হাওড়ায় নতুন করে মাছের বাজার তৈরির জন্য কেন্দ্রের বরাদ্দ ২৫ কোটি টাকা পড়েই রয়েছে। বাজারের নকশা এবং পরিকল্পনাও প্রস্তুত। কিন্তু মাছ ব্যবসায়ী এবং প্রশাসনের বিরোধে সে কাজ আপাতত বিশ বাঁও জলে।
পুরসভা, জেলা প্রশাসন বা রাজ্য সরকার চায় না শহরের প্রাণকেন্দ্রে মাছ বাজার থাকুক। পুরনো জায়গাতেও মাছ বাজার নতুন করে তৈরি করতে রাজি নয় তারা। কিন্তু মাছ ব্যবসায়ীরা অনড়। ‘হাওড়া হোলসেল ফিশ মার্কেট স্টল ওনার্স কো-অপারেটিভ সোসাইটি’-র সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাসুদ বলেন, “এখন যেখানে সব্জি বাজার বসে, আগে সেখানেই মাছ বাজার ছিল। সেখান থেকে উচ্ছেদ করে আমাদের বর্তমান জায়গা দেওয়া হয়। তাই আমরা এখান থেকে উঠতে রাজি নই।”
মাছ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পুরসভাকে মোটা টাকা আবর্জনা-কর দেওয়া সত্ত্বেও তারা বাজারের ভিতরে নর্দমা ও আর্বজনা পরিষ্কার করে না। রাস্তার পাশেই ভ্যাট রেখে দেয়। ফলে দুর্গন্ধ ছড়ায়। তাঁদের বক্তব্য, মাছ বাজারের পরিবেশগত সমস্যার জন্য তাঁরা দায়ী নন, দায় পুরসভা ও প্রশাসনের।
হাওড়া স্টেশনের কাছেই বঙ্কিম সেতুর পাশে আই সি বসু রোডের ধারে অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম পাইকারি মাছ বাজার। বর্তমানে সেটির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। কাদা আর পাঁকজলে ভরে থাকে গোটা এলাকা। পাশ দিয়ে গেলে দুর্গন্ধে নাকে চাপা দিতে হয়। বাজারে যে ২৫০টি স্টল রয়েছে, সেগুলির ছাদ ফেটে বৃষ্টির জল চুঁইয়ে পড়ে। ভবনটিরও এমন দুরবস্থা, যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বস্তুত, হাওড়া শহরের হাল ফেরানোর যে কোনও পরিকল্পনার সাফল্য ঝুলে আছে একটিই প্রশ্নে: মাছ বাজার সংস্কার হবে কি না? |
বামফ্রন্ট সরকারের আমলে, ২০০৯ সালে ওই বাজারটি সংস্কার করে ছ’তলা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাছ বাজার তৈরির পরিকল্পনা হয়। এ জন্য কেএমডিএ রাজ্য মৎস্য দফতরকে জমি হস্তান্তর করে। তৈরি হয় মাছ বাজারের নকশাও। এমনকী, বছরখানেক আগে বাজার সংস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় মৎস্য উন্নয়ন নিগম ২৫ কোটি টাকা অনুমোদনও করে। কয়েক মাস আগে মৎস্য সচিব, জেলাশাসক, মাছ ব্যবসায়ী ও এলাকার জন-প্রতিনিধিদের সঙ্গে হায়দরাবাদ থেকে এসে বৈঠক করে যান জাতীয় মৎস্য উন্নয়ন নিগমের এগ্জিকউটিভ ডিরেক্টর (টেকনিক্যাল) মধুমিতা মুখোপাধ্যায়ও।
কিন্তু তার পরেও আটকে গিয়েছে মাছ বাজার সংস্কারের যাবতীয় প্রক্রিয়া। জট ওই স্থানান্তর নিয়ে। রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী আবু হেনার বক্তব্য, ওই বাজার সংস্কারের অনেক সমস্যা রয়েছে। যেমন, বাজারের বহু বেদখলকারী রয়েছেন। তা ছাড়া, ওই বাজার থেকে মারাত্মক দূষণ ছড়ায়। মন্ত্রী বলেন, “ওই রকম ঘিঞ্জি জায়গায় মাছ বাজার করা ঠিক নয়। বিকল্প জায়গার ব্যবস্থা করার জন্য আলোচনা চলছে।” শহরের প্রাণকেন্দ্রে এই ধরনের একটি মাছ বাজার থাক, তা চান না হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়ালও। তিনি বলেন, “মাছ বাজারের সংস্কার অবশ্য প্রয়োজন। তবে পরিবেশের উন্নতি করতে এটিকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া উচিত।”
জেলাশাসক সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ বলেন, “ওই জায়গায় মাছ বাজার করা নিয়ে কিছু পরিবেশগত সমস্যা রয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অন্যত্র বাজার তৈরি করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।” পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তও চান না মাছ বাজার পুরনো জায়গায় থাক। তাঁর কথায়, “হাওড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের পাশে এ রকম বাজার থাকা সঙ্গত নয়।” মধুমিতাদেবী অবশ্য মনে করেন, মাছ বাজার তৈরি নিয়ে তেমন কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার, পুরসভা, জেলা প্রশাসন এবং ব্যবসায়ীরা সংস্কারের ব্যাপারে একমত হলে এই কাজ করতে বেশি সময় লাগবে না। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, তাঁরা সংস্কারের কাজে সব সহযোগিতা করতে তৈরি।” |