আজিম প্রেমজির সুর এ বার ‘দশ জনপথ ঘনিষ্ঠ’ রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার মুকেশ অম্বানীর গলাতেও। রবিবার মুম্বইয়ে বণিকসভা সিআইআই ও ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম’ আয়োজিত ভারতীয় আর্থিক সম্মেলনের মঞ্চ থেকে সরকারের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, আরও দ্রুত নেওয়া হোক শিল্পের নীতি নির্ধারণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত। আর সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতপার্থক্য যেন কখনওই বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। কারণ তাঁর মতে, বেসরকারি শিল্প ক্ষেত্রই এই মুহূর্তে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির চালিকাশক্তি।
শুধু অম্বানী-ই নন, শিল্প নিয়ে কেন্দ্রের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে ওই একই মঞ্চ থেকে এ দিন সরব হয়েছেন প্রধান বিরোধী দল বিজেপি-র সভাপতি নীতিন গড়কড়ীও। তাঁর দাবি, কয়লা ও বিদ্যুতের মতো বিভিন্ন শিল্প নিয়ে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের অবস্থান বার বার দেশের আর্থিক বৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আইন তৈরির প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে তিনি বক্তব্য, যে কোনও আইনই স্বচ্ছ, ফলপ্রসূ এবং নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বলবৎ হওয়া উচিত। শিল্পের নীতিগুলি ঠিকমতো কার্যকর না করতে পারার ক্ষেত্রে ইউপিএ সরকারের অন্দরে ছড়িয়ে পড়া ব্যাপক দুর্নীতিই দায়ী বলে দাবি তাঁর।
|
মুকেশের পাশাপাশি মুখ খুললেন গডকড়ীও। |
একই কথার প্রতিফলন ঘটে শিল্পপতি আদি গোদরেজের গলাতেও। তাঁর দাবি, শুধু শিল্প বা রাজনীতি নয়, দুর্নীতি ছড়িয়ে গিয়েছে সমাজের সর্বস্তরেই। যে কারণে যথেষ্ট ধাক্কা খাচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি। ভারতে লগ্নি পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসছে বহু দেশি-বিদেশি সংস্থা। শুধুমাত্র লোকপাল বিল প্রণয়ন নয়, দুর্নীতি আটকাতে কেন্দ্রের আরও কঠোর পদক্ষেপ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ দিন রাজনৈতিক কারণে যেন শিল্পের গতি থমকে না যায়, সে দিকে আরও কড়া দৃষ্টি রাখা এই মুহূর্তে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান রিলায়্যান্স কর্তা। তিনি বলেন, “অনেক সময়েই সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার জেরে আটকে থাকে প্রকল্পের কাজ। কখনও আবার রাজনৈতিক বাধার মুখে পড়ে আদৌ তা শেষ করাই হয়ে ওঠে না সংশ্লিষ্ট শিল্প সংস্থার। সে ক্ষেত্রে শিল্প সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট নীতি তৈরি এবং তা কার্যকর করতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে এক সঙ্গে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের আর্থিক বৃদ্ধিই।” এই পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকা ও ইউরোপের উদাহরণও টেনে আনেন মুকেশ। যেখানে রাজনৈতিক মতাদশর্গত পার্থক্যকেই তাদের আর্থিক সঙ্কট থেকে উদ্ধারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেখেছে গোটা বিশ্ব। প্রসঙ্গত, একই সুরে গত মাসে কেন্দ্র ও রাজ্যের সিদ্ধান্তহীনতার সমালোচনা করেছিলেন আজিম প্রেমজিও। দুর্নীতি দূরে রেখে শিল্প-সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি ধাক্কা খাবে বলে মত প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
এ দিন দেশের মানুষের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও ঢেলে সাজার আবেদন করেছে গোটা ভারতীয় শিল্পমহলই। উদারনীতির জমানায় গত ২০ বছরে দেশে মাথাপিছু আয় বেড়েছে তিনগুণ। আর জাতীয় আয় হয়েছে দ্বিগুণ। বেসরকারি শিল্প এগিয়েছে রকেটগতিতে। হাত মিলিয়েছে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির কাজে। আগামী দিনেও এই বৃদ্ধির হার যাতে কোনও ভাবে বাধা না পায়, সে জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রকেই এক সঙ্গে কাজ করতে হবে বলেও মত প্রকাশ করেছে শিল্পমহল। |
‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম’-এর ভারতীয় শাখার সম্মেলনে মুকেশ অম্বানী,
আনন্দ শর্মা, ছন্দা কোচার। রবিবার মুম্বইতে এএফপি-র ছবি। |
এই পরিপ্রেক্ষিতে মুকেশ জানান, সে ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে একবিংশ শতাব্দীর মানুষের চাহিদাও। যাঁরা কিনা, এই মুহূর্তে সব কিছু পেতে আগ্রহী। অপেক্ষা করতে রাজি নয়। সকলেরই মতে, এই চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বদলাতে হবে পুরনো মানসিকতাও।
অন্য দিকে, ওই একই মঞ্চ থেকে আর্থিক সঙ্কট যুঝতে বিভিন্ন দেশের রক্ষণশীল মনোভাবের সমালোচনা করেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মাও। তাঁর মতে, ২০০৮-এর মন্দার পর নিজেদের অর্থনীতিকে বাঁচাতে আমেরিকা রক্ষণাত্মক মনোভাব নিয়েছিল। এখন ইউরোপের আর্থিক সঙ্কট ফের
একই সমস্যার সামনে দাঁড় করাতে পারে বিশ্বের অর্থনীতিকে। আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের সিইও ছন্দা কোচারেরও দাবি, এই পরিস্থিতিতে ভারত-সহ সব দেশকেই মূলধনের জোগান বজায় রাখার লক্ষ্যে উদ্যোগী হতে হবে।
এ দিন শিল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করলেও, আর্থিক ক্ষেত্রে ভারতের সম্ভাবনা নিয়ে দ্বিমত নেই সরকার-বেসরকারি কোনও মহলেই। অম্বানীও স্পষ্টই জানান, আগামী দিনে শিল্প-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের সম্ভাবনা প্রচুর। |