শকুন নিয়ে সমীক্ষার জন্য জুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার দ্বারস্থ হতে চলেছে রাজ্য বন দফতর। গোটা রাজ্য জুড়েই শকুনের এখন অস্তিত্বের সঙ্কট চলছে। প্রকৃতির উপরে তার প্রভাবও পড়ছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে হিমালয়ান গ্রিফন প্রজাতির শকুনের সঙ্কট নিয়ে উদ্বিগ্ন বন দফতর। সেই জন্যই সমীক্ষার পরে শকুন সংরক্ষণ নিয়ে আরও কাজে নামার পরিকল্পনা হয়েছে। গত শুক্রবার বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের রাজাবাতখাওয়া প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্রে শকুন সংরক্ষণ ও প্রজনন নিয়ে সভা হয়। সভায় বন দফতরের মুখ্যসচিব তথা শকুন সংরক্ষন ও প্রজনন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান সুবেশ দাস, বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটির বিধুপ্রকাশ, রয়্যাল সোসাইটি ফর প্রোটেকশন অফ বার্ডসের চির্স বাউডেন, উত্তরবঙ্গের বন্য প্রাণ বিভাগের মুখ্য বনপাল রবীন্দ্র কৃষ্ণমূর্তি-সহ উচ্চপদস্থ বন কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে শকুন সংরক্ষণে সমীক্ষার জন্য জুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা তথা শকুন প্রজনন কেন্দ্রের সদস্য সচিব রবীন্দ্রপাল সাইনি বলেন, “প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য শকুন সংরক্ষণ ভীষণ জরুরি। এই কাজে সমীক্ষার প্রয়োজনেই জুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার দ্বারস্থ হওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” ২০০৫ সালে বন দফতরের উদ্যোগে রাজাভাতখাওয়ায় শকুন সংরক্ষন ও প্রজনন কেন্দ্র চালু হয়েছে। খাঁচা বসিয়ে সেখানে হোয়াইট ব্যাকড, লং বিলড ও স্লেন্ডার বিলড প্রজাতির ৮০ টি শকুন রাখা হয়েছে। এগুলি বক্সার জঙ্গল ছাড়াও অসম ও মধ্যপ্রদেশ থেকে সংগ্রহ করে আনা হয়। খাঁচায় বন্দি অবস্থায় সাতটি শকুনের জন্ম হয়েছে। ২০১৯ সালে এখান থেকে শকুন ছাড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা জানান, আরও কয়েকটি খাঁচা বসানোর জন্য কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ দফতরের কাছে অনুমতি চাওয়া হবে। দেশ জুড়ে শকুন উধাও হয়ে যাওয়ার কারণ হিসাবে পরিবেশবিদেরা অনেকেই ‘ডাইক্লোফেনাক’ নামের একটি ওষুধকে দায়ী করেন। গবাদি পশুর চিকিৎসার জন্য ওই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়। ওই ওষুধ খাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনও গবাদি পশু মারা গেলে এবং সেই পশুর মাংস শকুন খেলে প্রজনন ব্যাহত হয় বলে অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু মানুষের ব্যাথা উপসমের জন্যই ‘ডাইক্লোফেনাক’ গোত্রের একটি ওষুধ রয়েছে। সেটিও গবাদি পশুর চিকিৎসায় অনেকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ। এই সমস্যা দূর করতে বন দফতর প্রাণি বন্ধুদের নিয়ে সচেতনতা শিবিরের পরিকল্পনা করেছে। পাশাপাশি জঙ্গলে মৃত পশুর মাংস রাজাভাতখাওয়ায় প্রজনন কেন্দ্রের শকুনদের খাওয়ানো বিষয়েও বন দফতর চিন্তা ভাবনা করছে। তার আগে মৃত পশুটিকে পশু চিকিৎসককে দিয়ে পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্ষেত্র অধিকর্তা বলেন, “প্রজনন কেন্দ্রের শকুনদের খাবারের জন্য প্রতি বছর ২৪-২৫ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। সেই জন্যই এমন ভাবনা।” |