ঘটনা ১: বিকেল সওয়া পাঁচটা। প্রায় অন্ধকার ঘরের জানালার শিক ধরে অসহায় কন্ঠে এক বৃদ্ধ নাগাড়ে বলে চলেছেন,‘‘ শুনছেন কেউ এক বার আসবেন আমার বড় বিপদ গো।’’ কিছুক্ষণ পর পথচলতি এক জন গিয়ে দেখেন অশিতিপর বৃদ্ধ সুদর্শন বিশ্বাসের ঘরে আলো জ্বালানোর কিছুই নেই। টানা ৩২ ঘন্টা বিদ্যুতহীন থাকার ফলে শেষ হয়ে গিয়েছে ইমার্জেন্সি আলোর ব্যাটারি। নেই কেরোসিন লম্ফ, লন্ঠন কিংবা মোমবাতিও। অন্ধকারে ভয় পেয়ে গিয়েছেন ওই বৃদ্ধ।
ঘটনা ২: সুখরঞ্জন দেবনাথ মধ্য পঞ্চাশের মানুষটির কোমরের নিচের থেকে প্রায় অসাড়। বিছানা থেকে ওঠার ক্ষমতা নেই। শুক্রবার সকাল নটা থেকে একটানা বত্রিশ ঘন্টা বিদ্যুহীন। ফলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁর ভাই পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর নিরঞ্জন দেবনাথ বলেন, ‘‘দেড় দিন অসুস্থ দাদাকে নিয়ে কিভাবে যে কাটিয়েছি তা বলার নয়। কেবল তারাই এই কষ্ট বুঝতে পারবেন যাঁদের বাড়িতে এমন রোগি আছেন।’’
এমন আরও অসংখ্য ছবি নিয়েই পড়ে রয়েছে নবদ্বীপ। কেন? আঙুল উঠবে সেই রাসের অতিকায় প্রতিমার দিকেই। শোভাযাত্রার জন্য শুক্রবার সকাল নটা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত শহরের বিস্তীর্ণ অংশে বিদ্যু সরবরাহ বন্ধ ছিল। যদিও এ বারে রাস উসবের আগে একাধিক বৈঠকে প্রশাসনের তরফে একটা ইঙ্গিত মিলেছিল যে শোভাযাত্রার জন্য এবারে অন্তত শহরের বিদ্যু সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটবে না। সে প্রতিশ্রতি মেলেনি। শেষপর্যন্ত রাসের পর নবদ্বীপে তাই নেমে এল চেনা আঁধার। বিদ্যু বন্টন দফতর এবং রাস উদ্যোক্তাদের তরফে কেন্দ্রীয় রাস উসব কমিটি প্রতি বারের মতোই একে অপরের দিকে আঙুল তুলেছেন। উভয় তরফেরই বক্তব্য, কেউ কথা রাখেনি।
বিদ্যুৎ বন্টন দফতরের কর্তারা জানান, বিদ্যুৎ রাখার জন্য যে সব শর্ত মানার কথা ছিল তা মানেননি রাস-কর্তারা। এ প্রসঙ্গে নবদ্বীপ বিদ্যুৎ বন্টন দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অসিত সাহা বলেন,‘‘ এ বারে বলা হয়েছিল প্রতিমার উচ্চতা ২২ ফুটের মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হবে। যে সব প্রতিমা তার থেকে বেশি উচ্চতার হবে সেগুলি সকালের দিকে শোভাযাত্রা সেরে ফেলবে। অথচ মাত্র দুটি প্রতিমা ছাড়া বাকি সমস্ত প্রতিমাই সন্ধ্যাবেলায় শোভাযাত্রা বের করে। দ্বিতীয়ত আমরা বলেছিলাম একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমস্ত প্রতিমা শোভাযাত্রার চক্রপথে ঢুকে যাবে। তাহলে সেই সময়ের পর আমরা অন্যান্য অংশে বিদ্যু সরবরাহ চালু করে দিতে পারতাম।’’
শোভাযাত্রা নিয়ে নিয়ম না মানার এই অভিযোগের সত্যতা আংশিক স্বীকার করেছেন কেন্দ্রীয় রাস উসব কমিটির কার্যকরী সভাপতি দিলীপ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘ অধিকাংশ বারোয়ারি নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরেই চক্রপথে ঢুকেছেন। সন্ধ্যার পর চক্রপথে ঢোকার এই প্রবণতা প্রতিটি লিঙ্ক রোডের মুখে জটের সৃষ্টি হয় প্রতিমা, বাজনা, সংশ্লিষ্ট বারোয়ারির ছেলেরা এবং দর্শনার্থী সব মিলিয়ে এই প্রবল জট ছাড়াতে ছাড়াতে রাত এগারোটা বেজে যায় যার ফলে শোভাযাত্রাও এগোতে পারেনি।’’
বিদ্যু প্রসঙ্গে দিলীপবাবু বলেন,‘‘ প্রতিমার উচ্চতা বা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিমা নিয়ে চক্রপথের মধ্যে প্রবেশ করা এই বিষয়গুলোতে প্রশাসন নিষ্ক্রিয় থেকেছে যে কারণে অবস্থার কোন পররিবর্তন এবারেও ঘটল ন।’’
নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন,‘‘রাসকে কেন্দ্র করে নবদ্বীপ শহরের সামগ্রিক বিদ্যু ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় বিধায়ক এই কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছেন।’’ |