মালদহ জেলা হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত ১২ ঘন্টায় জেলা হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে আরও ৪টি শিশুর। গত ৩৬ ঘন্টায় ওই হাসপাতালে ১০টি শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। পর পর শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ যুব কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার সংগঠনের সমর্থকেরা মালদহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও সদর হাসপাতালের সুপারকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। যুব কংগ্রেস নেতা প্রসেনজিত দাস অভিযোগ করেন, মালদহ সদর হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসার কোনও পরিকাঠামো নেই। শিশু বিভাগের জন্য যে পরিমাণ চিকিৎসক থাকা প্রয়োজন তা নেই। অপ্রতুল চিকিৎসক ও পরিকাঠামোর অভাবের কারণে একের পর এক শিশু মারা যাচ্ছে।
মালদহ সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, কারও গাফিলতিতে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা এবং কম ওজন হওয়ার কারণে শিশুগুলির মৃত্যু হয়েছে। মালদহ সদর হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা শ্যামাপদ বসাক। তিনি বলেন, “মালদহ সদর হাসপাতালের সুপারের কাছে শিশু মৃত্যুর বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছি। রিপোর্ট পাওয়ার পরই বোঝা যাবে কারও গাফিলতি ছিল কি না।” বুধবার কালিয়াচকের গয়েশবাড়ির রেশমা বিবি প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে মালদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে রেশমা বিবি একটি মৃত সন্তান প্রসব করেন। ইংরেজবাজারের নঘরিয়ার আদুরি বিবি এদিন সকালে তাঁর ৪ দিনের বাচ্চাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। তিন ঘন্টা পরই তাঁর শিশুটি মারা যায়। হরিশ্চন্দ্রপুরের মোজাফ্ফর আজ সকালে তাঁর দু’দিনের বাচ্চাকে ভর্তি করেন। একঘন্টার মধ্যে তাঁর শিশুটিও মারা যায়। ঝাড়খন্ডের রাজমহলের মেনকা বিবির দু’দিনের বাচ্চারও বুধবার রাত ১০ টায় মৃত্যু হয়। ৩৬ ঘন্টায় ১০টি শিশুর মৃত্যুর ঘটনা জানাজানি হতেই সদর হাসপাতালে শিশু বিভাগে ভতি শিশুদের পরিবারের লোকেদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সদর হাসপাতালের সুপার হিমাদ্রি আড়ি বলেন, “গত ৩৬ ঘন্টায় হাসপাতালে যে সমস্ত শিশুর মৃত্যু তাতে কারও কোনও গাফিলতি ছিল না। কোনও মা মৃত সন্তান প্রসব করেছেন, কোনও শিশুর ওজন ৯০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ২০০ গ্রাম। বাকি শিশুদের মৃত্যু হয়েছে শ্বাসকষ্ট জনিত অসুখে। ৪৫ জন নার্স ও ১০০ জন স্বাস্থ্য কর্মীর শূন্য পদ পড়ে রয়েছে। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী চেয়ে বহুবার চিঠি পাঠিয়েছি। এখনও পর্যন্ত কিছুই পাইনি। ফলে বতর্মানে যে পরিমাণে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী আছেন তাদের নিয়ে হাসপাতালে রোগীর ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।” অভিভাবকদের অভিযোগ, সদর হাসপাতালে শিশু বিভাগে কোনও পরিকাঠামোই নেই। ৮০ শয্যার (নবজাতকদের জন্য সংরক্ষিত ২৩টি শয্যা) হাসপাতালে কাগজে কলমে শিশু বিশেষজ্ঞ ৫ জন রয়েছেন। তার মধ্যে একজন স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন। একজন অসুস্থ হয়ে ছুটি নিয়ে চলে যাওয়ায় বতর্মানে ৩ জন শিশু বিশেষজ্ঞকে ৯১টি শিশুকে সামাল দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। তার উপরে জেলা হাসপাতালের শিশু বিভাগে দুটি ওয়ার্মার ছাড়া কিছুই নেই। নেই ইনকিউবেটার, ফটোফেরাপি, ইনিসিয়েশন পাম্প। যে কয়েকটি যন্ত্রপাতি আছে তাও আবার পুরানো। |