মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সফরে এসে প্রশাসনকে চাষীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান কেনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বীরভূম জেলায় সেই নির্দেশ এখনও কার্যকর না হওয়ায় চাষিদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা অবশ্য বলেন, “খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের সঙ্গে কথা বলে আগামী শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার জেলার রাজনগর, খয়রাশোল ব্লক অফিস ছাড়া অন্য ব্লকগুলিতে রাইস মিল মালিকদের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত মূল্যে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু হবে। চাষিদের চেকের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হবে। রাজনগর ও খয়রাশোল ব্লকে রাইস মিল নেই সেই জন্য ওই দুই ব্লকে সমবায় সমিতির মাধ্যমে ধান কেনা শুরু হবে।”
সমবায় সমিতিগুলির উপনিবন্ধক অংশুক চক্রবর্তী বলেন, “জেলাতে ৩০০টি সমবায় সমিতি আছে। তাদের মধ্যে ২০০টি সমবায় সমিতি সহায়ক মূল্যে ধান কিনতে রাজি আছে। তাদের তালিকা প্রশাসনের কাছে ইতিমধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে খাদ্য ও সরবরাহ দফতর এবং অন্যান্য সহযোগী এজেন্সি যদি সমবায় সমিতিগুলিকে নির্দেশ না দেয় তা হলে তারা ধান কিনতে পারবে না। কারণ ধান কেনার পরে সেই ধান নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব খাদ্য দফতর ও অন্যান্য সহযোগীদের।” এ দিকে, কৃষকদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার দাবিতে জেলা জুড়ে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন পথ অবরোধ, ব্লক অফিসে বিক্ষোভ কর্মসূচি ইতিমেধ্যে পালন করেছে। জেলা সফরে এসে এ ব্যাপারে তৎপর হওয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তা কার্যকর না হওয়ায় চাষিরা সমস্যায় পড়েছেন।
মাড়গ্রাম থানার চাঁদপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সমর সিংহ বলেন, “চাষিদের ঘরে ঘরে যে পরিমাণ ধান মজুত আছে তা রবি মরসুমের আগে চাষিরা সঠিক মূল্যে বিক্রি করতে না পারেন তা হলে রবি চাষ বন্ধ করে দিতে হবে। বর্তমানে ধান কাটার কাজ চলছে। সেখানে মজুরি দিতে হচ্ছে। রবি মরসুমের জন্য সমবায় সমিতিগুলি দু’দিন পরে রাসায়নিক সারের যোগান দেবে।” তাঁর ক্ষোভ, “কিন্তু ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক চাষি থেকে বড় চাষিদের ঘরে কমপক্ষে ৬০-৭০ কুইন্টাল ধান এখনও মজুত আছে। তাঁরা যদি ধান না বিক্রি করতে পারেন তা হলে সার কিনতে পারবেন না। বাধ্য হয়ে বাইরের দোকান থেকে বেশি টাকায় সার কিনতে হবে তাঁদের।” মাড়গ্রাম থানার শিলগ্রামের চাষি আব্দুল হাসিব, চাঁদপাড়ার হরনাথ মজুমদারের ক্ষোভ, “তেল, গ্যাসের দাম বাড়ছে। আর ধানের সহায়ক মূল্য না পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। সে ব্যাপারে কেউ ভ্রুক্ষেপ করছে না।”
লাভপুরের ধনডাঙা গ্রামের চাষি বিবেকানন্দ মণ্ডল, ময়ূরেশ্বরের নবগ্রামের পার্থ মণ্ডলদের অভিযোগ, “স্থানীয় আড়তদাররা সম্প্রতি ধান বিক্রি কেনা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। এত কিছুর পরেও রবি মরসুমে চাষ করতে হবে। চাষিরা যদি সঠিক মূল্যে ধান বিক্রি করতে না পারেন তা হলে রবি চাষ বন্ধ হয়ে যাবে।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকার নির্ধারিত ধানের মূল্য কুইন্টাল পিছু সরু ধানের ক্ষেত্রে ১,১২০ টাকা, মোটা ধানের ক্ষেত্রে ১০৮০ টাকা। এই সব সমস্যা নিয়ে সোমবার সিউড়িতে প্রশাসনিক স্তরে বৈঠক করেছেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যখন সফরে এসেছিলেন তখন সহায়ক মূল্যে ধান কেনার জন্য বলেছিলেন। সোমবার বৈঠকে তৎপর হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আগামী শুক্রবার থেকে রাইস মিল মালিকদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে।” এখন দেখা যাক অবস্থার কতটা পরিবর্তন হয়।
|