পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের গোড়া থেকে যাতে নতুন শিক্ষকরা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পারেন, তাই আগামী মাসেই শুরু হয়ে যাচ্ছে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া। প্রেসিডেন্সি মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু শনিবার বলেন, ডিসেম্বরের গোড়াতেই এই সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের কথা মাথায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইছেন, মার্চের মধ্যে বাছাই পর্ব সেরে জুনের ভিতরেই শিক্ষক নিয়োগ করতে।
শনিবার প্রেসিডেন্সির নতুন উপাচার্য মালবিকা সরকারের সঙ্গে দেখা করেন সুগতবাবু এবং মেন্টর গ্রুপের অন্যতম সদস্য হিমাদ্রি পাকড়াশি। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা, শিক্ষক নিয়োগ, পঠন-পাঠনের ধরন ইত্যাদি নানা বিষয়ে আলোচনা হয় তাঁদের। পরে সুগতবাবু বলেন, “অত্যন্ত মেধাবী, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা প্রেসিডেন্সিতে শিক্ষকতার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন। নিজেদের ডিগ্রি, গবেষণা, কী ভাবে তাঁরা পড়াতে চান ইত্যাদি তথ্য জানিয়ে চিঠি পাঠাচ্ছেন তাঁরা।”
উপাচার্যের কাছে ইতিমধ্যেই অনেক আবেদন এসেছে বলে সুগতবাবু জানান। তিনি বলেন, “আমার কাছে যে আবেদনগুলি এসেছে, সেগুলি আমি উপাচার্যকে দিচ্ছি। শিক্ষক নিয়োগের সময় এই আবেদনগুলিও বিবেচিত হবে।”
প্রেসিডেন্সি কলেজে এখন ১০০টিরও বেশি শিক্ষক পদ খালি আছে বলে এ দিন মালবিকাদেবী জানিয়েছেন। পাশাপাশি, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১০৪টি শিক্ষক পদ তৈরি করছে রাজ্য সরকার। যদিও এ ব্যাপারে তাঁর কাছে এখনও কোনও চিঠি আসেনি বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। তিনি বলেন, “কলেজের খালি পদগুলির জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। সেগুলির মধ্যে সহকারী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক, সব রকম পদই আছে। ইতিমধ্যে নতুন পদের কথা জানিয়ে যদি কোনও সরকারি চিঠি আসে, তা হলে সেই সব পদের জন্যও বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল শিক্ষক নিয়োগের জন্য মেন্টর গ্রুপ যে সব ‘সার্চ কমিটি’ গড়ার সুপারিশ করেছে, তাতে আইআইটি, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বার্কলে, অক্সফোর্ড, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের নাম রয়েছে। এ ছাড়া, নবীন শিক্ষক পাওয়ার জন্য প্রচারের উপরেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ জন্য মেন্টর গ্রুপের ওয়েবসাইটেও নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কেমব্রিজ, ম্যাসাচুসেট্সের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ‘ইয়ং ইনভেস্টিগেটর্স মিট’ হয়, সেখান থেকেও ভাল শিক্ষকদের বাছার পরামর্শ দিয়েছেন মেন্টর গ্রুপের সদস্যরা।
ভাল শিক্ষক নিয়োগ ও পঠনপাঠনের পাশাপাশি যাতে গবেষণার কাজও সমান তালে চলে, তার উপরে জোর দিচ্ছেন মেন্টররা। হিমাদ্রিবাবু এ দিন বলেন, “দেশের ভাল বিজ্ঞানীরা সাধারণত শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত হন না। তাঁরা বিভিন্ন গবেষণাকেন্দ্রে কাজ করেন। আর যাঁরা পড়ান, তাঁরা গবেষণার কাজে মন দিতে পারেন না। প্রেসিডেন্সিতে এই দুই কাজ সমান ভাবে চালানোর জন্য শিক্ষক-গবেষকদের নিয়োগের উপরে জোর দেওয়া হবে।” দেশে তো বটেই, এশিয়াতেও এ ভাবে প্রেসিডেন্সি একটা স্বতন্ত্র জায়গা করে নিতে পারবে বলে হিমাদ্রিবাবুদের আশা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে আগামী জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্সিতে আসছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজ। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা শাখার ডিনও আগামী বছরের গোড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্সির উপাচার্য। আমন্ত্রণ জানিয়ে কেমব্রিজেও চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। উপাচার্যের মতে, এ ভাবেই ধীরে ধীরে সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে প্রেসিডেন্সির সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। |