কোচবিহার থেকে কলকাতার উড়ানের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, কোচবিহারে নিয়মিত বিমান পরিষেবার জন্য ‘নর্থ-ইস্ট শাটল’ নামে সংস্থাটির সঙ্গে রাজ্য সরকারের চুক্তি বাতিল হতে চলেছে। পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট বিমান ও হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করার যে পরিকল্পনা সরকার নিয়েছিল, নানা কারণে তাদের ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
কলকাতা ও বাগডোগরা বাদ দিলে এ রাজ্যে একমাত্র কোচবিহারেই এখন বিমান চালানোর পরিকাঠামো রয়েছে। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, বিমানবন্দরের বিল্ডিং, ফায়ার স্টেশন-সহ সব কিছুই রয়েছে। অনেক টালবাহানার পরে গত ৫ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে কোচবিহার-কলকাতা-কোচবিহার উড়ান চালু হয়। তার পরে বড়জোর সাত থেকে আট দিন উড়ানটি চলেছে। কখনও বিমানের অভাব, কখনও পাইলটের অভাব, কখনও যাত্রী হচ্ছে না নানা যুক্তিতে বন্ধ থেকেছে উড়ান। শেষ উড়ানটি চলে গত ৩ অক্টোবর। সপ্তমী পুজোর দিন।
তখন ওই সংস্থাটি ঘোষণা করেছিল, নভেম্বর মাস থেকে নিয়মিত উড়ান পরিষেবা চালু হবে। কিন্তু তা হয়নি। এখন ওই সংস্থার সঙ্গেই চুক্তি বাতিল করতে
চলেছে পরিবহণ দফতর। মহাকরণ সূত্রে খবর, কোচবিহার উড়ান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উড়ান বন্ধ থাকলেও ডিজিসিএ-এর নিয়ম মেনে এখন কোচবিহার বিমানবন্দরে সকাল এগারোটা থেকে দুপুর
একটা পর্যন্ত এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল খোলা থাকে।
কোচবিহার উড়ান চালু হয়েও বন্ধের মুখে। বেহালা, মালদহ, দুর্গাপুর, বালুরঘাটে বিমান পরিষেবা এবং দিঘা, হলদিয়ায় হেলিকপ্টার পরিষেবার হাল কী? বেহালায় এখনও পাঁচিল দেওয়ার কাজ শেষ হয়নি। মালদহে বিমানবন্দরের কোনও পরিকাঠামো নেই। সেখানে কোন জমিতে বিমানবন্দর তৈরি হবে, তা-ই ঠিক হয়নি। বালুরঘাটে বিমানবন্দর তৈরি করতে গেলে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। দুর্গাপুরেও পরিকাঠামো নেই। অন্ডালে যে বিমানবন্দর হওয়ার কথা, তা চালু হতে এখনও দেরি আছে।
কোচবিহারে ঠিক হয়েছিল, রাজ্য সরকার ভর্তুকি দিয়ে উড়ান চালাবে। কিন্তু নিয়মিত উড়ান না চলায় এখন সেই ভর্তুকি দিতে নারাজ সরকার। রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর নর্থ-ইস্ট শাটল সংস্থা যখন উড়ান বন্ধ রেখেছিল, সেই সময় সরকারের তরফে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। কেন কোচবিহারে নিয়মিত উড়ান চালানো গেল না? নর্থ-ইস্ট শাটলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শোভা মানি বলেন, “কলকাতা থেকে উড়ান চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমাকে কলকাতা বিমানবন্দরে প্রতিদিন ‘পাস’ তৈরি করিয়ে ঢুকতে হত।” বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য সরকারের অসহযোগিতাতেই নিয়মিত উড়ান চালানো যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন মানি।
এই অবস্থায় নর্থ-ইস্ট শাটলের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে অন্য সংস্থাকে দিয়ে উড়ান চালাতে চায় রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার পরিবহণ সচিব বি পি গোপালিকা বলেন, “১৫ দিনের নোটিস দিয়ে দু’পক্ষের কেউ এক জন চুক্তি বাতিল করে দিতে পারে বলে লেখাই আছে।” এর পরে কোচবিহার উড়ানের কী হবে? পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, এই মূহূর্তে ওই রুটে উড়ান চালাতে উৎসাহ দেখাচ্ছে না কেউই। কী হবে তাই কেউ জানে না। |