ঝামেলা যেন পিছু ছাড়ছে না ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। মঙ্গলবার রাতের হাঙ্গামার পরে বৃহস্পতিবার রাতেও রোগীর আত্মীয়দের বিক্ষোভে ফের উত্তাল হয়ে ওঠে ওই হাসপাতাল-চত্বর। ডাক্তারদের বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। রুখে দাঁড়ান জুনিয়র ডাক্তারেরাও। দু’পক্ষে মারামারি শুরু হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠি চালায়। নিরাপত্তার দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারেরা কর্মবিরতি শুরু করে দেন। সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায় রোগী ভর্তির কাজও। প্ল্যাকার্ড-পোস্টার নিয়ে ডাক্তারেরা বসে পড়েন। গাড়ি ঢুকতে না-পারায় দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীদের ফিরে যেতে হয়। ছত্রভঙ্গ হয়ে জনতাও পথ অবরোধ করে।
পুলিশ জানায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ আলেকজান্ডার সিংহ (৬৩) নামে এক বৃদ্ধ রোগীর মৃত্যুর পরেই গোলমাল বাধে। ক্রিস্টোফার রোডের ওই বাসিন্দা হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা নিয়ে এ দিন বিকেলেই ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর ব্যাপারে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানা যায়নি। কথা বলতে চাননি জুনিয়র ডাক্তারেরাও। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে বৃদ্ধের বাড়ির লোকজন ডাক্তারদের সঙ্গে বচসা শুরু করে দেন। কয়েক জন ডাক্তারকে মারধর করা হয়। তার পরেই জুনিয়র ডাক্তারেরা কাজকর্ম বন্ধ করে দেন। পরিষেবায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। মহা সমস্যায় পড়েন দূরের জেলা থেকে আসা রোগী এবং তাঁদের সঙ্গীরা। অমিত হাজরা নামে মুর্শিদাবাদ থেকে আসা এক যুবক বললেন, “সকালে আমার মামা ফান্দি হাজরার ‘ব্রেন স্ট্রোক’ হয়েছিল। জেলা হাসপাতালের ডাক্তারেরা তাঁকে এসএসকেএমে নিয়ে আসতে বলেন। পিজি-তে নিয়ে গেলে তারা ন্যাশনালে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু এখানে এসে ঝামেলায় পড়ে গেলাম। এখন কোথায় যাব, বুঝতে পারছি না।” |
বারবার গোলমালে ন্যাশনাল-কর্তৃপক্ষ প্রায় দিশাহারা। এক অগ্নিদগ্ধ তরুণীর চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাতে ওই হাসপাতালে তাণ্ডব বেধে গিয়েছিল। রোগিণীর স্বজনদের হাতে মারধর খেয়ে সে-দিনও কর্মবিরতির হুমকি দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সুপারের সঙ্গে বৈঠকের পরে তাঁরা নিরস্ত হন। কিন্তু এ দিন নিগ্রহের পরে তাঁরা আর কাজ করতে চাননি। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা চত্বর ঘিরে এমন ভাবে বসে পড়েন যে, রোগী এবং তাঁদের স্বজনদের আসা-যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন?
মহম্মদ হামজা নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর পরে বাড়ির লোকজন তাঁর মৃতদেহ দেখতে চান। কিন্তু বৃদ্ধের কাছে তাঁদের যেতেই দেওয়া হয়নি। তখনই আত্মীয়স্বজন চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে চেঁচামেচি শুরু করে দেন। কিছু জুনিয়র ডাক্তার পাল্টা অভিযোগ করেন, রোগীর সঙ্গীরা তাঁদের উপরে চড়াও হন এবং মারধর করতে থাকেন। তার পরেই ডাক্তারেরা কর্মবিরতিতে নেমে পড়েন। ঘটনাস্থলে চলে আসেন হাসপাতাল ও পুলিশের পদস্থ কর্তারা।
পুলিশের তাড়ায় হটে গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা হাসপাতালের সামনে একটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। ন্যাশনালের সামনে সিআইটি রোড অবরোধ করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেন এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দাও। অবরোধকারীদের অভিযোগ, ওই হাসপাতালে রোগীদের যত্ন নেওয়া হয় না। কথায় কথায় ডাক্তারদের কর্মবিরতির ফলে রোগীরা বিপাকে পড়েন। এর প্রতিবাদেই অবরোধ। ন্যাশনালের অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় গভীর রাতে বলেন, “পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। সমাধানসূত্রের খোঁজে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক এবং স্থানীয় কাউন্সিলরকে নিয়ে আমরা আলোচনা চালাচ্ছি।” কর্মবিরতির ব্যাপারে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
রাতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে রাজ্যের স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতালে বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে পরিস্থিতি জটিল হবে। ডাক্তারদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে পুলিশকেই।” |