ভাবে। “পরিস্থিতি মনে হচ্ছে সে দিকেই এগোচ্ছে!”
নিরাপত্তার কড়াকড়িতে তখন লোয়ার টিয়ারের ওই জায়গাটায় জনতার যাওয়ার উপায় নেই। ততক্ষণে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা ব্যারিকেড করে দিয়েছেন। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনও প্লেয়ার ‘দাদা’-র কাছে যেতে চাইছেন দেখলে কী করে তাঁরা আটকাবেন? মার্লন স্যামুয়েলস সটান চলে এলেন সৌরভের কাছে। হাতে একটা ব্যাট। আর সৌরভের কাছে ব্যাট হাতে কেউ আসা মানে অবধারিত ভাবে কোনও জমকালো কাহিনি আছে। সচিন থেকে দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ সবাই জানেন, ব্যাটের নাড়িনক্ষত্র সৌরভের চেয়ে ভাল কেউ চেনে না। অবসর নেওয়ার সময় যখন লক্ষ্মণ এসে তাঁকে বলে গিয়েছিলেন, তোমার ব্যাটগুলো কিন্তু আমাকে দিয়ে যেও। সৌরভ তাঁর সমস্ত ব্যাট তাই লক্ষ্মণকে দিয়ে গিয়েছিলেন। আজ লক্ষ্মণের ইনিংস দেখতে দেখতে তাঁকে জিজ্ঞেস করা গেল, এখনও কি হায়দরাবাদি আপনার ব্যাটেই খেলছে? সৌরভ বললেন, “ওগুলো নিশ্চয়ই আর নেই। অনেক কাল হল তো!”
স্যামুয়লসেরটাও দারুণ কাহিনি। কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলার সময় ক্রিস গেইল একটা ব্যাট নিয়ে যান তখনকার কেকেআর ক্যাপ্টেনের থেকে। সেই ব্যাট ক্যারিবিয়ান শিবিরে এত জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিল যে, সবাই সেটা পেতে চায়। কী করে সম্ভব? স্যামুয়েলস কাজের কাজ করলেন। গেইলের ব্যাটটা ধার চেয়ে নিয়ে গেলেন তাঁর ব্যাট প্রস্তুতকারকের কাছে। ভাই, আমায় এই ব্যাটটা বানিয়ে দাও তো। সেই বানানো ব্যাটটাই এ দিন দেখাতে নিয়ে এসেছিলেন। সৌরভ পরে হাসতে হাসতে বললেন, “ব্যাট কেমন তা তো বোঝা যাবে মাঝখানটায় গিয়ে কী করলে তা দিয়ে।”
পুরনো একটা স্মৃতি মনে পড়ে গেল। সদ্য বিয়ে করে খেলতে গিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। হোটেলে চেক-ইন করে লিফটে উঠছেন। সঙ্গে স্ত্রী ডোনা। লিফটের মধ্যে ঢুকে দেখলেন চার ক্যারিবিয়ান পেসার। ওয়ালশ, অ্যামব্রোজ, বিশপ আর ফ্র্যাঙ্কলিন রোজ। “যেন আমাকে ওয়েলকাম বলার জন্য দাঁড়িয়ে,” এ দিন হাসতে হাসতে বলছিলেন সৌরভ। আর সামনে তাকিয়ে দেখছেন কোথায় সেই ওয়ালশ-অ্যামব্রোজদের আগুন! বল করছেন ডারেন স্যামি! “এক জন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পেসার বল করছে আর উইকেটকিপার স্টাম্পের গায়ে দাঁড়িয়ে কিপ করছে এ দৃশ্য ভাবা যায়? যা টিম তোমাদের বাবা!”
এত ফাঁকা ইডেন আগে কখনও দেখেছেন?
সৌরভ: কখনও না।
কেন লোক আসছে না মনে হয়?
সৌরভ: ভরা সপ্তাহের মধ্যে খেলা হচ্ছে বলেই। ইংল্যান্ডের মতো এখানেও টেস্ট ম্যাচ উইকএন্ডে করতে হবে।
ক্রিকেট কি চরিত্র হারাচ্ছে?
সৌরভ: না, আমার মনে হয় না। কোটলায় কিন্তু ওয়ান ডে ম্যাচে ভাল লোক হয়েছিল। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে লোক হচ্ছে। আসলে আমাদের এখান থেকে কোনও প্লেয়ারও নেই এখন!
পাশ থেকে এক জন মনে করিয়ে দিলেন, যুবরাজ সিংহ এখনও জায়গা পাকা করতে পারল না। কেন যে তুমি খেলা ছাড়লে? টেস্টে মিডল অর্ডারে ওই জায়গাটা দেখছ তো এখনও কেমন ফাঁকা! সৌরভ অবসরের অধ্যায় আর নতুন করে খুলতে চান না। শুধু বললেন, “তিন বছর হয়ে গিয়েছে কিন্তু রিটায়ার করেছি।”
লোয়ার টিয়ার থেকে উঠে চলে এলেন ভিআইপি বক্সে। সেখানে তখন বসা বোর্ডের প্রশাসনিক ম্যানেজার রত্নাকর শেট্টি। সৌরভকে দেখামাত্র শেট্টি নেমন্তন্ন করলেন, “বোর্ডের অ্যাওয়ার্ডস প্রোগ্রাম আছে। তোমাকে কিন্তু আসতে হবে। ইন্ডিয়ার সব ক্যাপ্টেনকে এ বার আমরা ডাকছি।” একটু পরে সেখানে সুনীল গাওস্কর। আড্ডা আরও জমে উঠল। মন্দ আলোর জন্য খেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রাহুল দ্রাবিড় তখন মাঠে দৌড়াচ্ছেন। সৌরভ সানিকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা এ রকম রানিং করতে? টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম দশ হাজার রানের মালিক অজানা কাহিনি ফাঁস করলেন, “আমি তো দৌড়াতে পারতাম না। পায়ে সমস্যা ছিল। রানিং করতে পারতামই না।” শুনে সৌরভ, “বাইশ গজের মধ্যে তো ভালই দৌড়াতে!” এ বার সানি, “বাট দ্যাট ইজ টোয়েন্টি টু ইয়ার্ডস ওনলি! মাত্র বাইশ গজ। মাঠে তিন-চার ল্যাপ কখনও দিতাম না।”
লক্ষ্মণদের ব্যাটিং দেখা। হাসি-ঠাট্টা। স্মৃতিচারণ। ভক্তদের আবদার মেটানো। আর তারই ফাঁকে ক্রিকেট বিশ্লেষণ। মোটামুটি এই হল মঙ্গলবার দাদার ‘ডে আউট অ্যাট ইডেন!’




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.