এ বার কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোট নিয়ে ‘অশালীন’ মন্তব্য করেছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। শনিবার তাঁর নামোল্লেখ না-করে কড়া সমালোচনা করল ফরওয়ার্ড ব্লক।
এ দিন কোচবিহারে দলের কর্মিসভায় ফব-র জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলা করতে ঠাণ্ডা মাথায় এগোতে হবে। কিন্তু আমাদের কোনও নেতা যদি অঙ্গভঙ্গি করেন, অশালীন মন্তব্য করেন তবে দলের ভিতরে ও বাইরে তার সমালোচনা হবে। তাঁকে সঠিক পথে আনার দায়িত্ব নিতে হবে।” এমনকী, বিমানবাবুর ‘নেতৃত্বদানের’ অধিকার নিয়েও প্রশ্ন তুললেন তিনি। উদয়নবাবুর কথায়, “তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার রয়েছে কিনা সেই প্রশ্নও তুলতে হবে।”
শুক্রবার কলকাতায় বিমানবাবু ওই অশালীন ভঙ্গিতে মন্তব্য করার পরে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। তার পরেও দলের ভিতরে তো বটেই, ফ্রন্টের শরিকদের আঁচ পোহাতে হচ্ছে তাঁকে। কর্মসভার পরে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে উদয়নবাবু বলেন, “অরাজনৈতিক কথা বলে সঙ্কট তৈরি করাটা মেনে নেওয়া যায় না। তা ছাড়া একজনের এমন ভুলের জন্য অন্যরা খেসারত কেন দেবেন? যাঁরা মাথা গরম করে ফেলছেন তাঁদের নেতৃত্বে রাখার বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই ভাবা দরকার বলে মনে করি।”
এ দিনের ওই সভায় ফরওয়ার্ড ব্লক নেতারা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যেরও সমালোচনা করেন। বিগত বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের ভরাডুবির জন্য তাঁকে দায়ী করেন ফব নেতা জয়ন্ত রায়। তিনি বলেন, “২০১১তে বামফ্রন্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। এর কৃতিত্ব সিপিএমের। সিপিএম নেতৃত্বের, বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ভুল সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েই মানুষ মমতাকে ক্ষমতায় এনেছেন। এজন্য কোনও মমত্য ম্যাজিক ছিল না।’’
২৩ জানুয়ারিকে দেশপ্রেম দিবস হিসাবে ঘোষণা, নেতাজীর অন্তর্ধান রহস্য উন্মোচনে মুখোপাধ্যায় কমিশনের রিপোর্ট গ্রহণের দাবিতে রাজ্য জুড়ে ‘জেল ভরো’ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক। ১৮ নভেম্বর কোচবিহার-সহ রাজ্যের ১৪টি জেলায় জেল ভরো আন্দোলন হবে। সেই কর্মসূচি সফল করতেই এ দিন কোচবিহারের রবীন্দ্র ভবনে ওই কর্মিসভা। সেখানে সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তমসের আলিকেও কটাক্ষ করেন ফরওয়ার্ড ব্লক জেলা সম্পাদক। তিনি বলেন, “বিপদে যাঁরা ভয় পান, হতাশ হন, তাঁরা গরিব মানুষকে নেতৃত্ব দিতে পারেন না। হতাশার নানা ছবি আমাদের জেলা ও রাজ্যে ফুটে উঠেছে। যাঁরা আত্মহত্যার কথা বলছেন তাঁদের বাড়িতে চাল, ডাল, তেল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোনও কর্মী যেন ওই পথে পা না-বাড়ান।”
যা শুনে তমসের আলির মনন্তব্য, “সংবাদপত্র দেখে মন্তব্য না-করে আত্মহত্যার হুমকি নিয়ে উদয়নবাবু সরাসরি আমার সঙ্গে কথা বললেই ভাল করতেন। নেতৃত্ব কারা দেবেন সেটা জনগণই ঠিক করবে।”
সভায় ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্বে জেলা স্তরে বামফ্রন্টের নেতৃত্ব বদলের দাবিও তোলেন। উদয়নবাবু বলেন, “পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ও জনগণের গ্রহণযোগ্যতার নিরিখে কোচবিহার-সহ রাজ্যের আরও কয়েকটা জেলায় শরিকদের নেতৃত্বে এনে বামফ্রন্টকে শক্তিশালী করতে হবে।” সভার পরে তিনি অভিযোগ করেন, “কোচবিহারে দু’মাস অন্তর বামফ্রন্টের বৈঠক হয়। যাঁরা মিটিং ডাকেন তাঁদের আরও সক্রিয় হওয়া দরকার। যাঁদের সক্রিয়তা বেশি তাঁদেরই নেতৃত্বে আনা হোক।” কনভেনশনে দলের জলপাইগুড়ির জেলা সম্পাদক গোবিন্দ রায়, বিধায়ক অক্ষয় ঠাকুর, প্রাক্তন বিধায়ক দীপক সরকার-সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। |