|
|
|
|
|
|
আধুনিক চিকিৎসায় প্রযুক্তিগত সহায়তা |
প্যারামেডিক্যাল পেশাকে এ ভাবেই ব্যাখ্যা করা চলে। এ রাজ্যেও
কিন্তু অনেক সুযোগ, এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করার।
স্বাতী লাহিড়ী |
আধুনিক চিকিৎসা অনেকাংশেই যন্ত্র-নির্ভর। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় নানান আধুনিক যন্ত্রপাতি চালাবার জন্য প্রয়োজন পড়ে প্যারামেডিক্যাল কর্মীদের। পশ্চিমবঙ্গে প্যারামেডিক্যালে ১১টি ডিপ্লোমা কোর্স পড়ানো হয়। এগুলির জন্যই তৈরি হয়েছে স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি। ‘স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি-র স্বীকৃতি ছাড়া কোনও প্যারামেডিক্যাল কোর্স বৈধ নয়’ জানালেন ফ্যাকাল্টির ডিরেক্টর দিলীপকুমার ঘোষ। তাই, ভর্তি হওয়ার আগে ছাত্রছাত্রীরা যে সংস্থায় ভর্তি হচ্ছেন, তার যথাযথ স্বীকৃতি আছে কি না, তা অবশ্যই দেখে নেবেন।
প্যারামেডিক্যাল পড়ার জন্য যোগ্যতা: ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি-বায়োলজি নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। প্রতিটি বিষয়ে আলাদা করে পাশ করতে হবে। নম্বর অনুযায়ী সরাসরি লিস্ট বার করা হয়। আবেদনকারীর বয়স সেই বছরের ১ সেপ্টেম্বর ১৭ বছর হওয়া চাই। এ ছাড়া আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় তাকে শারীরিক সক্ষমতা (ফিজিক্যাল ফিটনেস)-এর প্রমাণ হিসেবে রেজিস্টার্ড ডাক্তারের সার্টিফিকেট এবং তার চরিত্র বিষয়ে আত্মীয় ব্যতীত দু’জন ব্যক্তির দেওয়া সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। ফ্যাকাল্টি অফিস (স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল, ১৪সি বেলিয়াঘাটা মেইন রোড, কলকাতা-১০, দূরভাষ: ২৩৭২০১৮৫) থেকে ফর্ম তুলে রেজিস্টার্ড পোস্ট অথবা ক্যুরিয়ার মারফত ফর্ম সেখানেই জমা দিতে হবে। নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি-র অফিসে অথবা www.statemedicalfaculti.in ওয়েবসাইট থেকে দেখা যাবে। |
|
লিস্ট বেরনোর পর, কাউন্সেলিং করার পর ভর্তি করা হয়। কাউন্সেলিং-এর সময় ফি হিসেবে ডিমান্ড ড্রাফট জমা দিতে হয় স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর নামে। কাউন্সেলিং-এর জন্য নির্ধারিত দিনে আবেদনকারীকে উপস্থিত হতে হবে। কাউন্সেলিংয়ের সময় এস সি/ এস টি/ ফিজিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপড (উইথ লোকোমোটিভ ডিসঅর্ডার অনলি) এবং মূল মার্কশিট দেখাতে হবে। প্রথম কাউন্সেলিংয়ের পর আসন খালি থাকলে দ্বিতীয় বার কাউন্সেলিং হবে। এর তারিখ ও সময় স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি ঘোষণা করবে।
স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি যে ডিপ্লোমা কোর্সগুলি করায়, সেগুলি হল:
১) ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি টেকনোলজি (প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড বায়োকেমিস্ট্রি): ডি এম এল টি (টেক): ২ বছর সহ ৩ মাস বাধ্যতামূলক পরীক্ষা-পরবর্তী ট্রেনিং।
২) ডিপ্লোমা ইন রেডিয়োথেরাপি (ডায়াগনস্টিক): ডি আর ডি (টেক): ২ বছর সহ ৩ মাস বাধ্যতামূলক পরীক্ষা-পরবর্তী ট্রেনিং।
৩) ডিপ্লোমা ইন ফিজিয়োথেরাপি: ডি পি টি: ২ বছর সহ ৩ মাস বাধ্যতামূলক পরীক্ষা-পরবর্তী ট্রেনিং।
৪) ডিপ্লোমা ইন রেডিয়োথেরাপিউটিক টেকনোলজি: ডি আর টি(টেক): ২ বছর সহ ৩ মাস বাধ্যতামূলক পরীক্ষা-পরবর্তী ট্রেনিং।
৫) ডিপ্লোমা ইন অপ্টোমেট্রি উইথ অপথালমিক টেকনিক: ডি ওপিটি: ২ বছর সহ ৩ মাস বাধ্যতামূলক পরীক্ষা-পরবর্তী ট্রেনিং।
৬) ডিপ্লোমা ইন নিউরো ইলেকট্রো ফিজিওলজি: ডি এন ই পি: ২ বছর সহ ৩ মাস বাধ্যতামূলক পরীক্ষা-পরবর্তী ট্রেনিং।
৭) ডিপ্লোমা ইন পারফিউশন টেকনোলজি: ডি পি এফ টি: ২ বছর সহ ৩ মাস বাধ্যতামূলক পরীক্ষা-পরবর্তী ট্রেনিং।
৮) ডিপ্লোমা ইন ক্যাথ-ল্যাব টেকনিশিয়ান: ডি সি এল টি: ২ বছর সহ ৩ মাস বাধ্যতামূলক পরীক্ষা-পরবর্তী ট্রেনিং।
৯) ডিপ্লোমা ইন ডায়ালিসিস টেকনিক: ডায়ালিসিস টেকনিশিয়ান: ২ বছর সহ ৩ মাস বাধ্যতামূলক পরীক্ষা-পরবর্তী ট্রেনিং।
১০) ডিপ্লোমা ইন ক্রিটিকাল কেয়ার টেকনোলজি: ডি সি সি টি: ২ বছর সহ ৩ মাস বাধ্যতামূলক পরীক্ষা-পরবর্তী ট্রেনিং।
১১) ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফিক টেকনিক (ব্রিজ কোর্স): ই সি জি টেকনিশিয়ান (ব্রিজ কোর্স): ১ বছর সহ ৩ মাস বাধ্যতামূলক পরীক্ষা-পরবর্তী ট্রেনিং।
এ ছাড়া, ই সি জি টেকনিশিয়ান ব্রিজ কোর্স ও ডায়ালিসিস ব্রিজ কোর্স করানো হত, যা বর্তমানে বন্ধ।
যে সমস্ত ইনস্টিটিউটে এই কোর্সগুলি করানো হয়, সেগুলি ছড়িয়ে আছে এই শহর এবং এই রাজ্যের সর্বত্র। মেডিক্যাল কলেজ কলকাতা, এন আর এস (নীলরতন সরকার) মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ, ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ কলকাতা (২৪৪, এ জে সি বোস রোড, কলকাতা-২০), বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড সাইকিয়াট্রি (৫২/১-এ শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিট, কলকাতা-২৫), রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথালমোলজি কলকাতা (৮৮, কলেজ স্ট্রিট), রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেস (১২৪, মুকুন্দপুর, ই এম বাইপাস, কলকাতা-৯৯), চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব রেডিয়োলজি অ্যান্ড মেডিক্যাল ইমেজিং (প্রযত্নে: এ এম আর আই হসপিটাল, গড়িয়াহাট রোড, কলকাতা-২৯), কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট সেন্টেনারি হসপিটাল (ডায়মন্ড হারবার রোড, কলকাতা-৫৩), সুশ্রুত আই ফাউন্ডেশন (এইচ বি-৩৬-এ/১, সেক্টর থ্রি, সল্টলেক, কলকাতা-১০৬), ই এস আই হাসপাতাল, মানিকতলা (৫৪, বাগমারি রোড, কলকাতা-৫৪), ইসলামিয়া হাসপাতাল (৭৩, সি আর অ্যাভেনিউ, কলকাতা-১২), বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স, রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান (৯৯, শরৎ বোস রোড, কলকাতা-২৬), ক্যান্সার সেন্টার ওয়েলফেয়ার হোম অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এম জি রোড, ঠাকুরপুকুর)।
এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু সরকারি আর কিছু বেসরকারি। কিন্তু ‘স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টির ডিপ্লোমার মূল্য সব ক্ষেত্রেই এক। সরকারি আর বেসরকারিতে কোনও পার্থক্য নেই’ বলেছেন দিলীপকুমার ঘোষ। প্যারামেডিক্যাল কোর্সগুলি করলে চাকরি শুধু নয়, সুযোগ থাকে ব্যবসা করারও। স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টির সেক্রেটারি দিলীপকুমার ঘোষ জানালেন, ‘কিন্তু ফ্যাকাল্টি কোনও চাকরির বন্দোবস্ত করে না। এখানে থিয়োরির সঙ্গে প্র্যাক্টিক্যাল ট্রেনিং-এর জোর দেওয়া হয়, যাতে ছাত্রছাত্রীরা দু’দিকেই পোক্ত হয়। তাদের শিক্ষা যাতে সম্পূর্ণ হয়।’ কতটা প্রয়োজনীয় এই কোর্সগুলি? স্কুল অব ট্রপিকল মেডিসিন-এর মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট ও ভাইস প্রিন্সিপাল তমালকান্তি ঘোষ বললেন, ‘আমাদের দেশে সরকারি এবং বেসরকারি সব ক্ষেত্রেই প্যারামেডিক্যাল কর্মীর প্রচুর চাহিদা
প্যারামেডিক্যাল কোর্সগুলিতে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এস সি/এস টি/শারীরিক প্রতিবন্ধী (শুধুমাত্র লোকোমোটিভ ডিসঅর্ডার)-দের জন্য আসন সংরক্ষণ আছে। এর জন্য উপযুক্ত প্রমাণ-সহ আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে। নির্বাচিত প্রার্থীদের ২০১০ সাল পর্যন্ত প্যারামেডিক্যালে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য টোটাল কোর্স-ফি ছিল ৩০,০০০ টাকা। এ ছাড়া, রেজিস্ট্রেশন খরচ ও পরীক্ষার ফি আলাদা করে দিতে হয়। পড়ার সময় কোনও স্টাইপেন্ড দেওয়া হয় না। তবে পরীক্ষার পর ৩ মাসের ট্রেনিংয়ের সময় ৫০০ টাকা করে স্টাইপেন্ড দেওয়া হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের খরচ ইত্যাদির জন্য www.statemedicalfaculty.in দেখতে হবে। মোট খরচের ৫০ শতাংশ টাকা, অর্থাৎ ২০১০ সাল পর্যন্ত যা ছিল, ১৫,০০০ টাকা কাউন্সেলিং-এর সময় কাউন্সেলিং হলে দিতে হয়েছে। অবশিষ্ট ১৫,০০০ টাকা দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাশ শুরু হবার আগে ফ্যাকাল্টি অফিসে জমা দিতে হয়। এই টাকা জমা দেওয়ার রসিদ না দেখালে ক্লাশে যোগ দেবার সুযোগ থাকবে না। প্যারামেডিক্যাল কোর্সে থিয়োরি এবং প্র্যাক্টিকাল দু’টিই অত্যন্ত জরুরি। তাই ক্লাশরুমে পড়ানোর পাশাপাশি পরীক্ষা-পরবর্তী ৩ মাসের ইন্টার্নশিপ (৩০০ ঘণ্টা) বাধ্যতামূলক। ফাইনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইন্টার্নশিপ শেষ করতে হবে। গভর্নিং বডি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ফাইনাল পরীক্ষার মার্কশিট প্রার্থীকে দেওয়া হবে না, যদি না সে পরীক্ষা-পরবর্তী ট্রেনিং অর্থাৎ ইন্টার্নশিপ শেষ না করে। ফাইনাল পরীক্ষায় বসার জন্য প্রার্থীকে থিয়োরি ও প্র্যাক্টিকালে আলাদা আলাদা করে ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি রাখতে হবে। প্যারামেডিক্যাল কোর্সগুলিতে কোনও হস্টেলের সুবিধা নেই।
|
|
|
|
|
|