ঘুরে ঘুরে পয়সা চাইতেই মজা হয় ঘণ্টুর
রকারি উদ্যোগ আছে। আছে বেসরকারি উদ্যোগও। তবু শ্রমিক হওয়ার পথ থেকে সরিয়ে আনা যায়নি শিশুদের। কারণ, তাদের পুনর্বাসনের জন্য সার্বিক ব্যবস্থা করা যায়নি। কোথাও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা থাকলেও অজ্ঞতা বা স্রেফ অনিহার কারণেই সমাজে রয়ে গিয়েছে শিশুশ্রম। দুর্গাপুরেও ছবিটা একই। আজ, শিশু দিবসেও।
সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডে এক দল পথশিশু যাত্রীদের কাছ থেকে ভিক্ষা সংগ্রহ করে বহু দিন। পুরসভার শিশুশ্রমিক স্কুলে তাদের ভর্তি করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দিন কয়েক পরেই পরিস্থিতি সেই আগের মতো।
জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাঁকসার পানাগড়ে দীর্ঘদিন শিশুশ্রমিকদের স্কুল চালাচ্ছে স্থানীয় একটি ক্লাব। পড়ুয়াদের থাকা-খাওয়ার জন্য সেখানে হোস্টেল গড়েছে ক্লাবটি। অথচ সেখানকার স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরেও বেশ কিছু পড়ুয়া স্কুলছুট হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
বছর সাতেকের পিন্টু রুইদাস গত দু’বছর ধরে কাজ করে বেনাচিতির এক গ্যারাজে। বাবা রিকশাচালক। শিশুশিক্ষাকেন্দ্রে দিন কয়েক গিয়েছিল পিন্টু। ভাল লাগেনি। তার কথায়, “বাড়িতে টাকা নেই। তাই পয়সা রোজগার করাই ভাল।” গ্যারাজ মালিকও জানালেন, পিন্টুর অনুরোধেই তিনি কাজ দিয়েছেন তাকে।
বছর খানেক ধরে সিটি সেন্টারে একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করছে ন’বছরের গঙ্গা সাউ। দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠে স্কুল ছেড়েছে সে। নিজে কিছু বলতে চায়নি। তবে তার মা সোনামনি সাউ বললেন, “মেয়ে বড় হলে বিয়ে তো দিতেই হবে। চাকরি পাওয়ার মতো পড়াশোনা করানোর ক্ষমতা আমার নেই। তাহলে আর পড়ে কী লাভ?” সোনামনি কিন্তু জানেন, স্কুলে গেলে দুপুরের খাওয়া, জামা, বই-খাতা, পেনসিল, সবই দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডে ভিক্ষা করা বছর ছয়েকের ঘণ্টু আর শ্যাম তো পরিষ্কারই জানিয়ে দিল, স্কুলে যেতে তাদের ভাল লাগে না। তার থেকে সারা দিন ঘুরে ঘুরে পয়সা চাইতেই মজা বেশি। ইস্পাত নগরীর বি জোনে এক চায়ের দোকানে কাজ করে বছর দশেকের রামু। সে জানাল, স্কুলে না গিয়ে রোজগার করতেই তার ভাল লাগে। মা অসুস্থ। বাবা জনমজুর। তার আয় সংসার চালাতে সাহায্য করে।
পুরসভার শিক্ষা আধিকারিক তথা সমাজ কল্যাণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সঙ্ঘমিত্রা দাশগুপ্ত বলেন, “ধারাবাহিক ভাবে প্রয়াস চলছে যাতে একটি শিশুও স্কুলের বাইরে না থাকে। তবু অনেকে স্কুলছুট হয়ে যাচ্ছে। ফের তাদের স্কুলে টানার চেষ্টা চলছে। আশা করা যায় এ ভাবেই এক দিন শিশুশ্রমিক সমস্যার সমাধান হবে। শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নানা রকম প্রচার চালিয়ে শিশু ও তার পরিবারে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টাও হচ্ছে।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন স্কুলে ভর্তি হয়ে যাতে ওই শিশুদের পড়াশোনা নিয়ে সমস্যায় পড়তে না হয় সে জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে মিলে দুর্গাপুরে গড়ে তোলা হয়েছে জেলার প্রথম সেতুবন্ধ স্কুল। কিন্তু তাতেও সমস্যার মূল উপড়ে ফেলা যাচ্ছে না। কেন? মনোবিদ শিলাদিত্য রায় বললেন, “নিজের রুজি রোজগারের দায়িত্ব যে নিজেকেই নিতে হবে, এটা ওরা খুব ভাল ভাবেই জেনে গিয়েছে। আরও জানে, একটা সময়ের পরে পড়াশোনার খরচ জোগানোর আর কেউ থাকে না। এটাই কঠিন বাস্তব। বরং, ছোট থেকে কোনও কাজে প্রশিক্ষণ নিলে বড় হয়ে সেটাই তাদের জীবনধারণের পথ হয়ে দাঁড়াবে।”
মুক্তির পথ কী, চিন্তায় সমাজকর্মীরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.