ভারতের জেলে বন্দি পাকিস্তানি নাগরিকদের নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিনা বিচারে পাকিস্তানিরা জেলে আটক থাকায় অসন্তোষও প্রকাশ করেছে শীর্ষ আদালত।
ভারতের বিভিন্ন জেলে বন্দি প্রায় ৩০০ পাকিস্তানির মুক্তির জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের ন্যাশনাল প্যান্থারস পার্টির প্রধান ভীম সিংহ। সেই আবেদনের শুনানিতেই বিচারপতি আর এম লোঢার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেছে, “সংবিধানের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সংক্রান্ত ধারাটিকে সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ গুরুত্ব দেয়। মানুষের কাছেও এই অধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিনা বিচারে পাকিস্তানিদের জেলে বন্দি থাকার ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
ভীম সিংহের আবেদনে যে বন্দিদের কথা বলা হয়েছে তাঁদের মধ্যে চার জন মহিলা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক জনের ন’বছরের মেয়ে রয়েছে। ২০০২ সালে সন্তানসম্ভবা অবস্থায় সীমান্ত পেরনোর পরে ভারতীয় সেনার হাতে ধরা পড়েন তিনি। তার পর থেকেই রয়েছেন লুধিয়ানা জেলে। জেলেই কেটে গিয়েছে তাঁর মেয়ের প্রথম জীবনের কয়েকটি বছর। ওই চার মহিলাকে কেন ফেরত পাঠানো হয়নি তা কেন্দ্রের কাছে জানতে চেয়েছে শীর্ষ আদালত।
কিন্তু পাক বন্দিদের মুক্তির সঙ্গে আইনের পাশাপাশি জড়িত কূটনৈতিক বিষয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, ভারতের জেলে যেমন পাক বন্দিরা রয়েছেন, তেমনই পাকিস্তানের জেলে রয়েছেন ভারতীয়রা। বন্দি মুক্তি নিয়ে দু’দেশের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট ‘মেকানিজম’ রয়েছে। দু’দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত দুটি দল এ বিষয়ে অনেক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই অনুযায়ী বন্দি মুক্তিও হয়েছে। কিন্তু ২৬/১১-র ঘটনার পর সেই ব্যবস্থা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আর পাঁচটা বিষয়ের মতোই থমকে যায়। পরবর্তী কালে ২০১০ সালে ভারতের জেলে বন্দি ২৯৩ জন পাকিস্তানিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছিলেন ১৬৩ জন মৎস্যজীবী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অফিসাররা জানিয়েছেন, দু’দেশের জেলে বন্দি মুক্তি নিয়ে এ বছর স্বরাষ্ট্র সচিব স্তরের বৈঠকে ফের আলোচনা হয়।
২৯ মার্চের ওই বৈঠকে স্থির হয়,
প্রথমত, ১৫ এপ্রিলের মধ্যে দু’দেশ আরও বন্দিকে মুক্তি দেবে।
দ্বিতীয়ত, মৎস্যজীবী বা ভুল করে সীমানা পার করে অন্য দেশে ঢুকে পড়ায় আটকদের প্রতি দু’দেশই সংবেদনশীল আচরণ করবে।
তৃতীয়ত, বন্দি মুক্তির জন্য উভয় দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত কমিটির আলোচনা ফের শুরু হবে।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, শীর্ষ আদালত বন্দি মুক্তির বিষয়ে নজর রাখছে। বিদেশ মন্ত্রকও সর্বোচ্চ আদালতে এ ব্যাপারে একটি ‘স্ট্যাটাস রিপোর্ট’ দিয়েছে। কিন্তু, এই বিষয়ে দু’ দেশেরই রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বরফ এখন নতুন করে ফের গলতে শুরু করছে। তাই আশা করা যায়, বন্দি প্রত্যর্পণ ও মুক্তির বিষয়টি এ বার গতি পাবে। |