পাহাড়ে পুরভোটে অংশ না নিলেও আপাতত রাজ্যের সঙ্গে কোনও রকম সংঘাতে যেতে নারাজ জিএনএলএফ। রবিবার জলপাইগুড়িতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভার পরে এ কথা জানিয়েছেন জিএনএলএফ প্রধান সুবাস ঘিসিং। তবে তাঁদের দাবি অগ্রাহ্য করে পাহাড়ে ভোট হলে আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, ১৯৮৮ এবং ২০০৫ সালে রাজ্য সরকারের সঙ্গে গোর্খা হিল কাউন্সিলের যে চুক্তি হয় তাতে পাহাড়ের পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলিকে ওই স্বশাসিত পর্ষদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর পরে পাহাড়ের কোনও পুর এলাকা কিংবা পঞ্চায়েতে রাজ্য সরকারের নির্বাচনের অধিকার নেই বলে দাবি করেছেন তিনি। জিএনএলএফ প্রধান বলেন, “অবৈধ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। একটা পুরানো চুক্তি থাকার পরে নতুন করে রাজ্য সরকার ফের কীভাবে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করল সেটা পরিষ্কার নয়। এটা আইনসিদ্ধ নয়। রাজ্য সরকার যে ভাবে পুর নির্বাচন করতে চলেছে তাও অবৈধ। কারণ পুরানো চুক্তি অনুসারে, পাহাড়ের পঞ্চায়েত ও পুরসভাগুলির সবই হিল কাউন্সিলের অন্তর্ভুক্ত। রাজ্য সরকার বারবার ভুল করছে। তবে রাজ্য একটা নতুন সরকার এসেছে। মনে হচ্ছে, এই ভুলগুলি ইচ্ছেকৃত নয়। আমরা তৃণমুল সরকারের শুভাকাঙ্খী। আমরা আরও অপেক্ষা করতে চাই।” মোচা নেতা হরকা বাহাদুর ছেত্রী বলেন, “ঘিসিংয়ের এসব কথা অর্থহীন। কোথায় নির্বাচন হবে, আর কোথায় হবে না সেই ব্যাপারে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারকে কী ঘিসিংয়ের কাছে আইনি পরিমর্শ নিতে হবে?” জিএনএলএফের দাবি, গোর্খা হিল কাউন্সিল নিয়ে একটি বিলও সংসদে বকেয়া পড়ে রয়েছে। সে কারণেও পাহাড়ে পুর নির্বাচন করা আইনত সম্ভব নয়। একই যুক্তিতে চলতি বছরে রাজ্যের নতুন সরকারের মোর্চার সঙ্গে যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত করেছে, তাও বৈধ নয় বলে দাবি করা হয়েছে। জিএনএলএফের দাবিকে অগ্রাহ্য করে আগামী মাসে পাহাড়ে পুর নির্বাচন করা হলে আদালতের দারস্থ হওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন ঘিসিং। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেও রাজ্য সরকারের সঙ্গে এখনই সংঘাতে যেতে রাজি নন ঘিসিং। পাহাড়ের রাজনীতির সঙ্গে যাঁরা পরিচিত এমন বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞে মত, এই মুহূর্তে পাহাড়ে জিএনএলএফের সংগঠনের যা পরিস্থিতি তাতে নির্বাচনে অংশ নিলে ভরাডুবির আশঙ্কা রয়েছে। চলতি বছরের বিধানসভা নির্বাচনে পর্যদুস্ত হওয়ার পরে ফের পুর নির্বাচনেও বিপর্যয় হলে সংগঠন ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে বুঝেই জিএনএলএফ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ঘিসিং এই তত্ত্বকে মানতে চাননি। এদিন জলপাইগুড়ির অরবিন্দনগরের ভাড়া বাড়িতে বসে ঘিসিং বলেন, “নির্বাচনে হার-জিত রয়েছে। তাতে আমরা ভয় পাই না।” রাজ্য সরকারের সঙ্গে মোর্চার ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে জিটিএ গঠন করা বা পরে আদিবাসীদের সামিল করতে ডুয়ার্স তরাই নিয়ে জিএটিএ গঠনের পরিকল্পনাকে কটাক্ষ করে ঘিসিং বলেন, “এসব কী হচ্ছে। এক দিন জিটিএ গঠন হচ্ছে। পর দিন জিএটিএ হচ্ছে। তার পর দিন অন্য কিছু হবে। এসব মানা যায় না। আমরা নজর রাখছি। দরকারে আদালতে যাব।” |