ভাঙা হাত সারাতে শিলিগুর্ড়ির নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন নেপালের বিরতা মোড়ের খগেন্দ্র মঙ্গর। কিন্তু, চিকিৎসার ভুলে হাড় জোড়া লাগা তো দূরের কথা, দু-দফায় হাত কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানায় গোটা ঘটনাটি জানিয়ে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নার্সিংহোমের তরফে অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে। শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পুলিশ জানায়, গাড়ির চালক খগেন্দ্র কালীপুজোর দিন বাড়ির ছাদে আলো লাগাতে গিয়ে পড়ে যান। ডান হাত ভেঙে যায়। এর পর স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে প্রাথমিক চিকিৎসার পর শিলিগুড়ির প্রধাননগরের ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। অভিযোগ, চিকিৎসক আশ্বাস দিয়েছিলেন ভাঙা হাত শীঘ্রই সেরে যাবে। ওই দিন রাতে অস্ত্রোপচারও করা হয়। দু’দিন পর চিকিৎসকরা জানান, হাতে সংক্রমণ হয়েছে। হাত কেটে বাদ দিতে হবে। এর পর কনুইয়ের নিচ থেকে হাত কেটে বাদ দেওয়া হয়। পরে ড্রেসিং করাতে গিয়ে পরিবারকে না জানিয়ে কনুইয়ের ওপর থেকে ফের হাতের অংশ বাদ দেওয়া হয়। খগেন্দ্রবাবুর স্ত্রী মনাদেবীর অভিযোগ, চিকিৎসা সম্পূর্ণ করতে বলা হলে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ টাকা চাইছে। দুর্ব্যবহার করছে। প্রায় ৫০ হাজার টাকা না দিলে নার্সিংহোম থেকে ঘাড় ধরে বার করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এর পরই তিনি এ দিন পুলিশে অভিযোগ জানান। নার্সিংহোমের ম্যানেজার মৃদুল হোড় বলেন, “অভিযোগ ঠিক নয়। চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনেছি, ছাদ থেকে পড়ে হাতে চোট লাগায় ধমনীতে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রথম অস্ত্রোপচারে ঠিক হয়নি। হাতে পচন ধরেছিল। কনুইয়ের ওপর থেকে হাত কেটে বাদ দিতে হয়েছে। ড্রেসিং করাতে গিয়ে দ্বিতীয় বার হাতের অংশ কেটে বাদ দেওয়ার অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা ঠিক নয়। রোগী সুস্থ রয়েছে। শুক্রবার ছুটি দেওয়ার কথা। ৪৭ হাজার টাকার মতো বিল হয়েছে জানালে এখন বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হচ্ছে।” পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নার্সিংহোম থেকে হাত কেটে বাদ দেওয়ার কথা জানান হলে দিশেহারা হয়ে পড়েন মনাদেবী। নার্সিংহোমের কাছে অপর একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে অস্থি বিশেষজ্ঞকে দেখান হয়। তিনি দেখেন হাতে পচন ধরেছে। ওই চিকিৎসক জানান, আগে এলে তিনি ভাঙা হাত সারাতে পারতেন। কিন্তু সংক্রমণ হয়ে পচন ধরেছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি কিছু করতে পারছেন না। ফের আগের নার্সিংহোমের চিকিৎসকের পরামর্শে কনুয়ের নিচ থেকে হাত কেটে বাদ দেওয়া হয়। দিন তিনেক পর ড্রেসিং করাতে নিয়ে গিয়ে রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা না বলেই কনুইয়ের ওপর থেকে হাতের আরও কিছুটা অংশ কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তার পরেই মনা দেবী নার্সিংহোমের সামনে রাস্তায় বসে কাঁদতে শুরু করেন। তা দেখে কৌতুহলী বাসিন্দারা এগিয়ে যান। তাঁদের মধ্যে পেশায় আইনজীবী প্রশান্ত কুমার ঘোষ এবং তাঁর পরিচিত কয়েকজন খগেন্দ্রবাবুর পরিবারের পাশে দাঁড়ান। সাহায্য করতে এগিয়ে যান তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সুজয় ভট্টাচার্য, টিটু দাসরাও। তাঁরা নার্সিংহোমে অভিযোগ জানালে, চাপে পড়ে কর্তৃপক্ষ রোগীকে সুস্থ করে তুলতে সমস্ত সাহায্যের আশ্বাস দেন। প্রশান্তবাবু বলেন, “ভুল চিকিৎসা হয়েছে বলেই ভাঙা হাত কেটে বাদ দিতে হয়েছে। তা নিয়ে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে বললে তাঁরা জানান, ওই চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত যন্ত্রাংশ তাদের নেই। তাই এ ধরনের ঘটনা দু’ একটি ক্ষেত্রে ঘটেই থাকে। এর পর চাপ দিলে রোগীকে সুস্থ করে তোলার আশ্বাস দেন তারা। ভুল চিকিৎসা করেও এখন মোটা টাকা দাবি করছে। পুলিশে অভিযোগ জানান হয়েছে। আমরাও খগেন্দ্রবাবুদের পাশে রয়েছি। অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তি চাই।” |