প্রায় দু’মাস পরে নানুরের গ্রাম থেকে ফের কয়েকশো বোমা উদ্ধার করল পুলিশ। গত ১৮ সেপ্টেম্বর নানুরের পিলখুণ্ডি গ্রামে এক সিপিএম সমর্থকেরা পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে হাজারের বেশি বোমা উদ্ধার হয়েছিল। তার পরে রবিবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে সুচপুর গ্রামের একটি পুকুর পাড়ের মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে আসে ৯টি প্লাস্টিকের ড্রাম। আটটিতেই ছিল বোমা ভর্তি ও বাকি একটিতে ছিল বোমা তৈরির মশলা।
জেলা পুলিশ সুপার নিশাত পারভেজ বলেন, “গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ দুপুরে ওই গ্রাম থেকে প্রায় ৭০০ বোমা এবং চার কেজি বোমার মশলা উদ্ধার করেছে। কারা কী উদ্দেশ্যে সেখানে বোমাগুলি রেখেছিল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কেউ গ্রেফতার বা আটক হয়নি।” |
বিভিন্ন সময়ে পুলিশি অভিযানে নানুরের গ্রামে কখনও সিপিএম, কখনও তৃণমূল সমর্থকদের বাড়ি থেকে বোমা কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু সুচপুর গ্রাম থেকে বোমা উদ্ধারের ঘটনা রাজনৈতিক দিক থেকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ২০০০ সালে ওই গ্রামেই ১১ জন তৃণমূল সমর্থক খেতমজুর খুন হয়েছিলেন। ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৪৪ জন সিপিএম নেতাকর্মী বর্তমানে যাবজ্জীবন সাজা কাটাচ্ছেন। মূলত সুচপুর গণহত্যার সহানুভুতির হাওয়া পালে লাগিয়ে নানুর তথা বীরভূম জেলায় তৃণমূলের প্রভাব বিস্তার। ওই গণহত্যার পরবর্তী নির্বাচনে নানুর এলাকার কয়েকটি পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করেছিল তৃণমূল। এমনকী গত বিধানসভা নির্বাচনে বামদূর্গ হিসেবে পরিচিত নানুর কেন্দ্রটিও সিপিএমের হাতছাড়া হয়। এই নির্বাচনের পরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে নানুর থানা এলাকার অধিকাংশ পঞ্চায়েতের নিয়ন্ত্রণও তৃণমূলের হাতে। কিন্তু সুচপুর যে পঞ্চায়েতের অধীন সেই নওয়ানগরকড্ডা পঞ্চায়েতটি এখনও সিপিএমের দখলে রয়েছে।
তৃণমূলের নানুর ব্লক কার্যকরি সভাপতি অশোক ঘোষ বলেন, “নওয়ানগরকড্ডা পঞ্চায়েত-সহ সুচপুর গ্রাম সিপিএমের দখলে। বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে ওই এলাকায় আমাদের প্রভাব বাড়তে শুরু করেছে। সন্ত্রাস করে এলাকার দখল ধরে রাখতে চেষ্টা করছে সিপিএম। সেই জন্য ওই সব বোমা মজুত রেখেছে তারা।” অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সমীর ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূলের সন্ত্রাসেই শুধু নানুর কেন, গোটা রাজ্যে আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচি সম্পন্ন করতে পারছি না। ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হামলার কারণে পঞ্চায়েত কিংবা পঞ্চায়েত সমিতির কাজ করতে পারছি না। সেখানে সন্ত্রাস করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে বোমা মজুত রাখার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আসলে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই ওই বোমা মজুত রাখা হয়েছিল।” |