নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
প্রতারণা মামলায় ধৃতদের কঠোর শাস্তি এবং প্রতারিতদের অর্থ ফেরতের দাবিতে রাস্তায় নামতে চলেছে শিলিগুড়ির বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। মুম্বইয়ের একটি অর্থলগ্নি সংস্থায় বিনিয়োগ করে শিলিগুড়ির কয়েকশো বাসিন্দা প্রতারিত হয়েছেন। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ মুম্বইয়ের ওই সংস্থার এক ম্যানেজিং ডিরেক্টর-সহ ৪ জনকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে। আরও কয়েকজনকে খোঁজা হচ্ছে। আরও একাধিক সংস্থার নামে একই ধরনের প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়েছে। বেশ কিছু অভিযোগও দায়ের হয়েছে। পাশাপাশি, পুলিশি ঝঞ্ঝাট এড়াতে অনেকে অভিযোগও জানাননি। এই পরিস্থিতিতে প্রতারিতদের আইনি সহযোগিতা দিতে চায় দার্জিলিং জেলা লিগাল এড ফোরামও। লিগাল এড ফোরামের পক্ষ থেকে প্রতারিতদের তালিকা পুলিশের কাছ থেকে সংগ্রহ করে তদন্তে সাহায্য করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দার্জিলিং জেলা লিগাল এড ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার বলেন, “শহরের কিছু প্রভাবশালী লোককে ব্যবহার করে যে ধরনের প্রতারণা হয়েছে তা কখনই চুপচাপ মেনে নেওয়া যায় না। আমরা প্রতারিতদের পাশে দাঁড়াতে চাই। প্রয়োজনে আইনি সাহায্য দেব। পাশাপাশি, এ বার থেকে শিলিগুড়ি শহর এবং লাগোয়া এলাকায় যখনই আমাদের কর্মশালা হবে সেখানে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রতারণার এই ঘটনা নিয়ে বাসিন্দাদের সচেতন করা হবে।” পাশাপাশি, রাজ্য আইনি পরিষেবা কমিটির মাধ্যমেও বিষয়টি রাজ্য সরকারের গোচরে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় তাঁদের কাছে নির্দিষ্ট করে কোনও অভিযোগ জমা না-পড়লেও ঘটনাটি নিয়ে উদ্বিগ্ন মানবাধিকার সংক্রান্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি। ওই সংগঠনের শিলিগুড়ি শাখার সম্পাদক অভিরঞ্জন ভাদুড়ি বলেন, “নির্দিষ্ট করে কেউ আমাদের কাছে এই বিষয়ে কোনও অভিযোগ জানাননি। তা ছাড়া একটি নয়, একাধিক সংস্থা এই ধরনের প্রলোভন দিয়ে শিলিগুড়িতে ব্যবসা করছে। কী করে এরা সরকারি অনুমতি পাচ্ছে সেটা আমার প্রশ্ন। কী ভাবে এই ধরনের বেআইনি কাজ বন্ধ করা যায় সেটা সকলের ভাবা উচিত। আমাদের দিক থেকে কী করা সম্ভব সেটাও দেখা হচ্ছে।” বছর দুয়েক ধরে শিলিগুড়ি শহরে এই সমস্ত অর্থলগ্নি সংস্থা ব্যবসায় নেমেছে। মুম্বই, বেঙ্গালুরু, দিল্লির এই সমস্ত বেসরকারি সংস্থাগুলি শহরের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে এজেন্ট নিয়োগ করে ব্যবসায় নামে। প্রথম দিকে কিছু লোক টাকা ফেরত পাওয়ায় অনেকেই লগ্নি করেন। কিন্তু মেয়াদান্তে তাঁরা কেউই টাকা ফেরত পাননি। এজেন্টরাও প্রতারিত বলে পুলিশের কাছে দাবি করেন। এই পরিস্থিতিতে তদন্তে নেমে পুলিশ গত ২১ অক্টোবর মুম্বই থেকে একটি সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে গ্রেফতার করে। জানা যায়, কমিশন বাবদ কয়েকজন লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করেছেন। কেউ বা বিলাসবহুল গাড়িও পেয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ প্রতারণার মামলায় জড়িত সন্দেহে রামসা জীবন সাহেবরাম চৌধুরী, রণবীর দাস, রাজীব ভদ্র ও দেবব্রত পালকে গ্রেফতার করে। পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়ে এক রেল অফিসারের স্ত্রী রিমি দে-র নামেও। একজন অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষকের ভূমিকা নিয়েও প্রচুর অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। কিন্তু, তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি বলে পুলিশ জানিয়েছে। বুধবার ওই মামলায় অভিযুক্তদের প্রত্যেককে আদালত থেকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পরে ফের জেরা শুরু করেছেন পুলিশ কর্তারা। কমিশনের টাকা কে, কোনও ব্যাঙ্কে জমা রেখেছেন সেটা জানার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, কমিশন বাবদ মেলা গাড়ি উদ্ধারের জন্য শুরু হয়েছে তল্লাশি। রবীন্দ্রনগরের এক অভিযুক্তকে গ্রেফতারের জন্য বুধবার রাতেও তল্লাশি চালায় পুলিশ। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে শিলিগুড়ির এক অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক সম্পর্কেও। ওই কলেজ শিক্ষকের হয়ে যাঁরা বিভিন্ন জনকে টাকা লগ্নি করাতে প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, “আমি ওই অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষকের কথায় টাকা লগ্নি করি। ওই কলেজ শিক্ষকের সাব এজেন্ট হিসেবেও বেশ কয়েকজন কাজ করেছেন। তাঁদের ভূমিকা পুলিশ খতিয়ে দেখুক।” শিলিগুড়ির এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “প্রতিটি তথ্যই যাচাই করা হচ্ছে। মূল অপরাধীদের ধরার ব্যাপারেও চেষ্টা চলছে।” এই প্রতারণার ঘটনায় জড়িত সমস্ত অপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র অনিমেষ বসুও। তিনি বলেন, “সংবাদ মাধ্যমে যেটুক শুনেছি সেটা মারাত্মক। সমস্ত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা না-হলে ফের এমন ঘটনা ঘটতে পারে। মানুষকেও সচেতন করা দরকার। এই ধরনের ঘটনা কখনই চুপচাপ মেনে নেওয়া যায় না।” শিলিগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সভাপতি দীপঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “এটা এমন একটা ঘটনা যে আমাদের কেউই দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারি না। কী করা যায় সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হবে। সমস্ত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হোক, সেটা আমরাও চাই।” |