মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে নামার সময়ে এক দম্পতির সঙ্গে কতর্ব্যরত কর্মীদের বচসা। আর তার জেরে এক মহিলা পুলিশকর্মীর উপরে চড়াও হয়ে নিগ্রহ। শনিবার সন্ধ্যায় চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনে ঘটনাটি ঘটে বলে অভিযোগ। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জখম ওই মহিলা পুলিশকর্মীর চিকিৎসা করানো হয়। অভিযুক্ত দম্পতি মদ্যপ অবস্থায় ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সন্ধ্যা সাতটা ২০ মিনিটের এই ঘটনার জেরে স্টেশন-চত্বরে রীতিমতো উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত দম্পতির নাম ইন্দ্রানী বন্দ্যোপাধ্যায় (ঘোষ) ও সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’জনেই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। বাড়ি লেকটাউনে। সপ্তাহান্তে চাঁদনি চক এলাকার একটি চিনা রেস্তোরাঁয় নৈশাহার সেরে বাড়ি ফিরছিলেন স্বামী-স্ত্রী। জখম পুলিশকর্মীর নাম রফিকা খাতুন। মেট্রোর ওই নিরাপত্তাকর্মী কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মী। মার খেয়ে তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। পুলিশকর্মীকে মার-ধরের অভিযোগে সুমন্তবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের আইন অনুযায়ী সূর্যাস্তের পরে কোনও মহিলাকে গ্রেফতার করা যায় না। সেই কারণেই ইন্দ্রানীদেবীকে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তাঁকে গ্রেফতার করা যায়নি।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দম্পতি বেলগাছিয়া স্টেশনের ‘টোকেন’ কেটেছিলেন। সুমন্তবাবু প্ল্যাটফর্মের ভিতরে ঢুকে যান। কিন্তু ইন্দ্রানীদেবীর ক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্মের দরজা খোলায় সমস্যা হয়। এর জেরেই দু’জনে পুলিশ ও মেট্রোকর্মীদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন।
শুধু পুলিশকর্মীকে মারধর নয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মেট্রোর কর্মীদের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’-এর অভিযোগও উঠেছে। মেট্রোর জনসংযোগ আধিকারিক প্রত্যূষ ঘোষ বলেন, “ওই দম্পতি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। তাঁরা গালিগালাজও করছিলেন। মেট্রোর কর্মীরা টোকেনটি যাচাই করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু মহিলা কোনও কথা শুনতে চাননি। কাউন্টারের বুকিং ক্লার্ক বাইরে এসে তাঁকে বোঝাতে গেলে চড় কষিয়ে দেন। সেই সময়ে পুলিশকর্মী রফিকা বাধা দিলে ইন্দ্রানীদেবী তাঁর চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকিয়ে মাটিতে ফেলে দেন।”
ঘটনার কিছু ক্ষণের মধ্যে ওই মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের কর্মী ও স্থানীয় বৌবাবাজার থানার পুলিশের সঙ্গে ইন্দ্রানীদেবীর তর্কাতর্কি চলছে। তিনি দাবি করেন, মেট্রোর কর্মীরা ও পুলিশই তাঁদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।
অন্য দিকে, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুলিশকর্মী রফিকা বলেছেন, “ডিউটি করার সময়ে দেখি এক মহিলা মেট্রোর কর্মীদের মার-ধর করছেন। আমি বাধা
দিলে তিনি আমার চুল টেনে হিঁচড়ে মাটিতে ফেলে দেন। আমি পড়ে যাওয়ার পরও উনি চড়-থাপ্পড় মারছিলেন। এর পরে আমার কিছু মনে নেই।” ইন্দ্রানীদেবী অবশ্য পুলিশের কাছে পাল্টা অভিযোগে বলেছেন, রফিকা মেরে তাঁর চশমা ভেঙে দিয়েছেন।
উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার তরুণী রফিকা বছর তিনেক হল পুলিশের চাকরিতে ঢুকেছেন। হাসপাতালে কাঁদতে কাঁদতে শুধু একটাই কথা বলছিলেন রফিকা, “প্লিজ, আমার বাড়িতে কিছু বলবেন না। মা-বাবা শুনলে আর এই চাকরি করতে দেবে না।” |