এক সিপিএম সমর্থককে খুনের জেরে উত্তাল হল কালিয়াচকের মোজমপুর এলাকা। শনিবার সকালের ওই ঘটনার সময় এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক ইশাক খান চৌধুরী। অভিযোগ, তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করেও বোমা ছোড়া হয়। তবে গাড়িতে বোমা লাগেনি।
মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্যাম সিং বলেন, “দুষ্কৃতীরা মোজমপুর থেকে এক জনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে। কী কারণে এই খুন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই ঘটনার পরে এলাকায় দুই দল দুষ্কৃতীদের বোমা-গুলির লড়াইও হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ ধরে।”
সেই সময় ইশাক খানের গাড়ির দিকেও যে বোমা ধেয়ে আসে তা মেনে নিয়েছেন ওই পুলিশ কর্তা। কংগ্রেসের অভিযোগ, সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই ওই কাজ করেছে। ঘটনাটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানোর পাশাপাশি আজ, কালিয়াচকে প্রতিবাদ দিবস ও ধিক্কার মিছিলের ডাক দিয়েছে জেলা কংগ্রেস।
কালিয়াচকের মোজমপুরের বাসিন্দা নিহত ভোবা শেখ (২০) এলাকায় সিপিএম সমর্থক হিসেবে পরিচিত। চাষবাস করেই তাঁর সংসার চলত। এ দিন সকালে ৫-৬ জন দুষ্কৃতী বাড়িতে চড়াও হয়ে ভোবাকে টেনে হিঁচড়ে মোটর সাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে একটি মাঠ থেকে পুলিশ ভোবাকে মৃতপ্রায় অবস্থায় উদ্ধার করে। মালদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান তিনি। তাঁর মারা যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়ে যায় বোমাবাজি। দু’পক্ষের মধ্যে গুলির লড়াইও চলে বলে গ্রামবাসীরা জানান।
এই সময়ে রামনগরে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হওয়া দশম শ্রেণীর ছাত্র বিশ্বজিৎ মণ্ডলের স্মরণসভায় যাচ্ছিলেন বিধায়ক। মোজমপুর মোড়ের কাছে বিধায়কের গাড়ি লক্ষ্য করে দুষ্কৃতীরা বোমা ছোঁড়ে বলে অভিযোগ। পরে পুলিশি নিরাপত্তায় বিধায়ক বাড়ি ফেরেন। সিপিএম সমর্থক খুন এবং বিধায়কের উপর হামলার ঘটনায় কংগ্রেস ও সিপিএমের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবন মৈত্র বলেন, “বিধায়ক দুষ্কৃতীদের চেনেন নাকি? ওরা যে সিপিএম করে তা কী করে তিনি জানলেন, বুঝলাম না।”
এ দিকে, প্রকাশ্যে সিপিএম সমর্থককে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন এবং তারপরে বিধায়কের গাড়ির পাশে বোমা মেলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ইশাক খান চৌধুরী যেমন বলেন, “কালিয়াচকের মোজমপুর এবং লাগোয়া এলাকায় সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তারাই আমার গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ও গুলি ছুঁড়েছে।” কংগ্রেসের মালদহের জেলা সভাপতি আবু হাসেম খান চৌধুরীর কথায়, “পুলিশের একাংশ দুষ্কৃতীদের মদত দিচ্ছে। আজ বিধায়কের উপর হামলা হয়েছে। কাল বড় বিপদ হতে পারে।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন কালিয়াচকের বিধায়ক বিশ্বানাথ ঘোষ বলেন, “নির্বাচনের পর জেলায় ৫ ছাত্র খুন হয়েছে। কালিয়াচকে একের পর এক খুন হচ্ছে। পুলিশকে বারবার সর্বদল বৈঠক ডাকার কথা বলা হচ্ছে। পুলিশের একাংশের নিষ্ক্রিয়তার জেরেই ঘটনাগুলি ঘটছে।” |