সরকারি হাসপাতালে ‘নিরাপত্তাহীনতা’র কারণ দর্শিয়েই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন জঙ্গিপুর হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় মহকুমাশাসকের সঙ্গে বৈঠকের পরে সেই নিরাপত্তার প্রশ্ন হেলায় উড়িয়ে দিয়ে মুর্শিদাবাদের খোদ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শাহজান সিরাজ স্পষ্ট বলছেন, “জেলার সব চিকিৎসকের পিছনে পুলিশ দিতে পারা যাবে না। যে ভাবে সবাই কাজ করেন, জেলার চিকিৎসকদেরও সে ভাবেই হাসপাতালে কাজ করতে হবে।”
বৈঠকে স্থানীয় দুই কংগ্রেস বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস ও আখরুজ্জামানও চিকিৎসকদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। বলছেন, “হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। চিকিৎসকেরা ঠিক মতো কাজ করছেন না। এ ব্যাপারে মানুষের যথেষ্ট ক্ষোভও রয়েছে।” |
নিজের বিভাগীয় কর্তাদের পাশে না পেয়ে শাশ্বতবাবু তাই নিজের অবস্থানে অনড়। তিনি বলেন, “আমি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি দিয়েছি। আর এই পদে থাকার প্রশ্ন নেই।” ওই হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের ওই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ। বুধবারই তাঁরা গণছুটির আবেদন করে ছিলেন। এ দিনও তাঁরা জানান, নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারি ‘আশ্বাস’ না পেলে আগামী দিনে তাঁরা আন্দোলনে নামবেন। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জঙ্গিপুর শাখার সম্পাদক প্রতাপকুমার সাহা ওই মহকুমা হাসপাতালেরই চিকিৎসক। তিনি বলেন, “চিকিৎসকদের নিরাপত্তাহীনতার কথা আমরা জানিয়েছি। চিকিৎসককে মারধর করার তিন দিন পরেও পুলিশের কাছে এফআইআর করা হয়নি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসই মিলেছে শুধু। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদৌ কিছু হবে কী না তা আমরা জানি না। নিরাপত্তা না পেলে চিকিৎসকদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়।” চিকিৎসকদের ‘নিরাপত্তা’র প্রশ্নে পিছিয়ে আসার পাশাপাশি তিনি বলেন, “ঠিক মতো কাজ করলে আবার নিরাপত্তার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে। কাজ করলে কোনও নিরাপত্তার অভাব থাকার কথা নয়।” তবে জেলা জুড়ে পরিকাঠামোগত ঘাটতি যে রয়েছে তা মেনে নিয়েছেন তিনি। জেলা হাসপাতালে একশোরও বেশি চিকিৎসকের অভাব, কর্মী সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক, অথচ জেলা হাসপাতালে ২০০টিরও বেশি শয্যা বাড়ানোয় পরিষেবা দেওয়া আরও ‘অসম্ভব’ হয়ে উঠেছে বলে তিনি মনে করেন। এ দিকে, জঙ্গিপুর হাসপাতালে শিশু মৃত্যু নিয়ে তিন সদস্যের কমিটির রিপোর্ট এখনও জমা পনেনি। সাহজাহান জানান, রিপোর্ট পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৈঠক শেষে জঙ্গিপুরের এসডিও এনাউর রহমান বলেন, “চিকিৎসা পরিষেবায় ঘাটতি রয়েছে বলেই তো এত সমস্যা। মঙ্গলবার চিকিৎসককে মারধরের খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়। না হলে আরও বড় কিছু ঘটতে পারত। ২৭ নভেম্বর হাসপাতাল ভবনে একটি সর্বদলীয় বৈঠক রাখা হয়েছে। সেখানে সব দলের প্রতিনিধিরা ছাড়াও বিধায়ক, চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্মীরা থাকবেন। ডাকা হবে সাধারণ মানুষকেও। স্বাস্থ্য দফতরের সমস্যা ও পরিষেবার ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা করা হবে।” |