বিহারে বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরানোর কাজ অব্যাহত রাখলেন নীতীশ কুমার। প্রত্যাশিত ভাবেই লোকজনশক্তি পার্টি ছাড়ার পরে জেডিইউয়ে যোগ দিলেন সংখ্যালঘু নেতা সাবির আলি। এবং যোগ দিলেন জেডিইউয়ের রাজ্য অফিসে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে। একই ভাবে নীতীশের সামনে আরজেডি ছেড়ে জেডিইউয়ে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ যমুনা প্রসাদের ছেলে চিত্তরঞ্জন যাদবও।
তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে বিরোধী শিবিরের অধিকাংশের বেশি সংখ্যালঘু নেতাকেই নিজের দলে নিয়ে এলেন নীতীশ। এই মুহূর্তে রাজ্যের বিরোধী দলের নেতা আব্দুল বারি সিদ্দিকি, আরজেডি-র প্রাক্তন সাংসদ এম এ ফাতমি এবং কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি মহবুব আলি কৌসর বাদে প্রথম সারির সব সংখ্যালঘু নেতাই জেডিইউয়ে যোগ দিয়েছেন। ২০০৫ সালে প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই সংখ্যালঘুদের মধ্যে নিজের ভোটব্যাঙ্ক বাড়ানোর কাজে নেমেছিলেন নীতীশ কুমার। বিরোধী শিবিরে সংখ্যালঘু নেতাদের বর্তমান উপস্থিতি দেখেই বোঝা যায়, এই কাজে ছ’বছরে অনেকটাই সফল হয়েছেন তিনি।
তবে জেডিইউ শিবিরের ব্যাখ্যা, সংখ্যালঘু নেতাদের ঝুলিতে পোরাই শুধু নয়, রাজ্যকে কার্যত বিরোধীশূন্য করে দেওয়ার কাজে নেমে পড়েছেন নীতীশ। আর এই ধাক্কায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রামবিলাস পাসোয়ান। সাবির আলি দল ছাড়ার পরে লোকসভা এবং রাজ্যসভা মিলিয়ে এখন দলের একমাত্র সাংসদ রামবিলাসই। বিধানসভাতেও লোকজনশক্তি পার্টির তিন বিধায়কের মধ্যে দু’জনই দল ছেড়েছেন। টিকে রয়েছেন শুধুমাত্র আরারিয়ার বিধায়ক, জাকির হুসেন খান।
দিন কয়েক আগে সাবির আলি রামবিলাসের দল লোকজনশক্তি পার্টি থেকে পদত্যাগ করেন। দল ছাড়ার পরেই তিনি রাজ্যসভার সদস্য পদও ছেড়ে দেন। জেডিইউ শিবিরের খবর, সাবির ইস্তফা দেওয়ায় ফাঁকা হওয়া আসনটিতে তাঁকেই আবার পুননির্বাচিত করে রাজ্যসভায় পাঠাতে চান মুখ্যমন্ত্রী। নীতীশের দাবি, সরকার বা জেডিইউ দল যে বিহারের মানুষের জন্য কাজ করছে এর মধ্যে দিয়েই তা প্রমাণিত হচ্ছে। একই সঙ্গে লালু প্রসাদকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি নীতীশ কুমার। লালুর অধিকাংশ সময়ে দিল্লিতে থাকার বিষয়টিকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাজ্য ছেড়ে না চলে গিয়ে বিরোধীদের উচিত এ রাজ্যের প্রতি মনযোগ দেওয়া। সরকারের ভুলভ্রান্তি ধরিয়ে দেওয়ার অধিকার তাদের আছে।”
সাবির আলি জেডিইউয়ে যোগ দিয়ে বলেন, “কোনও দল ব্যক্তির উপর নির্ভর করে চলতে পারে না। যে দলে নীতি, আদর্শ বলে কিছু নেই সেখানে থাকা যায় না। তাই আমি দল ছাড়ার পরেই রাজ্যসভা থেকেও পদত্যাগ করেছি।” মোতিহারির এই নেতা ২০০৮ সালে লালুপ্রসাদের সমর্থন নিয়ে রাজ্যসভার সদস্য হন। এ দিন নীতীশের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সাবির আলি বলেন, “নীতীশ কুমারের দলে যে নীতি ও আদর্শ আছে তা দেখে আমার ভাল লেগেছে। নীতীশ সরকার যে ভাবে কাজ করছে তাতে আমি আরও বেশি উৎসাহিত হয়েছি।”
সাবির যোগ দেওয়ার পরে যে নীতীশের বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরানোর চেষ্টায় যে ভাটা পড়বে, এমন কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উল্টে আজ নীতীশ বলেন, “সাবির আলি দলে আসার মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হচ্ছে সরকার বিহারের মানুষের জন্য কাজ করছে। বিহার এগিয়ে চলেছে। আগামী দিনে আরও কেউ যদি দলে আসতে চান, তাঁদের গ্রহণ করার জন্য দল তৈরি। আমরা তাঁকে শুধু গ্রহণই করব না, সম্মান ও দায়িত্ব দেব।”
|