একটি বেসরকারি বাস উল্টে জখম হয়েছেন অন্তত ৫০ জন যাত্রী। রবিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ওই বাসটি কোতোয়ালির ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ভাতজাংলার কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। পুলিশের অনুমান, বাসের পিছনের দু’টি টায়ার আচমকা ফেটে গিয়ে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
আহতদের মধ্যে ৩৫ জনকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁদেক মধ্যে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে রানাঘাট থেকে কৃষ্ণনগরগামী বাসটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে আসছিল। ভাতজাংলা পেট্রোল পাম্পের কাছে বাসের পিছনের একটি টায়ার ফেটে যায়। এর পরে বাসটির পিছনের দিকে হেলে পড়তেই আচমকা অন্য টায়ারটিও প্রবল শব্দে ফেটে যায়। এরপরে আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি বাসটি। পাশের নয়ানজুলিতে উল্টে যায়। যাত্রীদের চিৎকারে স্থানীয় বাসিন্দারা এসে জানালা ভেঙে তাঁদের উদ্ধারের কাজ শুরু করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাসের ছাদেও প্রচুর যাত্রী ছিলেন। তাঁরা কোনও মতে লাফ দিয়ে পনে প্রাণ বাঁচান। |
আহত যাত্রী বিজলি বিশ্বাস বলেন, “বাসটিতে প্রচণ্ড ভিড় ছিল। চালকও বেশ জোরে চালাচ্ছিলেন। বাসের অধিকাংশ যাত্রী শান্তিপুরের রাস দেখে ফিরছিলেন। টায়ার ফেটে যাওয়ার আওয়াজ প্রথমে বুঝতে পারিনি। বাসের মধ্যে বোমা ফেটেছে ভেবেছিলাম। বাস থামানোর কথা বললেও চালক আমাদের কথা শোনেনি।” যাত্রীদের অভিযোগ, বাসের টায়ার দু’টি খুব পুরনো হওয়ায় তা ফেটে যায়। বার বার ‘রি-সোলিং’ করা টায়ারে কোনও ‘গ্রিপ’ ছিল না। আহত বাসযাত্রী মুক্তি দেবনাথ বলেন, “টায়ার দু’টির অবস্থা এতটাই বেহাল ছিল যে একটা ফেটে যাওয়ার খানিকক্ষণের মধ্যে আরেকটাও ফেটে যায়। আমাদের প্রশ্ন, এরকম বিপজ্জনক চাকা নিয়ে বাস রাস্তায় চলার অনুমতি পায় কী করে?” যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়েও প্রশাসন উদাসীন বলে যাত্রীদের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, এমন বিপজ্জনক ভাবে বাস চলাচলের বিষয়টি কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করবে না প্রশাসন? কেন ওই বাস মালিকের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? প্রশ্ন উঠেছে, সংশ্লিষ্ট দফতরের যে সব কর্মী এই ধরণের বাসকে ‘ফিট সার্টিফিকেট’ দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না? এ বিষয়ে নদিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শ্রীকুমার চক্রবর্তী বলেন, “মানুষের জীবন নিয়ে এই ভাবে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া যাবে না। কী ভাবে এই ধরণের বাস রাস্তায় চলাচলের অনুমতি পাচ্ছে, তা আমি নিজেই তদন্ত করে দেখব।”
নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির সহ-সম্পাদক অসীম দত্ত বলেন, “বিপজ্জনক টায়ার নিয়ে বাস চালানোর ব্যাপারে আমরা বাস মালিকদের সচতেন করেছি। কিন্তু জাতীয় সড়কের যা অবস্থা, নতুন টায়ার কয়েক দিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।” |