জাল পরিচয়পত্র বানিয়ে ৯ জন বাংলাদেশিকে সিকিমে পাঠানোর অভিযোগে শিলিগুড়ির এক পর্যটন সংস্থার কর্তাকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ সিকিম পুলিশের একটি দল শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানার সহায়তা নিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে ধরে। পুলিশ জানায়, ধৃত পিন্টু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি শিবমন্দির এলাকায়। প্রধাননগরে তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বিধি অনুযায়ী, বাংলাদেশিদের সিকিমে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার আনন্দ কুমার বলেন, “সিকিম পুলিশের দাবি, ৯ জন বাংলাদেশির ভুয়ো পরিচয়পত্র বানিয়ে সিকিমে পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া, সিকিমে ঢুকতে দার্জিলিংয়ের পুলিশের কাছে অনুমতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে তা-ও নেওয়া হয়নি। একটি দালাল-চক্র তৈরি হয়েছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” সিকিম পুলিশের রংপো থানার এক অফিসার দাবি করেন, “এ দিন সকালে রংপোতে ওই ৯ বাংলাদেশিকে ধরা হয়। তাঁদের কাছ থেকে পিন্টুবাবুর নাম জানা যায়। পিন্টুবাবুকে আদালতের মাধ্যমে সিকিমে নিয়ে যাওয়া হবে।” |
পুলিশ সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন ধরেই প্রধাননগরে পর্যটনের ব্যবসা করছেন পিন্টুবাবু। দার্জিলিং, ডুয়ার্সের পাশাপাশি সিকিমেও তাঁর ব্যবসা রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের ৯ জনের একটি দলকে সিকিমে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন তিনি। বাংলাদেশি পর্যটকেরা এ দিন সকালে গ্যাংটকের হোটেল থেকে গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বেরোচ্ছিলেন। তখন পুলিশ তাঁদের জেরা করে। কথা ও আচরণ ‘সন্দেহজনক’ মনে হওয়ায় থানায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। সিকিম পুলিশের দাবি, জেরায় ওই পর্যটকেরা তাদের কাছে জাল পরিচয়পত্রের কথা স্বীকার করেন। তার পরেই পুলিশ তাঁদের ধরে।
পিন্টুবাবু অবশ্য বলেছেন, “আমার সংস্থার মাধ্যমেই ওই ৯ জন সিকিমে যান। কিন্তু তাঁরা বাংলাদেশের নাগরিক বলে জানতাম না।” তাঁর দাবি, “আমার সংস্থার এক কর্মী তাঁদের ভুয়ো পরিচয়পত্র বানিয়েছেন। আমি শুধু সিকিমে থাকার হোটেল বুক করে দিয়েছি।”
পর্যটন সংস্থার নামে এমন অভিযোগ ওঠায় ‘অস্বস্তি’তে শিলিগুড়ির পর্যটন সংস্থাগুলি। ‘হিমালয়ান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস অ্যাসোসিয়েশন’-এর দাবি করেছে, শিলিগুড়িতে বহু পর্যটন সংস্থা গড়ে উঠেছে, যাদের কোনও অনুমতি নেই। সংগঠনের সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, “প্রশাসনের বিষয়টি দেখা উচিত। অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকে বসে একটি নির্দেশিকা তৈরি করে দেওয়া উচিত প্রশাসনের। তাতে এই সমস্যার হাত থেকে রেহাই মিলবে বলে আশা করছি। এ বার যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাঁরা আমাদের সংস্থার সদস্য নন।” ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশিদের সিকিমে ঢোকার অনুমতি দেওয়ার দাবিও তোলা হয়েছে। সংগঠনের এগজিকিউটিভ কমিটির সদস্য সাধন রায় বলেন, “বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক এখানে আসেন। তাঁরা দার্জিলিং, ডুয়ার্সে যান। তাঁরা সিকিমে যেতেও ইচ্ছুক। কিন্তু পারছেন না। আমাদের ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।” |