ব্রাহ্মণ তাস মায়াবতীর
নেহরুর ফুলপুর থেকে আজ প্রচার শুরু রাহুলের
কদা জওহরলাল নেহরুর নির্বাচন কেন্দ্র ফুলপুর থেকে কাল উত্তরপ্রদেশে ভোটের হাওয়া তুলতে চলেছেন রাহুল গাঁধী। আর তার ঠিক আগেই আজ দলিত ভোটব্যাঙ্ক অটুট রেখে ব্রাহ্মণদের মন জয়ে সচেষ্ট হলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। দিলেন ব্রাহ্মণদের অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও ।
নেহরু ছিলেন বহুত্ববাদের প্রতীক। তাঁর উত্তরসূরী রাহুল গাঁধী এখন নেহরুর পথে হেঁটে নিজেকে সর্ব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে উঠতে চাইছেন। ইলাহাবাদের কাছে নেহরুর এক সময়ের নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করার স্থান হিসাবে বেছে নেওয়া সেই কৌশলেরই অঙ্গ। কিন্তু রাহুলের এই উদ্যোগ দেখে মায়াবতীও চুপ করে বসে থাকতে চাইছেন না। গত কাল রাহুলকে সরাসরি আক্রমণ করে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছিলেন, সামনের নির্বাচনে লড়াইটা আসলে তাঁর সঙ্গেই। আর আজ রাজ্যে ব্রাহ্মণ সম্মেলন করে মায়াবতী তাঁর দলে ব্রাহ্মণ মুখ সতীশ মিশ্রকে ফের সামনে নিয়ে এলেন। এ থেকে স্পষ্ট, ফের দলিত-ব্রাহ্মণ জুটিকে পুঁজি করেই ফের নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাইছেন মায়াবতী।
মায়াবতী আজ বলেন, “আমার রাজনৈতিক শত্রুরা বলেন, আমি না কি ব্রাহ্মণদের থেকে দলিতদের বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আসলে তাঁরা বহুজন সমাজ পার্টি থেকে ব্রাহ্মণদের দূরে রাখতে চান। কিন্তু এই প্রচার সর্বৈব মিথ্যা। পরিবারের দায়িত্বশীল সদস্য হিসাবে আমি দুর্বলতম শিশুকে (দলিত) একটু বাড়তি মনোযোগ দিয়েছি। কিন্তু একই সঙ্গে অন্য সন্তানদেরও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্য দলের তুলনায় আমাদের দলে ব্রাহ্মণদের অনেক বেশি প্রার্থীও করা হয়েছে।” কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “মায়াবতী আসলে রাহুলকে ভয় পাচ্ছেন। সে কারণে রাহুলের সফরের আগেই নিজের ভোটব্যাঙ্ক বাড়াতে ময়দানে নেমে পড়েছেন। কিন্তু রাহুল কখনওই জাত-পাতের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চান না। বরাবরই তিনি সর্বজনগ্রাহ্য হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন। রাহুল দলিতের ঘরে রাত কাটালেও সেটি কখনওই উচ্চগ্রামে নিয়ে যেতে চান না। কেন্দ্রে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী থাকার সময় অর্জুন সিংহ যে সংরক্ষণের কথা বলেছিলেন, সেই সময়ও তাতে অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন রাহুল।”
রাহুলের সফরের আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা প্রদীপকুমার জৈন আজ মায়াবতীকে একহাত নিয়ে বলেন, “উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী রাহুল গাঁধীকে আক্রমণ করার আগে নিজের ঘর সামলান। রাহুলকে আক্রমণ না করে বরং মায়াবতীর উচিত তাঁকে ধন্যবাদ জানানো। রাহুল যদি সক্রিয় না থাকতেন, উত্তরপ্রদেশে মায়াবতীর উপরে মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়ত। রাহুল মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ক্ষতে প্রলেপ দিয়েছে বলেই মায়াবতী সেই আঁচ অত বেশি মাত্রায় পাচ্ছেন না।” কংগ্রেসের এক নেতার মতে, রাহুল জাতপাতে ঊর্ধ্বে উঠে যে ভাবে নিজেকে গোটা দেশে সর্বজনগ্রাহ্য হিসাবে নিজেকে তুলে ধরছেন, গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে তার ফলও মিলেছে। বিজেপিতে বরুণ গাঁধী যে ভাবে সাম্প্রদায়িক বক্তৃতা দিয়ে মেরুকরণের রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন, তাতে খেসারতই দিতে হয়েছে বিজেপিকে। তার প্রেক্ষাপটে রাহুলের প্রচার বিজেপির সেই মেরুকরণের রাজনীতিকে আটকে দিতে সমর্থ হয়েছে।
কিন্তু রাহুল-মায়াবতীর এই ‘লড়াই’কে চোখে ধুলো দেওয়া বলে প্রচার করছে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে থাকা বিজেপি নেতা মুক্তার আব্বাস নকভি বলেন, “ভোটের আগে বহুজন সমাজ পার্টি ও কংগ্রেস আসলে একটি চিত্রনাট্য রূপায়ণ করছে। সনিয়া গাঁধী ও মায়াবাতী মিলে এই চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন। উত্তরপ্রদেশে অপরাধ ও দুর্নীতি থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে মায়াবতী ও রাহুল গাঁধী সেই চিত্রনাট্য অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁরা উভয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়ছেন বটে, কিন্তু আসলে সেটি বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই।” বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, সমাজবাদী পার্টি যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, তার জন্যই মায়াবতী রাহুলকে বার বার আক্রমণ করে তাঁর গুরুত্ব বাড়াচ্ছেন। রাহুল যতই চেষ্টা করুন, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ আশাজনক নয়। ফলে নির্বাচনের পরে সরকার গড়তে যদি মায়াবতীর প্রয়োজনীয় আসন না থাকে, কংগ্রেস অনায়াসেই তাঁকে সমর্থন জোগাতে পারে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.