পুলিশ কর্মীদের ডেকেও সাড়া মেলেনি। তাই দুই বিডিওকে সঙ্গে নিয়ে জুয়ার আসরে হানা দিয়ে ৩ ব্যক্তিকে ধরলেন দিনহাটার মহকুমাশাসক। বুধবার রাতে মাতালহাট পঞ্চায়েতের বক্সিরহাট গ্রামে দিনহাটার মহকুমাশাসক অগাস্টিন লেপচা ওই অভিযান চালান। রাতেই ধৃতদের নিজেদের গাড়িতে দিনহাটা থানায় নিয়ে গিয়ে পুলিশের হাতে দেন। থানায় অভিযোগও দায়ের করেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনার কথা জানাজানি হতেই পুলিশ এবং প্রশাসনিক মহলে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। রাতে মহকুমাশাসককে কেন দিনহাটা থানা কর্তৃপক্ষ পুলিশ ফোর্স দেননি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মহকুমাশাসকের অভিযোগ, রাতে অভিযান বার হওয়ার সময়ে তিনি ফোর্স চাইলে দিনহাটা থানার আইসি তাঁকে সাফ জানিয়ে দেন, রাসমেলার জন্য কোচবিহারে প্রচুর পুলিশ কর্মী পাঠাতে হওয়ায় তিনি কোনও ভাবে আমায় সাহায্য করতে পারবেন না। এই পরিস্থিতিতে দুই বিডিও এবং তিন সরকারি কর্মীকে সঙ্গে নিয়েই বার হই।” কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “ঘটনাটি যা শুনেছি তাতে রাতে ও ভাবে অভিযান চালাতে গিয়ে মহকুমাশাসক বিপদেও পড়তে পারতেন। অভিষ্যতে এই ধরনের অভিযানে যাতে মহকুমাশাসকেরা পুলিশ ফোর্স পান সেই ব্যাপারে পুলিশ সুপারকে নজর রাখতে বলব।” দিনহাটা থানার আইসি প্রদীপ সরকার মন্তব্য করতে চাননি। কোচবিহারের ডিএসপি রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাসমেলার জন্য ওই থানা থেকে প্রচুর পুলিশ কর্মী তুলে নেওয়ার ঘটনাটি সঠিক। পর্যাপ্ত ফোর্স নেই বলে চটজলদি ব্যবস্থা করা যায়নি। অন্তত কয়েক ঘণ্টা আগে জানালে ব্যবস্থা করে দেওয়া যেত।” পুলিশ সুপার প্রণব দাসের বক্তব্য, “ঘটনার কথা আগে জানতাম না। রাতে মহকুমাশাসক সরাসরি আমায় ফোন করলে ব্যবস্থা নিতাম।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শীত নামতেই দিনহাটার বিভিন্ন গ্রামে যাত্রার আসরকে সামনে রেখে জুয়ার আসর শুরু হয়েছে। চলছে অশ্লীল নাচগানের আসর। পুলিশের একাংশের মদতেই এসব হচ্ছে বলে অভিযোগ। বুধবার রাতে মহকুমাশাসক খবর পান এমনই এক জুয়ার আসর বসেছে মাতালহাট পঞ্চায়েতের বক্সিরহাটে। খবর পেয়ে মহকুমাশাসক দিনহাটা থানার আইসিকে ফোন করে ওই এলাকায় অভিযানে যেতে চান বলে জানান। আইসি ফোর্স না-থাকায় যুক্তি দেখানোয় মহকুমাশাসক দুই বিডিও লোপচান তামাং ও রিচার্ড লেপচাকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। পুলিশ জানায়, জুয়ার আসর থেকে ধৃতদের নাম সুধীর বর্মন, পুলক সরকার এবং বঙ্কিম সেন। মহকুমা শাসক যখন ঘটনাস্থলে যান তখনও যাত্রা শুরু হয়নি। মঞ্চের পিছনে তাঁবু গেড়ে, মোমবাতি জ্বালিয়ে জলছিল জুয়ার আসর। তার মধ্যে একটি তাঁবুতে মহকুমাশাসক ঢুকে পড়েন। হাফ প্যান্ট, জামা পরা মহকুমাশাসককে দেখে প্রথমে কেউ চিনতে পারেননি। পিছন পিছন ডুকে পড়েন দুই বিডিও। তাদের দেখেই জুয়ার আসরের লোকেরা সকলে অন্ধকারে পালিয়ে যান। মহকুমাশাসক বলেন, “স্রেফ মনের জোরে তিন জনকে জাপটে ধরি। ফোর্স থাকলে সব ক’টাকে ধরা যেত।” |