লড়াইটা রাহুলের সঙ্গেই, আক্রমণে বোঝালেন মায়া
সোমবার ইলাহাবাদে সভা করে উত্তরপ্রদেশ ভোটে কংগ্রেসের প্রচার অভিযান আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করতে চলেছেন রাহুল গাঁধী। তার ৪৮ ঘণ্টা আগে গাঁধী পরিবারের এই তরুণ প্রজন্মকে আজ ঝাঁঝালো ভাষায় আক্রমণ করলেন মায়াবতী। রাহুলের সঙ্গে ভোট-দ্বৈরথের ক্ষেত্রটা যেন নিজেই প্রস্তুত করে দিতে চাইলেন বিএসপি নেত্রী তথা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী।
লখনউয়ের এক অনুষ্ঠানে মায়াবতী আজ বলেন, “রাহুল গাঁধী ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির নাটক বন্ধ করুন। উনি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাগ দেখাচ্ছেন না কেন? মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আগে তো কেন্দ্রের বিরুদ্ধেই তাঁর রাগ দেখানো উচিত।” বস্তুত, প্রচার যাত্রা উপলক্ষে কংগ্রেস যে সব পোস্টার লাগিয়েছে, তাতে রাহুলের রাগী মুখেরই ছবি রয়েছে। সেই সঙ্গে স্লোগানের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, গাঁধী পরিবারের তরুণ প্রজন্মের এই ক্ষোভ উত্তরপ্রদেশের অনুন্নয়ন, অরাজক পরিস্থিতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে।
আজ তারই প্রতিক্রিয়ায় কামান দেগেছেন বিএসপি নেত্রী।
এ ধরনের রাজনৈতিক আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ ভোট প্রচারের দস্তুর। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হল, রাহুলের আক্রমণকে আমল দিয়ে কেন তাঁর গুরুত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছেন মায়াবতী?
রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, রাহুলের প্রচারের আগেই উত্তরপ্রদেশে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন সপা নেতা মুলায়ম সিংহের পুত্র অখিলেশ যাদব। তাঁর সেই যাত্রা ‘সাড়া’ পাচ্ছে। বিএসপি নেতাদের আশঙ্কা, গত লোকসভা ভোটে কল্যাণ সিংহকে দলে সামিল করিয়ে যে ভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের আস্থা হারিয়েছিলেন মুলায়ম, এ বার কিন্তু তাঁর সেই সমস্যা নেই। তাই এ বার তিনি বেগ দিতে পারেন মায়াবতীকে। এই আশঙ্কা থেকেই মায়া এখন কৌশলে দেখাতে চাইছেন, তাঁর মূল লড়াই কংগ্রেস তথা রাহুলের সঙ্গে। যাতে মুলায়মের ভোট গত লোকসভা নির্বাচনের মতোই কংগ্রেসের সঙ্গে ভাগ হয়ে যায়। আর তার সুফল পায় বিএসপি।
কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, মায়ার এই কৌশলে মুলায়মের ক্ষতি হোক বা না হোক, তাঁদের কোনও ক্ষতি নেই। কারণ, উত্তরপ্রদেশের ভোটে মূল লড়াইটা যে মায়াবতীর সঙ্গে রাহুলের, সেটা দিগ্বিজয় সিংহরাও তুলে ধরতে চান। ‘অনুন্নয়ন, অপশাসনের’ জন্য প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোট পেতে চাইছে কংগ্রেস। সেই কৌশলকে মাথায় রেখেই পোস্টার ছাপিয়েছে তারা। কিছু পোস্টারে সনিয়া গাঁধী, মনমোহন সিংহ বা রাহুল ছাড়াও রয়েছে জওহরলাল নেহরুর ছবিও। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, উন্নয়ন ও শিল্পায়নে নেহরুর মডেলকে তুলে ধরতে চাইছেন রাহুল গাঁধী। রাহুলের উত্তরপ্রদেশ অভিযানও নেহরুর জন্মদিনে, নেহরুরই নির্বাচনী কেন্দ্র ফুলপুর থেকে শুরু হতে চলেছে। কংগ্রেসের একাংশের ব্যাখ্যা, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সমালোচনায় নাজেহাল কংগ্রেস জবাবে নেহরুর সমাজতান্ত্রিক মডেলটাই তুলে ধরতে চাইছে।
উত্তরপ্রদেশে এই পোস্টারেই প্রচার করছে কংগ্রেস। নিজস্ব চিত্র
এই প্রচার যাত্রা শুরুর আগেই রাহুলের নাম না করে মায়াবতী বলেন, “উনি উত্তরপ্রদেশের সাংসদ। উত্তরপ্রদেশ যাতে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আরও অনুদান পায়, সে জন্য ওঁর উচিত কেন্দ্রের ওপর চাপ বাড়ানো।” মহারাষ্ট্র ও দিল্লিতে উত্তরপ্রদেশের মানুষের ওপর আক্রমণ নিয়ে রাহুল কেন নীরব, সে ব্যাপারেও প্রশ্ন তোলেন মায়া। বলেন, “রাহুল উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কিন্তু কংগ্রেস যখন ক্ষমতায়, তখন আরও অরাজক পরিস্থিতি ছিল।”
সপা নেতা অখিলেশ যাদব, বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী এবং তাঁর সতীর্থ ঠাকুর নেতা রাজনাথ সিংহও মায়াবতীর ‘অপশাসন’ নিয়ে প্রচার করেছেন। কিন্তু আজকের বক্তৃতায় তাঁদের কাউকে জবাব দেওয়ার তোয়াক্কা করেননি মায়াবতী। তাঁর একমাত্র আক্রমণের লক্ষ্য ছিলেন রাহুল এবং কংগ্রেস। বিএসপি নেতা দারা সিংহ চৌহান অবশ্য বলেন, “সবার সমালোচনারই জবাব দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে কেন্দ্রে কংগ্রেস। তারা উত্তরপ্রদেশের প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে। তাই বিএসপি নেত্রী বেশি করে কংগ্রেসেরই সমালোচনা করছেন।” অন্য দিকে, কংগ্রেস মুখপাত্র রশিদ আলভি বলেন, “কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশকেই সব থেকে বেশি অনুদান দিয়েছে। কিন্তু মায়াবতীর অসীম খিদে। তিনি আরও অর্থ চান। যাতে সেই টাকা ইচ্ছেমতো তছরুপ করা যায়।”
অনেকেই বলছেন, এই দ্বৈরথে সোমবার ফুলপুরে রাহুলের প্রস্তাবিত সভার গুরুত্ব বাড়ছে। এর পরে উত্তরপ্রদেশ জুড়ে ‘রোড শো’ শুরু করবেন রাহুল। সন্দেহ নেই, রাহুলকে ধারাবাহিক ভাবে ‘ঝাঁঝালো জবাব’ দিয়ে যাবেন মায়াবতীও। এতে কার লাভ হয়, সেটাই এখন দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.