ছাড়াছাড়ির কোনও গল্প নেই।
যতই তাঁর নাম সচিন তেন্ডুলকর হোক, যতই তিনি মহাকীর্তির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকুন, ক্যারিবিয়ান শিবির কিন্তু ম্যাচের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে থেকেই যুদ্ধের কুচকাওয়াজ ভাসিয়ে রাখছে। হুমকিটা স্পষ্ট: কোটলায় হয়নি। ইডেন তো নয়ই, এমনকী সচিনের ঘরের মাঠ ওয়াংখেড়েতেও সেঞ্চুরির ‘সেঞ্চুরি’ হতে দেওয়া যাবে না!
|
পাশে এডওয়ার্ডস। শনিবার।
|
আর এই শাসানি দিচ্ছেন কে? না, খোদ ফিডেল এডওয়ার্ডস। ঘণ্টায় নব্বই মাইল গতিতে বল করা যাঁর কাছে কিছুই না। এবং ক্যারিবিয়ান পেস ব্যাটারিকে ঘাড়ে করে টানার আপাতত একমাত্র লোক। সচিনকে সম্মান করছেন এডওয়ার্ডস। কিন্তু একইসঙ্গে গতির আগুনে ইডেনে ঝলসেও দিতে চাইছেন ‘লিটলমাস্টারের’ শততম সেঞ্চুরির স্বপ্ন।
শনিবারের ইডেনে একে তো সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে প্র্যাক্টিসে গোলাগুলি ছুড়লেন যথেচ্ছ। সকাল সাড়ে আটটা থেকে। এবং ড্রেসিংরুম একফাঁকে ঘুরে এসে ‘রাউন্ড টু’-টা চালু করে দিলেন এডওয়ার্ডস। নমুনাটা এ রকম:
“হ্যাঁ, সচিন বড় ক্রিকেটার। ছোটবেলায় ওর খেলা দেখে বড় হয়েছি। কিন্তু মাঠে আমি কী রকম আক্রমণাত্মক থাকি, দেখেছেন নিশ্চয়ই।”
“কোটলাতে তো সচিনের উইকেটও নিয়েছি আমি। গতি আমার বরাবরের হাতিয়ার। সঙ্গে আনব রিভার্স সুইং।”
“সচিনের একশোতম সেঞ্চুরি? আমি চাইছি, বাকি ইনিংসগুলোতে ও শূন্য রানে আউট হয়ে যাক।”
শুধু কী তাই? সচিন না দ্রাবিড়, কাঠিন্যের বিচার কে সেরা সেই প্রশ্নেও তো ‘দ্য ওয়াল’কে আগে রাখছেন। চিবিয়ে-চিবিয়ে এডওয়াডর্স দিব্যি বলে দিলেন, “এই ভারতীয় ব্যাটিংয়ে দ্রাবিড়কে আউট করাই সবচেয়ে কঠিন। কয়েক মাস আগে যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ভারত এল, তখনই টের পেয়েছিলাম। ওর ডিফেন্স ভাঙা প্রায় দুঃসাধ্য।” কিন্তু কোটলায় তো দ্রাবিড়ের অফস্টাম্পটাও ঝুলিতে ঢুকেছে। “বলটা সোজা রেখেছিলাম। একটু নিচু হয়ে উইকেটটা নিল।” |
শুধু এডওয়ার্ডস নন, টিমটাও তো কেমন যেন আচমকা তেতে গিয়েছে। প্র্যাক্টিসে নজর দিলে কে বলবে, এই টিমটাই কোটলা থেকে হেরে ফিরেছে। কখনও চুপচাপ বসে মনঃসংযোগের ক্লাস। কখনও ফুটবল। কখনও নেট। মোদ্দা কথায়, হাড়ভাঙা খাটুনি। সঙ্গে শুনানিকোটলা টেস্টটা হয়তো হাতছাড়া হয়েছে। কিন্তু ভারতকে চাপে রাখতে পারলে সিরিজে ফেরা যাবে না, এমন নয়। শুধু দুই ওপেনারকে সাততাড়াতাড়ি ফেরাতে হবে। রানের গতি তা হলে ঝপ করে পড়ে যাবে আপানাআপনি।
“উইকেটে তো ঘাস আছে কিছুটা,” বলছিলেন এডওয়ার্ডস। ইডেনে একটা উইকেট পেলে টেস্টে যাঁর দেড়শো উইকেট হয়ে যাবে। একটু থেমে ফের বললেন, “ওদের ব্যাটিংকে আউট করা কঠিন, জানি। কিন্তু আমাদের বোলাররাও ভাল করছে। পরিকল্পনা করে এগোচ্ছি আমরা। আর নিজের কথা বলতে পারি, অ্যামব্রোজ, ওয়ালশ, বিশপের মতো লম্বা হওয়ার ইচ্ছেটা আমারও ছিল। হল না। কিন্তু গতিটা আমারও মন্দ নয়,” উত্তর দেওয়ার সময় ঠোঁটের কোণে ঝুলে থাকে ছোট্ট হাসি।
ক্যারিবিয়ান পেসের ঝাঁঝ এই অবেলাতেও কতটা বোঝা যাচ্ছে?
|