এক সপ্তাহে অনেক কিছু ঘটতে পারে বলে জীবনের শেষ লেখায় লিখেছিলেন তিনি। আর সেই লেখা অস্ট্রেলিয়ায় নিজের কাগজে পাঠানোর রাতেই হোটেলের জানলা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করলেন পিটার রোবাক। সমস্ত ক্রিকেট দুনিয়াকে স্তম্ভিত করে। এবং তীব্র অস্বস্তিকর এক প্রশ্নের মুখে ফেলে।
কেন আত্মহত্যা করলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এক ক্রিকেট-লিখিয়ে? কেন এ ভাবে মৃত্যুকে বেছে নিলেন সমারসেটে বোথাম-ভিভ-গার্নারদের প্রাক্তন অধিনায়ক?
কেপ টাউন, শনিবার রাত ৯-১৫। দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশের বয়ান অনুযায়ী, মোটামুটি ওই সময় হোটেলের সাত তলার ঘর থেকে নীচে লাফিয়ে পড়ে নিজের জীবন শেষ করে দেন ৫৫ বছরের রোবাক। অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ নিয়ে লিখতে দক্ষিণ আফ্রিকাতেই ছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় সেখানকার পুলিশ গিয়ে জেরা করছিল রোবাককে। মৃত্যুর দু’দিন আগেও অ্যালান বর্ডারের সঙ্গে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট নিয়ে আলোচনায় ডুবে থাকতে
|
পিটার রোবাক |
দেখা গিয়েছে তাঁকে। সামনে পড়ে থাকা কফি যত ঠান্ডা হয়েছে, তত উত্তপ্ত হয়েছে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা। গত দু’দিন ধরে যাঁরা রোবাককে দেখেছেন, তাঁরা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, কী ভবিতব্য অপেক্ষা করে আছে।
কেপ টাউন থেকে কলকাতা। শোকার্ত সবাই। ইডেনে প্র্যাক্টিসে নামার আগেই সচিন, রাহুল, লক্ষ্মণদের কাছে পৌঁছে যায় রোবাকের মৃত্যুসংবাদ। বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কেউ। প্রশ্নটা ঘুরছিল সবার মুখেই। কেন আত্মহত্যা করলেন রোবাক? রোবাকের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা নামটা আরও এক বিতর্কে জড়িয়ে গেল। হ্যান্সি ক্রোনিয়ে কেলেঙ্কারি, বব উলমারের মৃত্যু এবং এ বার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এক ক্রিকেট লিখিয়ের আত্মহত্যা। এ ক’দিন ধরে মাইকেল ক্লার্কদের ৪৭ রানে অল আউট নিয়ে তোলপাড় ছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই টেস্টের ৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই স্তব্ধ হয়ে গেল অজি ক্রিকেট মহল। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা আর একটা খবরে।
সরকারি ভাবে রবিবার রাত পর্যন্ত পুলিশ এ ব্যাপারে তেমন মুখ খোলেনি। এমনকী কে আত্মহত্যা করেছেন, সেটাও বলা হয়নি। ওয়েস্টার্ন কেপ প্রভিন্সিয়াল পুলিশের এক মুখপাত্র বলেছেন, “শনিবার রাত ন’টা নাগাদ এক ব্রিটিশ নাগরিক, যিনি ক্রিকেট ধারাভাষ্যকারও, হোটেলে নিজের সাততলার ঘর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।” পুলিশের এই বিবৃতির পর প্রচারমাধ্যমে উঠে এসেছে অন্য খবর। শোনা যাচ্ছে, শনিবার রাত ন’টা নাগাদ পুলিশ গিয়েছিল রোবাকের ঘরে। এবং সেখানে রোবাককে ‘যৌন নিগ্রহ’ সংক্রান্ত অভিযোগে জেরা করা হয়। ওই সময় নাকি রোবাক এক সতীর্থ ক্রিকেট সংবাদিককে ফোন করে বলেন, “আমার ঘরে তাড়াতাড়ি আসতে পারবে? একটা সমস্যায় পড়ে গিয়েছি।” কিন্তু সেই সাংবাদিকের আর ঘরে আসার সুযোগ হয়নি। তার আগেই জানলা দিয়ে লাফিয়ে পড়েন রোবাক। এ-ও শোনা যাচ্ছে, রোবাক যখন জানলা দিয়ে লাফ দিচ্ছেন, তখন তাঁর ঘরে ছিলেন এক পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসে প্যারামেডিক-টিম। কিন্তু ততক্ষণে আর কিছু করার নেই।
যৌন নিগ্রহের অভিযোগে কি রোবাককে জেরা করা হচ্ছিল? সাংবাদিকদের প্রশ্নে পুলিশের মুখপাত্র বলেছেন, “আমি এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না। আমরা মৃত্যুর তদন্ত করছি। এর বাইরে আর কিছু বলব না।” পুলিশ ইতিমধ্যেই ল্যাপটপ-সহ রোবাকের যাবতীয় জিনিস বাজেয়াপ্ত করেছে।
কী রকম মানুষ ছিলেন রোবাক? তাঁর এক সাংবাদিক বন্ধু, এবিসি-র জিম ম্যাক্সওয়েল বলেছেন, “আমি ওকে সম্মান করতাম ওর মানবিকতা, ন্যায়ের জন্য লড়াই করার মানসিকতা আর দরদী মনোভাব দেখে।” কিন্তু বিতর্কও মাঝে মাঝে তাড়া করেছে রোবাককে। বছরের কিছুটা সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় কাটাতেন রোবাক। ২০০১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাতেই ক্রিকেট শিক্ষার্থী তিন কিশোরকে বেত মারার অভিযোগে শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। তাঁর বিরুদ্ধে আদালত ‘সাসপেন্ডেড জেল সেনটেন্স’-এর রায় দিয়েছিল।
কয়েক সপ্তাহ ধরে টালমাটাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলেছে ক্রিকেট দুনিয়া। নজিরবিহীন ভাবে জেল হয়েছে তিন পাক ক্রিকেটারের। সেই ধাক্কার রেশ কাটতে না কাটতেই রোবাকের ঘটনা আবার টলিয়ে দিয়ে গেল ক্রিকেট দুনিয়াকে। |