|
|
|
|
|
|
যুক্তি বনাম যুক্তি... |
যুক্তি, শ্রদ্ধা, আর আত্মবিশ্বাস |
বিতর্ক মানে প্রত্যয়ের সঙ্গে নিজের কথা বলতে পারা।
এবং,
প্রতিপক্ষের কথা মন দিয়ে শোনা। লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও
এই গুণটি দারুণ কাজে লাগে।
অমিতাভ গুপ্ত |
তর্ক নাকি বাঙালির রক্তে। চায়ের দোকান থেকে লোকাল ট্রেনের কামরা, নন্দনের ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে ডোভার লেনের মিউজিক কনফারেন্স বাঙালি যে কোনও জায়গায়, যে কোনও বিষয়ে তর্কে মগ্ন হয়ে যেতে পারে। তবে, সাধারণত সেই তর্কের কোনও নিয়ম থাকে না। যুক্তির জোরে না হলে গলার জোরে লড়ে যাওয়া যায়, ‘তুই কী জানিস’ বলে দাবড়ে চুপ করিয়ে দেওয়া যায় প্রতিপক্ষকে।
‘ডিবেট’ বা ‘বিতর্ক’ এই আড্ডার চেয়ে এই জায়গাগুলোতেই আলাদা। এখানে শান দেওয়া যুক্তির কথায় কাটে কথার প্যাঁচ, আর যুক্তির ভিতে থাকে তথ্য, পরিসংখ্যান। প্রত্যেক বক্তার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া থাকে, তার মধ্যে কথা শেষ করতেই হয়। অন্য বক্তার কথা বলার সময় বাধা দেওয়া একেবারেই বে-আইনি, অভব্যতাও বটে। আর, দু’পক্ষের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরে বিচারক এবং শ্রোতারা প্রশ্ন করেন, সেই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে হয়।
বিতর্কের এই নিয়মগুলো বোধ হয় তোমরা সবাই জানো। নিজেদের স্কুল-কলেজে বা পাড়ায়, কখনও না কখনও বিতর্কে অংশ নিয়েছ অনেকেই, নিদেনপক্ষে শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত থেকেছ। কিন্তু, বিতর্কের মঞ্চে না বসেও, শুধু বিতর্কের নিয়মগুলোকে ঠিক ঠিক পালন করে গেলে নিজের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে, ভাবনাচিন্তার ক্ষেত্রে কতখানি এগিয়ে যাওয়া সম্ভব সেটা তেমন করে ভেবে দেখেছ? আজ সেই কথাই বলব।
নিজে যা-ই মনে করো বিতর্কের একেবারে গোড়ার কথা হল, তুমি নিজে কী বিশ্বাস করো, তাতে কিছু এসে যায় না। তোমায় যে পক্ষের হয়ে বলতে হবে, সেই পক্ষের যুক্তিগুলো দ্বিধাহীন ভাবে, স্পষ্ট করে পেশ করাই তোমার কাজ। ধরো, একটি বিতর্কে সভার মত: ‘মেয়েদের চাকরি করা উচিত নয়’। তোমাদের মধ্যে সম্ভবত সবাই এই মতটার বিরোধিতা করবে। কিন্তু, তোমার পালা পড়ল সভার মতের পক্ষে বলার। কী করবে? এইখানেই আসল পরীক্ষা। তোমার নিজের কী বিশ্বাস, সেই বিশ্বাসের কতখানি জোর, সব ভুলে যাও বিতর্কের সময়টুকুর জন্য। কেন মেয়েদের চাকরি করা উচিত নয়, তার পক্ষে যুক্তি সাজিয়ে তোলো। অনিচ্ছুক মনে নয় বিতর্কের সময়টুকুতে বিশ্বাস করতে থাকো, এটাই তোমার মত। নিজের বিশ্বাসের উল্টো দিকের যুক্তিকে মন থেকে সমর্থন করার কাজটা খুব সহজ নয়। ভেবে দেখো, আইনজীবীদের কাজ কিন্তু অনেকটা এই রকমই।
|
গুছিয়ে নাও |
বিতর্কের প্রথম নিয়ম, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে নিজের যুক্তি পেশ করতে হবে। অনেক সময়েই দেখা যায়, আমরা সব কথাই জানি, কিন্তু গুছিয়ে বলে উঠতে পারি না। গুছিয়ে বলা আসলে একটা অভ্যাসের সুফল গুছিয়ে ভাবার অভ্যাসের। কিছু কিছু মানুষের ভাবনার ধরনটাই গোছানো। তাদের এই নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হয় না। মুশকিল হল, আমাদের বেশির ভাগেরই ভাবনা খুব ছড়ানো-ছেটানো। কিন্তু, সেটা বদলানো যাবে না, এমন মোটেই নয়। গুছিয়ে ভাবার প্রথম ধাপ ভাবনার কাঠামো তৈরি করে নেওয়া। যে কোনও বিষয়কে কিছু প্রশ্ন দিয়ে আক্রমণ করা। একেবারে সহজ প্রশ্ন কী, কেন, কী ভাবে, কখন, কোথায়। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেলেই দেখবে, বিষয়টা অনেকখানি পরিষ্কার হয়ে যাবে। একটা উদাহরণ দিই ধরো, বিতর্কের বিষয় ‘অণ্ণা হজারের আন্দোলন ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর’। দেখো তো, ওই ‘কী, কেন’ প্রশ্নগুলো করে বিষয়টা একটু পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারছ কি না। প্রথম ধাপের প্রশ্নের উত্তর পেলে এ বার দ্বিতীয় ধাপের প্রশ্ন। ‘অন্য কোনও ভাবে আন্দোলন কি সম্ভব?’ ‘গণতন্ত্র মানে কি শুধু নির্বাচন আর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শাসন?’ এই গোত্রের প্রশ্ন। এই প্রশ্নগুলো তুলনায় কঠিন। প্রথমে হয়তো মনে হবে, ‘ওরে বাবা, এত কঠিন কঠিন কথা আমি জানি নাকি?’ এই মনে হওয়াটাকে প্রশ্রয় দিও না। অনেক কথারই মানে জানতে হবে, ব্যাপারগুলোকে বুঝে নিতে হবে। তবে দেখবে, গোড়ায় যতখানি সময় লাগবে, পরের দিকে তার চেয়ে ঢের কম সময়ের প্রয়োজন হবে।
এই নিয়মটা লেখাপড়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োগ করতে পারো। যা-ই পড়ো না কেন, এই ভাবে প্রশ্ন করে উত্তর খুঁজে নাও। এই উত্তরগুলো পেলেই দেখবে তোমার যুক্তি গুছিয়ে নিতে অনেক সুবিধা হচ্ছে।
|
মন দিয়ে শোনো |
দ্বিতীয় নিয়ম, মনোযোগী শ্রোতা হতেই হবে। কথাটা শুনতে যত সহজ, কাজটা ঠিক তত কঠিন। বেশির ভাগ মানুষই অন্যের কথা শুনতে আরম্ভ করেন বটে, কিন্তু খানিক বাদেই মন অন্য দিকে চলে যায়। বিশেষ করে, যখন আমরা জানি যে সামনের লোকটির কথা শেষ হলেই আমায় বলতে হবে, তখন আমরা কথা শোনার বদলে নিজের কথা গুছিয়ে নিতে থাকি। মারাত্মক ভুল। প্রতিপক্ষের যুক্তি কোন পথে যাচ্ছে, সেই পথে ভুলভ্রান্তি কোথায় কোথায়, সেটা যদি খেয়ালই না করি, তবে তাকে চেপে ধরব কী ভাবে? কাজেই, অন্য কেউ যখন কথা বলে, তখন সেটা সচেতন ভাবে শুনতে হবে। মনে কোনও প্রশ্ন এলে সঙ্গে সঙ্গে তা লিখে ফেলতে হবে।
এই নিয়মটা তোমার ক্লাসেও সমান কাজে দেবে। ক্লাসে স্যার যখন পড়াচ্ছেন, তখন মন দিয়ে শোনো। যা শুনছ, তাকে প্রশ্ন করতে থাকো। স্যর বললেন বলেই যে কথাটা ধ্রুবসত্য, তা তো না-ও হতে পারে। অথবা, এমনও হতে পারে যে স্যর যেই কথাটা বললেন, সেটা তোমার কাছে স্পষ্ট হল না, তুমি ভুল বুঝলে। যদি মন দিয়ে না শোনো, তবে এই প্রশ্নগুলো তোমার মনে তৈরিই হবে না। অনেক সময় আমাদের মনে প্রশ্ন আসে বটে, কিন্তু সাহস করে সেই প্রশ্নটা আর করে ওঠা হয় না। ভয়ের কোনও কারণ নেই প্রশ্ন করলে মাস্টারমশাইরা মোটেই রাগ করেন না। তাঁর পড়ানোর মধ্যেই উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলে নিশ্চয়ই রাগ করবেন, কিন্তু তাঁর বলা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে প্রশ্ন করলে তিনি ঠিকই উত্তর দেবেন। আর, এটাই বিতর্কের নিয়ম নিজের সময়ের জন্য অপেক্ষা করো। প্রশ্নগুলো খাতায় লিখে রেখো। মাথায় রাখতে গেলে হয় প্রশ্নটা হারিয়ে যাবে, নয়তো পরের কথাগুলো আর কিছুই শোনা হবে না।
|
খোলা মনে শোনো |
তৃতীয় কথা হল, প্রতিপক্ষের কথা শুধু মন দিয়ে শুনলেই হবে না, খোলা মনে শুনতে হবে। প্রতিপক্ষের যুক্তিকে সম্মান করতে হবে। আমরা অনেকেই ভাবি, উল্টো দিকের মানুষের যুক্তিটাকে সম্মান করলে, মেনে নিলে বুঝি আমার যুক্তির ধার কমে গেল। তা একেবারেই নয়। ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়র বলেছিলেন, ‘আমি তোমার কথার সঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্নমত হলেও তুমি যাতে তোমার কথাটা বিনা বাধায় বলতে পারো, তার জন্য আমি আমার শরীরে শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত লড়াই করব।’ কথাটা আসলে বাক্স্বাধীনতার প্রেক্ষিতে বলা, কিন্তু প্রতিপক্ষের যুক্তির প্রতি পূর্ণ সম্মান না থাকলে এই কথাটা বলা সম্ভব নয়। রাস্তার, চায়ের দোকানের তর্কে যেমন অন্যকে দাবড়ে থামিয়ে দেওয়া যায়, মঞ্চের বিতর্কে বা ক্লাসঘরে তো সেটা সম্ভব নয় কিন্তু আমাদের মন সেই কাজটাই করতে চায়। তখন, হয়তো আমাদের অজান্তেই, আমাদের মন প্রতিপক্ষের যুক্তি শোনা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। হয়তো মন দিয়েই কথাগুলো শোনে, কিন্তু সেই কথাগুলোর সঙ্গে মনের ভিতর যে তর্ক হওয়ার কথা, সেটা হয় না। আমরা মনে মনে ধরেই নিই, ওগুলো সব খাজা যুক্তি।
তা করলে চলবে না। প্রতিপক্ষের যুক্তি মানবে কি মানবে না, সেটা পরের আগে, সেই যুক্তি গুলোর মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। সেগুলোকে প্রশ্ন করতে হবে। সৎ ভাবে বাজিয়ে দেখতে হবে যে ওগুলোর মধ্যে কিছু শাঁস আছে, না শুধুই ফাঁপা। তার পর মানা-না-মানার প্রশ্ন। এই কাজটা করার সেরা উপায়, সাময়িক ভাবে প্রতিপক্ষের যুক্তিকে নিজের যুক্তি বলে ভেবে নেওয়া। নিজের যুক্তিকে প্রতিষ্ঠা করতে আমরা যতখানি চেষ্টা করি, মনের মধ্যে প্রতিপক্ষের যুক্তির জন্যও ঠিক ততখানি লড়ে যেতে হবে। একমাত্র তখনই সেই যুক্তির তুল্যমূল্য বিচার করা সম্ভব। আর, এটা করতে পারলেই দেখবে, তোমার নিজের যুক্তিও আরও ধারালো হয়ে উঠছে। কারণ, তুমি জেনে যাবে, প্রতিপক্ষের যুক্তির মধ্যে ফাঁক কোথায়, আর কোথায় তার জোর। সেই ফাঁক দিয়েই নিজের আক্রমণ শানাতে হবে।
|
প্রত্যয়ী, উদ্ধত নয় |
শেষ কথা হল, তোমাকে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। যখন নিজের যুক্তির ওপর তোমার ভরসা আসবে, অন্যের যুক্তি বিশ্লেষণ করতে পারবে, তার ভুলভ্রান্তি ধরতে পারবে, প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে নিজে থেকে তখনই দেখবে, আত্মবিশ্বাসও নিজে থেকেই এসে গিয়েছে। বিতর্কে সফল হওয়ার জন্য এই প্রত্যয় খুব জরুরি। নিজের মতটাকে জোর দিয়ে বলা, নিজের বক্তব্যের পিছনে নিজের সমর্থনটাকে স্পষ্ট করে দেওয়া দরকার। ঠাণ্ডা ভাবে নিজের যুক্তি পেশ করে যাওয়া আলোচনার উপযুক্ত, বিতর্কের নয়।
তবে, মনে রাখা ভাল, আত্মবিশ্বাস আর ঔদ্ধত্যের মধ্যে ফারাক আছে। ঔদ্ধত্য বড় খারাপ জিনিস বিতর্কের মঞ্চেও, ক্লাসঘরেও। উদ্ধত হওয়া মানেই উল্টো দিকে থাকা মানুষটিকে অপমান করে ফেলার সম্ভাবনা। আর, নিশ্চিত ভাবেই নিজের ভুলভ্রান্তি দেখতে না পাওয়া। নিজেকে প্রশ্ন করতে ভুলে যাওয়া।
|
দ্য ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং ইনস্টিটিউট অব আইডিয়াজ, ইউ কে-র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হল ‘ডিবেটিং ম্যাটারস ইন্ডিয়া’ নামের বিতর্কসভা। বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বিতর্কে উৎসাহী করে তুলতে, সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনায় দড় করতে তুলতেই এই বিতর্কের আয়োজন। কলকাতার সাউথ সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে আয়োজিত পূর্ব ভারতের স্কুলগুলির আঞ্চলিক ফাইনালে জয়ী হল কলকাতার আওয়ার লেডি কুইন অব দ্য মিশন স্কুল। দ্বিতীয় স্থান পেল ভুবনেশ্বরের ডি এ ভি পাবলিক স্কুল ইউনিট ৮। বিজয়ী দলের দুই সদস্যের সঙ্গে কথা বলল প্রস্তুতি
|
সিভিল সার্ভিসের প্রস্তুতিতে কাজে লাগবে |
পয়স্বিনী টেলর |
আমি আমার স্কুলের ডিবেটিং টিমের ক্যাপ্টেন। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় থেকে আমি ডিবেট করতে আরম্ভ করি। তার পর কখনও অভ্যাসটা ছাড়িনি। বিতর্ক আমার স্বাভাবিক ভাবেই আসে। আমার মনে হয়, একটা গণতান্ত্রিক দেশে বিতর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিতর্কের মাধ্যমে নিজের মত প্রকাশ করা যায়, আর নিয়মিত বিতর্কের অভ্যাস থাকলে শেখা যায়, কী করে অল্প কথার মধ্যে নিজের বক্তব্য গুছিয়ে পেশ করা যায়। গত সাত বছরের অভিজ্ঞতা আমায় এটা শিখিয়েছে। লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও বিতর্কের অভিজ্ঞতা খুবই কাজে লাগে। যে কোনও এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিই লেখাপড়ার ক্ষেত্রে উপকারী, বিতর্ক তো বটেই। নিয়মিত বিতর্কে অংশগ্রহণ করলে চিন্তায় স্বচ্ছতা আসে। বিশেষত ইংরেজি পড়ার ক্ষেত্রে এই স্বচ্ছতা আমার খুবই কাজে লেগেছে। তা ছাড়া, বিতর্কের জন্য নিয়মিত বিভিন্ন জিনিস নিয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা করতে হয়। তাতে নলেজ বেস অনেকখানি বেড়েছে। আমি যুক্তি দিয়ে ভাবতে শিখেছি। আমার ইচ্ছা, আমি ভবিষ্যতে সিভিল সার্ভিসে যোগ দেব। যুক্তি দিয়ে ভাবতে পারা, অনেক জিনিস সম্বন্ধে মোটামুটি গভীরে জানা এর প্রত্যেকটাই আমায় ভবিষ্যতে সাহায্য করবে বলে আশা করি। বলা যায়, এন্ট্রান্সের জন্য এক পা এগিয়ে থাকলাম। |
প্রতিপক্ষের যুক্তি মন দিয়ে শুনতেই হবে |
আরুশি ধুপিয়া |
যখন ক্লাস সেভেনে পড়তাম, তখন থেকে আমি ডিবেট করতে আরম্ভ করি। প্রথমে স্কুলের মধ্যে, তার পর বিভিন্ন ইন্টার স্কুল কম্পিটিশনে, তার পর অল ইন্ডিয়া ফ্র্যাঙ্ক অ্যান্টনি ডিবেট এবং ডিবেটিং ম্যাটারস ইন্ডিয়া-র মতো সর্বভারতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, বিতর্কের সময় প্রতিপক্ষের কথা খুব মন দিয়ে শোনা উচিত। বিতর্ক একটা দ্বিমুখী প্রক্রিয়া নিজের কথাটুকু জোরের সঙ্গে বলতে পারাই যথেষ্ট নয়। প্রতিপক্ষ কী বলছে, সেটা ভাল করে শুনলে তবেই তার দুর্বলতা এবং নিজের জোরের জায়গাগুলোকে আলাদা করে চিনে নেওয়া সম্ভব। প্রতিপক্ষের কথা যখন শুনি, তখন অবশ্যই তার প্রতি শ্রদ্ধা নিয়েই শুনি। তার যুক্তি বোঝার চেষ্টা করি। তবে, একই সঙ্গে এটাও মাথায় রাখতে হয় যে তার যুক্তি যেন আমার যুক্তিকে ভাসিয়ে নিয়ে চলে না যায়!
আমি কি কখনও প্রতিপক্ষের যুক্তিতে এতখানি প্রভাবিত হয়েছি যে আমার নিজের যুক্তি গুলিয়ে গিয়েছে? কখনও না! হলে, সেটাই আমার জীবনের খারাপতম ডিবেট হত। বিতর্কের মূল কথা হল, আমাকে সভার মতের যে পক্ষে বলতে বলা হয়েছে, সে পক্ষের যুক্তিগুলোকে খুব জোর দিয়ে বলা। অনেক সময়ই হয় যে আমায় যা বলতে বলা হয়েছে, আমি তার ঠিক উল্টোটা বিশ্বাস করি। কিন্তু, বিতর্কের সময়টুকুতে নিজের ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে সরিয়ে রাখতেই হবে। সত্যি, যেটা বিশ্বাস করি, সেটাই বলতে হলে সেই বলায় অনেক বেশি জোর থাকে। কিন্তু, বিশ্বাসের উল্টো কথাটা বলতে পারাই হল বিতর্কের শিক্ষা। |
|
|
|
|
|
|