ছুটকো-ছাটকা নয়। এ একেবারে জোড়া ধাক্কা। আর ক্যারিবিয়ান শিবিরে তা লাগল কখন? না, ইডেন টেস্টের ঠিক চব্বিশ ঘণ্টা আগে।
একটা ক্রিকেটীয় দিক। যেখানে ক্যারিবিয়ান পেস ব্যাটারির অন্যতম ভরসা রবি রামপল পেটের সমস্যায় কাবু হয়ে ইডেন টেস্টের বাইরে চলে গেলেন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এবং ডাক্তারদের বয়ান অনুযায়ী, রামপলের সুস্থ হতে হতে সোমবার। অর্থাৎ, দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর নামার সম্ভাবনা শূন্য।
অন্যটা অক্রিকেটীয় দিক। সেন্ট লুসিয়ার ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় মৃত সতেরো জনের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ডারেন স্যামির এক জন পরিচিত আছেন। যা নিয়ে কলকাতায় ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক বিপর্যস্ত।
শোনা যাচ্ছে, দিল্লি থেকে পেটের সমস্যা তাড়া করছিল রামপলকে। শনিবার রাত থেকে ফের ভোগান্তি শুরু হয়। এ দিন দুপুরে ইডেনে টিমের সঙ্গে প্র্যাক্টিসে এসেছিলেন ক্যারিবিয়ান পেসার। কিন্তু যন্ত্রণা এমনই বাড়ে, ড্রেসিংরুম থেকেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। ড্রেসিংরুমের সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মিডিয়া ম্যানেজার ফিলিপ স্পুনার শুকনো মুখে বলছিলেন, “ঠিক কী যে হয়েছে বোঝা যাচ্ছে না। তবে প্রচণ্ড অসুস্থ। খেলার সম্ভাবনা কম।” রামপল নেই, এই অবস্থায় প্ল্যান ‘বি’ হিসাবে স্যামিরা ভাবছেন অফস্পিনার শেন শিলিংফোর্ডকে। গত নভেম্বরে অবৈধ অ্যাকশনের জন্য যাঁকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল আইসিসি। মাস কয়েক হল ছাড় পেয়েছেন। তবু কেমার রোচের গতির বদলে শিলিংফোর্ডের স্পিনে ইডেনে ভরসা খুঁজছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্র্যাক্টিস শেষে অধিনায়ক স্যামি বলে গেলেন, “পিচে যদি শেষ পর্যন্ত ঘাস না থাকে, তা হলে ভারতের আর পাঁচটা উইকেটের মতোই হবে ইডেন পিচ। শিলিংফোর্ডের এই টেস্টে খেলার সম্ভাবনা আছে।” সেক্ষেত্রে ফিডেল এডওয়ার্ডসের সঙ্গে বোলিং শুরু করবেন স্যামি নিজে। আর দুই স্পিনার দেবেন্দ্র বিশু এবং শিলিংফোর্ড।
শুধু বোলিং বা বাস-দুর্ঘটনা নিয়ে মনখারাপ নয়, টিমের ব্যাটিংও স্বস্তিতে কোথায় রাখছে স্যামিকে? এ দিনই পোর্ট অব স্পেনে দাঁড়িয়ে ব্রায়ান লারা শুনিয়ে রেখেছেন, শুধু প্রতিভায় হবে না। ধ্বংসস্তুপ থেকে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটকে উঠে দাঁড়াতে গেলে চাই দক্ষ প্রশাসকও। বোর্ডের প্রশাসনিক কচকচিতে স্যামি ঢুকতে চান না। শুধু চান, কোটলা-কাণ্ড যেন না ফিরে আসে ইডেনে। বলছিলেন, “কোটলা টেস্টের প্রথম দু’দিন ম্যাচ আমাদেরই হাতে ছিল। কিন্তু তার পরের দু’শো কুড়ি তুলতে গিয়ে দু’ইনিংস মিলিয়ে পনেরোটা উইকেট হারালাম!” একটু থেমে আরও বিশদে গেলেন, “প্রত্যেক ম্যাচে একটা বিশেষ সময় থাকে, যখন থেকে ম্যাচের ভাগ্যটা ঠিক হয়। আমাদের ওই সময়টাকে কব্জা করতে হবে। ইডেনে আরও ভাল ব্যাটিং করতে হবে।”
করতে তো হবে, কিন্তু করবেন কে?
স্যামি উত্তরে দেখিয়ে দিচ্ছেন সাঁইত্রিশ বছরের এক ‘বুড়ো হাড়’-কে। যাঁর দু’চোখের তলায় আঁকা থাকে দেশের পতাকা। অদ্ভুত স্টান্স নিয়ে যিনি রুখে দাঁড়ান যে কোনও বিপদ-আপদে। আজ নয়, সেই ’৯৪ সাল থেকে।
নামটা সবার জানা। শিবনারায়ণ চন্দ্রপল। |