মাঝে আর মাত্র এক দিন। তার পরেই শহরের সবচেয়ে বড় উৎসব ‘কার্তিক লড়াই’। তাই মঙ্গলবার থেকেই কাটোয়ায় সাজো সাজো রব। পুরসভা, পুলিশ থেকে বিদ্যুৎ দফতর, সকলেই ব্যস্ত শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতিতে। এক কথায়, যুদ্ধকালীন তৎপরতা গোটা শহর জুড়েই। তবে পুজো উদ্যোক্তাদের ক্ষোভ, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে কিছুটা সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা।
খানা-খন্দে ভরা রাস্তা সংস্কার করছে পুরসভা। রাস্তায় পড়েছে নতুন পিচের প্রলেপ। পুজো উদ্যোক্তারা ব্যস্ত মণ্ডপ তৈরির কাজে। এক দল উদ্যোক্তা আবার সাজাচ্ছেন ‘থাকা’ পুতুল। বৃহস্পতিবার কার্তিক পুজো। আর তার পরের দিনই হবে শোভাযাত্রা।
পুরসভার তরফে ইতিমধ্যে শহরের ১৯টি রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও আঢাকা খাবার ও কাটা ফল বিক্রি এবং প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সবে মিলে জমজমাট কাটোয়ার কার্তিক লড়াই।
ইতিমধ্যে গোটা শহর আলোয় সাজতে শুরু করেছে। শহর ছাড়িয়ে পানুহাটেও কার্তিক পুজোর বেশ রমরমা। সেখানেও একই চিত্র। পুজো উদ্যোক্তারা মণ্ডপের সামনে আলোকসজ্জার জন্য তোরণ তৈরি করেছেন। এ ছাড়াও অনেক বাড়ির দেওয়ালও সেজে উঠছে আলোয়। গত বছর প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পুজো হয়েছিল ৭৫টি। তা ছাড়াও অন্তত ৩০টি পুজো হয় কোনও অনুমতি না নিয়েই। পুলিশ-প্রশাসনের দাবি, এ বারও এই সংখ্যাটা প্রায় একই রয়েছে।
|
পুজোর সময়ে কাটোয়া শহরে বাইরে থেকে বহু মানুষজন আসেন। সে কারণে বাসস্ট্যান্ড ও সংলগ্ন এলাকা পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে নজর রাখা হচ্ছে বলে পুরসভার তরফে জানানো হচ্ছে। পুজো উদ্যোক্তারাও মণ্ডপের সামনের রাস্তা পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সতর্ক থাকছেন। এক উদ্যোক্তার কথায়, “চার দিক আলোয় ঝলমল করার সময়ে সামান্য অপিরচ্ছন্নতাও বড় দৃষ্টিকটূ লাগে।”
গত বার শোভাযাত্রার সময়ে কাটোয়া শহরে গোলমাল বেধেছিল। জখম হয়েছিলেন প্রায় ৬০ জন। সে জন্য এ বার সতর্ক থাকছে পুলিশ-প্রশাসন। বর্ধমান জেলা তো বটেই, বাইরের জেলা থেকেও পুলিশকর্মী আনা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
বিভিন্ন থানার ওসি এবং উচ্চপদস্থ কর্তাদের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। থাকবে বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডও। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শব্দ দূষণ মাপার জন্য পরিবেশ দফতরের কর্মীরা উপস্থিত থাকবেন।
এই সময়ে চুরি-ছিনতাই রোধ করার জন্য কাটোয়া থানার তরফে সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। নিয়ম না মানলে পুজো উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দমকল বিভাগও। জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “কার্তিক লড়াই সুষ্ঠু ভাবে শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
তবে এত কিছুর মধ্যেও বিদ্যুৎ পরিষেবা নিয়ে ক্ষুব্ধ কাটোয়াবাসী। উৎসবের মুখেও প্রতি দিন প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। সে কারণে উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, এ জন্য কাজ বাকি থেকে যাচ্ছে। তাঁরা বিদ্যুৎ দফতরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান।
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কাটোয়া গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাই দফতরের এক কর্তা বলেন, “বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে গোটা রাজ্যেই সমস্যা রয়েছে। তার উপরে কাটোয়াতে নতুন ‘ফিডার’ হচ্ছে। সে কারণে সমস্যা আরও বেড়েছে। আশা করি পুজোর সময়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।” |