চিকিৎসা-পরিষেবা নিয়ে সরকারি হাসপাতাল যে সব তথ্য পাঠাচ্ছে, তা কি পুরোটাই খাঁটি? নাকি জলও আছে?
সেটাই এ বার যাচাই করতে চায় রাজ্য সরকার। যে কারণে হাসপাতালে হাসপাতালে নজরদারি চালাতে স্বাস্থ্য দফতর এ বার অনুসন্ধান দল গড়ছে। দলের সদস্যেরা সকলেই হবেন অবসরপ্রাপ্ত পদস্থ সরকারি কর্মী। কিন্তু তাঁদের মধ্যে প্রাক্তন চিকিৎসক বা চিকিৎসাকর্মী থাকবেন নগণ্য। থাকবেন মূলত অবসরপ্রাপ্ত আইএএস, আইপিএস বা ডব্লিউবিসিএস অফিসার, সমাজসেবী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, সমাজতত্ত্ববিদ, মনস্তাত্ত্বিকেরা।
স্বাস্থ্য-তথ্যে নজরদারির দলে চিকিৎসক-চিকিৎসাকর্মীদের অগ্রাধিকার নেই কেন?
স্বাস্থ্য দফতরের দাবি: দলে চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীর প্রতিনিধিত্ব বেশি হলে পক্ষপাতিত্বের আশঙ্কা সব সময়েই থেকে যায়। তাই এই ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য-সচিব সঞ্জয় মিত্রের ব্যাখ্যা, “আমাদের বিশ্বাস, বিভিন্ন পেশা বা জীবিকার লোক দলে থাকলে আসল পরিস্থিতি যাচাই করতে আরও সুবিধা
হবে। পরিষেবা ব্যাপারটা শুধু ডাক্তারেরাই বুঝবেন, এমন তো নয়।
অবসরপ্রাপ্ত আইএএস-রাও ধরতে পারবেন, হাসপাতাল পরিচালনায় ত্রুটি হচ্ছে কি না।”
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতিতে স্থানীয় সমাজসেবী, রাজনীতিক ও শিক্ষাবিদদের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছিলেন। তার ভিত্তিতেই স্বাস্থ্য দফতর জেলায় জেলায় সব পেশার মানুষদের নিয়ে বিশেষ এই অনুসন্ধান দল গড়ে দিচ্ছে। এরা হাসপাতালে গিয়ে কী করবে?
দফতর সূত্রের খবর: আউটডোরে কখন, কত রোগী থাকছেন, কত অস্ত্রোপচার হচ্ছে, বিভিন্ন খাতে কত খরচ হচ্ছে, রোগীমৃত্যুর হার কত, যন্ত্রপাতি কী ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে অনুসন্ধানীরা এ সব রিপোর্ট খতিয়ে দেখবেন। এমনকী, জননী সুরক্ষা যোজনার মতো সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা কী ভাবে খরচ হচ্ছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।
হঠাৎ এ হেন সিদ্ধান্ত কেন?
স্বাস্থ্য-সচিব জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের কার কত কর্মদক্ষতা, সে সম্পর্কে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের তরফে নিয়মিত তালিকা পাঠানো হয় স্বাস্থ্যভবনে। অনেক সময়ে দেখা যায়, যে ডাক্তারের বিরুদ্ধে নিয়মিত গরহাজিরার অভিযোগ, রিপোর্টে তাঁকেই সবচেয়ে দক্ষ বলে উল্লেখ করা হয়েছে! স্বাস্থ্য-কর্তাদের আশা, বিশেষ দলের অনুসন্ধানে এই জাতীয় ‘ভেজাল’ এ বার হাতে-নাতে ফাঁস হয়ে যাবে।
এখানেই শেষ নয়।
আউটডোরে ফাঁকি আটকাতে স্থির হয়েছে, একাধিক দিন আউটডোরে দেরি করে এলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের নাম, বিভাগ-সহ বিভিন্ন তথ্য স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেওয়া হবে। রাজ্যের হাসপাতাল সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার বিশ্বরঞ্জন শতপথীর কথায়, “আউটডোরে গাফিলতি করলেই নাম উঠে যাবে ওয়েবসাইটে। বিষ্ণুপুর, চাঁচল, ডায়মন্ড হারবারের মতো বিভিন্ন হাসপাতালে দেখা যাচ্ছে, অনেক চিকিৎসক ভর্ৎসনা করার পরেও শুধরোচ্ছেন না। সাইটে নাম উঠলে অন্তত লজ্জায় যাতে তাঁরা নিজেদের সংশোধন করেন, তাই এই ব্যবস্থা। আশা করা যায়, ডিসেম্বর থেকেই তা চালু হবে।” |