সুশান্ত বণিক • চিত্তরঞ্জন |
শারদ উৎসব আর দীপাবলির রেশ এখনও কাটেনি। তার মধ্যেই বইমেলায় মাতল রেল শহর চিত্তরঞ্জন। স্থানীয় শ্রীলতা ইনস্টিটিউট প্রেক্ষাগৃহের মাঠে আয়োজিত ২৬তম বইমেলাকে ঘিরে এখন সাজো সাজো রব। শুধু শহরই নয়, ভিড় জমাচ্ছেন সুদূর অঞ্চলের বইপোকারাও। আয়োজকদের দাবি, পাঠক ও প্রকাশকদের চাহিদা মেটাতে এ বার দোকানের সংখ্যা ৩৫ থেকে বাড়িয়ে ৫৪ করা হয়েছে।
ফি বছর এই মেলার টানে ছুটে আসেন গিরিজাশঙ্কর দত্ত। তিনি বলেন, “২৬ বছর আগে প্রথম যে দিন বইমেলা শুরু হয় সে দিন থেকেই মাঠে আসছি। এক দিনের জন্যও গরহাজির হইনি।” তাঁর কথায়, “এখন আর আগের মতো প্রাণ খুঁজে পাই না। কিন্তু বইয়ের টান অনুভব করি।” |
চিত্তরঞ্জন বইমেলার আকর্ষণ কিছু কম নয় এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছেও। শনি ও রবিবার দুপুরবেলা বইমেলার মাঠে ভিড় জমিয়েচ্ছিল তারাও। স্থানীয় একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী উদিতা বাগল বলে, “এই নিয়ে তৃতীয় বছর মেলায় এলাম। কবিতার বই-ই সবথেকে পছন্দ। আমার সমসাময়িক সাহিত্য ভাল লাগে। তাই নতুন কবিদের বই নিয়েছি।” সাহিত্য অবশ্য নৈব নৈব চ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক স্তরের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। খান কয়েক কম্পিউটার ও রসায়নের বই কিনেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “সব সময় তো আর কলকাতায় যাওয়া হয় না। তাই চাহিদা অনেকটাই এই মেলায় মিটিয়ে নিতে পারি।”
এ বার বইমেলার মাঠে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রবেশমূল্য নেই। মেলা কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, চিত্তরঞ্জন রেল শহর-সহ আশপাশের এলাকার সবক’টি স্কুলের প্রায় ১৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে বিনামূল্যে প্রবেশপত্র দিয়েছেন তাঁরা। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “বই মেলা তো ওদের জন্যই। ওরা আসবে। আনন্দ করবে। বই পড়ার অভ্যাস গড়বে, এটাই তো চাই আমরা।”
প্রতিদিন বইমেলার মাঠে যাওয়া নেশা সাহিত্যিক অনাথবন্ধু চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, “অনেক সাহিত্যিক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়। গল্প হয়। কে কী লিখছেন জানা যায়।” পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, নবীন প্রজন্মের সাহিত্যের হৃৎপিণ্ড লিটল ম্যাগাজিনকে একদমই উৎসাহ যোগাচ্ছেন না আয়োজকেরা। তাঁর পরামর্শ, পরের বার থেকে লিটল ম্যাগাজিনের লেখক ও প্রকাশকদের আরও বেশি করে জায়গা দিন আয়োজকেরা।
সাহিত্য ও ছবির একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। তাই মেলার ক’দিন বিকেল হলেই মাঠে হাজির হন চিত্রশিল্পী অখিল মজুমদার। সঙ্গে থাকে বড় সাদা আর্ট পেপার আর পেনসিল। বন্ধুদের সঙ্গে গল্পের ফাঁকে অবিরাম ছবি আঁকেন তিনি।
মেলায় ভিড় দেখে মুখে হাসি প্রকাশকদেরও। |