দেশের কোষাগারের যা হাল, তাতে আয় বাড়ানো ও খরচ কমানোর জন্য কিছু কড়া সিদ্ধান্ত না নিলে ভারতের অবস্থাও গ্রিসের মতো হবে বলে জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। তবে একই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, এই অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। রবিবার কলকাতায় অ্যাসোচ্যামের এক সভায় যোগ দিতে এসে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বুঝিয়ে দেন, কোষাগারের চাপ সামলাতে কেন্দ্র শুধু যে ব্যয়ে রাশ টানতে চলেছে তা-ই নয়, আয় বাড়াতে ভর্তুকি কমানোর মতো কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথেও হাটতে পারে।
গ্রিস, ইতালির মতো ইউরোপের কয়েকটি দেশের আর্থিক পরিস্থিতি এই মুহূর্তে যথেষ্টই উদ্বেগজনক। তা ছাড়া, ২০০৮-এর বিশ্বজোড়া আর্থিক মন্দার প্রভাব এখনও কাটেনি। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে এ দিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমি চাই না আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ইউরোপের কিছু দেশের মতো ভারতেও সমস্যা সৃষ্টি হোক। অথবা বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যর্থ হোক। তাই সমস্যা মোকাবিলায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিছু আর্থিক সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতেই হবে।”
|
অ্যাসোচ্যামের আলোচনা সভায় প্রণব মুখোপাধ্যায়। রবিবার কলকাতায়। ছবি: সুমন বল্লভ |
প্রণববাবু জানান, ২০০৮-এর মন্দার সময় ভারতীয় শিল্প ক্ষেত্রকে কেন্দ্র ১ লক্ষ ৮৬ হাজার কোটি টাকার ত্রান প্যাকেজ দিয়েছিল। এর ফলে বাজেট ঘাটতি বাড়লেও ওই প্যাকেজ দেওয়া জরুরি ছিল বলে মনে করেন তিনি। প্রণববাবুর কথায়, “এ সবের ফলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তার মোকাবিলায় এখন কিছু আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। আপাত দৃষ্টিতে তা কঠিন মনে হলেও দেশের আর্থিক হাল ফেরাতে তা বিশেষ সহায়ক হবে, এতে সন্দেহ নেই।”
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে এই মুহূর্তে তুমুল চাপের মুখে কেন্দ্র। প্রণববাবু অবশ্য আজ আশ্বাস দেন, এই পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আশির দশকের গোড়ায় মূল্যবৃদ্ধির হার ১৮ শতাংশে পৌঁছেছিল বলেও এ দিন মনে করিয়ে দেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি জানান, ব্যাঙ্ক, বিমা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দেশে চালু আছে, তার দক্ষতা নিয়ে এখন আর কোনও সংশয় নেই। এ ছাড়া ভারতে সঞ্চয়ের হারও অন্য অনেক দেশের তুলনায় বেশি। তাই ‘সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কার্যকর করতে পারলে’ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।
দেশের আর্থিক অগ্রগতি ৯ শতাংশ হারে নিয়ে যেতে হলে ব্যাঙ্ক ঋণের পরিমাণ আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন প্রণববাবু। তবে একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, এ জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনের ব্যবস্থা ব্যাঙ্কগুলিকে নিজেদেরই করতে হবে, শুধু কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। তাঁর কথায়, “কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাঙ্কগুলিকে ৬ হাজার কোটি টাকা মূলধন দেবে বলে ঠিক করেছে। ইতিমধ্যেই ১ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকিটাও আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই দিতে দেওয়া হবে। তবে ব্যাঙ্কগুলিকে তাদের মুনাফা থেকেও মূলধনের ব্যবস্থা করতে হবে।” |