|
|
|
|
তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল বৈদ্যবাটিতে |
স্কুলভোট নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল কাজিয়া গোঘাটে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গোঘাট ও বৈদ্যবাটি |
মারধর করে, হুমকি দিয়ে কংগ্রেসের ৫ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র তৃণমূলের লোকজন তুলে নিতে বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হুগলির গোঘাট হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল বেধেছে। গোটা বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। ভোট বাতিলেরও দাবি তুলেছে তারা।
আগামী ২০ নভেম্বর ওই স্কুলে নির্বাচন হওয়ার কথা। তৃণমূল ও কংগ্রেস সূত্রের খবর, প্রার্থী দেওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার দু’দলের বৈঠক হয়। তৃণমূল দাবি করে, ৬টি আসনের মধ্যে ৫টিতে তারা প্রার্থী দেবে। এতে আপত্তি জানিয়ে কংগ্রেস প্রথমে সমান সংখ্যক আসন দাবি করে। পরে, ২টি আসনে প্রার্থী দিতে সম্মত হয়। তৃণমূল অবশ্য তাদের দাবিতে অনড় থাকে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস একা লড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। শুক্রবার কংগ্রেসের ৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন।
গোঘাট যুব কংগ্রেসের সভাপতি শ্রীমন্ত রানার অভিযোগ, “মনোনয়ন জমা দিয়ে ফেরার পথে তৃণমূলের কর্মী নারায়ণ পাঁজার নেতৃত্বে জনা কুড়ি যুবক আমাদের মারধর করে। পরে, চার প্রার্থীকে দিয়ে জোর করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করিয়ে নেয় ওরা।” প্রহৃত শ্রীমন্তবাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রবিবার গোঘাটের দুষ্টু কুণ্ডু নামে অন্য এক কংগ্রেস প্রার্থীর বাড়িতে চড়াও হয়ে তৃণমূলের ছেলেরা তাঁকেও হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। দুষ্টুবাবুও মনোনয়নপত্র তুলে নেন।
অন্য দিকে, তৃণমূল ৬টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পরে একটি আসনে প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করে নেয়। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দিলীপ নাথের অভিযোগ, “সিপিএমের কায়দায় তৃণমূল সন্ত্রাস করছে। সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার তো চলছেই, জোটসঙ্গীকেও ওরা রেয়াত করছে না।” গোঘাটের তৃণমূল নেতা মনোরঞ্জন পালের অবশ্য দাবি, “কোনও অশান্তি হয়নি। বৈঠকে যা সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেই অনুযায়ী প্রার্থী দেওয়া হয়েছে।”
এই ঘটনায় তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’ নিয়ে মহকুমাশাসকের দফতরে অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। যদিও মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “লিখিত অভিযোগ এখনও পাইনি। পেলে আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি দেখা হবে। নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় শিক্ষা দফতরে জানাতে হবে অভিযোগকারীদের।”
অন্য দিকে, স্কুল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৈদ্যবাটিতে সামনে চলে এল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। বৈদ্যবাটি বিদ্যানিকেতনের পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন ছিল রবিবার। বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয় কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। পরে তৃণমূলের আরও একটি গোষ্ঠী ময়দানে নামে। তারাও সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচনে। কংগ্রেস শিবিরের দাবি তৃণমূলের যে নেতাদের সঙ্গে জোট হয়েছিল, তাঁদের কয়েক জন দলের দু’টি গোষ্ঠীর হয়েই প্রচার করছেন।
গোটা বিষয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব বিড়ম্বনায় পড়েছে। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি বৈদ্যবাটির পুরপ্রধান, তৃণমূল নেতা অজয়প্রতাপ সিংহ। তিনি শুধু বলেন, “দল আমাকে ওই নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়নি। যাঁরা দলীয় সংগঠনের দায়িত্বে আছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন।” বৈদ্যবাটি শহর তৃণমূলের সভাপতি শ্যামলেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও ব্যাপার নেই। তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা না করেই একটা জোট ঘোষণা করা হল। আমাদের দলীয় নেতৃত্ব তো বটেই, কংগ্রেসের কাউন্সিলরেরাও এটা জানতেন না।”
কংগ্রেসের একাংশকেও এ জন্য দায়ী করেছেন শ্যামলেন্দুবাবু। পাশাপাশি তৃণমূলেরও কিছু লোক এই ঘটনায় সামিল হয়েছে বলে মেনে নিয়েছেন তিনি।” তৃণমূলের অন্দরের খবর, কংগ্রেস ছেড়ে দলে যোগ দেওয়া এক নেতাকে নিয়েই সমস্যা তৈরি হয়। এ ছাড়াও, আরও কয়েকটি বিষয়ে দলের ভিতরে সমস্যা হয়। এরই জেরে দু’টি গোষ্ঠী পৃথক ভাবে প্রার্থী দেয়।
কংগ্রেসের তরফে জোটধর্ম লঙ্ঘন করা হয়নি বলে দাবি করেছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি দিলীপ নাথ। তাঁর কথায়, “ওখানে যা ঘটেছে, তাতে আমরাও কিছুটা বিব্রত হয়েছি। এমন করলে সিপিএমের সুবিধা করে দেওয়া ছাড়া কোনও লাভ হবে না।”
তাঁর আশঙ্কা যে অমূলকও নয়, তার প্রমাণ মিলেছে ভোটের ফলে। জোট প্রার্থীরা পেয়েছেন ৩টি আসন। বিরুদ্ধ গোষ্ঠী একটি আসন দখল করেছে। বাকি ২টি আসন গিয়েছে সিপিএমের পকেটে। |
|
|
|
|
|