দেবজিৎ ভট্টাচার্য • কলকাতা |
কেন্দ্র চাইছে বিচার পরিষেবাকে বাড়ির দরজায় পৌঁছে দিতে। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে যাতে ছোটখাটো মামলার জন্য শহরে গিয়ে হয়রানি হতে না হয়, তার জন্য পঞ্চায়েত কিংবা পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে গ্রাম ন্যায়ালয় তৈরি করতে রাজ্যগুলিকে নির্দেশও দিয়েছে আইন মন্ত্রক। সেই কেন্দ্রীয় গ্রাম ন্যায়ালয় আইন অনুযায়ী আপাতত রাজ্যের ৬২টি মহকুমা শহরে ওই আদালত তৈরি করতে চায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়ার পর গ্রাম ন্যায়ালয়ে প্রশাসনিক কাজের জন্য নতুন পদ তৈরির অনুমতি চেয়ে অর্থ দফতরে ফাইলও পাঠিয়েছে রাজ্যের আইন ও বিচার দফতর। আইন ও বিচার মন্ত্রী মলয় ঘটকের কথায়, “মানুষকে আদালতে যেতে হবে না, আদালত মানুষের কাছে যাবে। এটাই ওই আইনের মূল কথা। তা মাথায় রেখেই প্রথম দফায় সব ক’টি মহকুমা সদরে একটি করে এবং পরবর্তী কালে প্রতি ব্লকে গ্রাম ন্যায়ালয় তৈরি করবে রাজ্য সরকার।”
কিন্তু গোটা মহকুমা এলাকার জন্য একটি ন্যায়ালয় হলেই কি নতুন আইনের সার্থক রূপায়ণ হবে?
আইন দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, এখনই সব ব্লক এই সুবিধা পাবে না। প্রথম দফায় ৬২টি মহকুমা শহরের কাছাকাছি ব্লকের মানুষ সুবিধা পাবেন। পরবর্তী ক্ষেত্রে তা সব ব্লকে সম্প্রসারিত হবে। তবে যেহেতু বিকেন্দ্রীকরণই এই আইনের মূল লক্ষ্য, তাই প্রাথমিক পর্যায় থেকেই মহকুমা শহরের ব্লকের ন্যায়ালয়ে সংলগ্ন অন্তত একটি ব্লককেও যুক্ত করা যায় কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিচার দফতরের এক কর্তার কথায়, বিচারব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের ক্ষেত্রে প্রথম বাধাটা আসে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের কাছ থেকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন বাধা আসবে না। কারণ মহকুমা শহরেই আদালত বসবে। মহকুমা আদালতের আইনজীবীরা সহজেই ন্যায়ালয়ে গিয়ে মামলা লড়বেন। গ্রামের মানুষও উপকৃত হবেন। ক্রমশ ব্লক স্তরে ন্যায়ালয়গুলি চালু হলে এবং সেখানে মামলা থাকলে আইনজীবীদের একাংশ পুরোদস্তুর ওখানেই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। তখন আর কোনও সমস্যা হবে না হলে মনে করছেন বিচার দফতরের আধিকারিকরা।
আইনে বলা হয়েছে, জনবসতির ভিত্তিতে কোনও একটি গ্রাম পঞ্চায়েত বা একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত কিংবা একটি পঞ্চায়েত সমিতি অথবা একাধিক পঞ্চায়েত সমিতি নিয়ে গ্রাম ন্যায়ালয় তৈরি করা যেতে পারে। সেই সীমানা নির্ধারণের দায়িত্ব রাজ্য সরকারকেই কেন্দ্র দিয়েছে। আইন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, খেতের ফসল লুঠ কিংবা ঘরের সিঁদ কেটে চুরির মতো ফৌজদারি অপরাধ গ্রামে-গঞ্জে নিত্য দিনের ঘটনা। রাস্তার দখল নিয়ে মারামারি অথবা জোর করে আল কেটে জল আনার অভিযোগে বহু লোক দেওয়ানি মামলা করেন আদালতে। কিন্তু দিনের পর দিন সেগুলির শুনানি হয় না।
প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা যে মামলাগুলির বিচার করতে পারেন, নয়া আইনে গ্রাম ন্যায়ালয়ের বিচারকরাও সেই মামলায় রায় দিতে পারবেন। তিন বছর পর্যন্ত শাস্তি দেওয়ার বিধান আছে এমন বিবাদগুলিই ন্যায়ালয়ের অধীনে পড়বে। ফলে গ্রাম ন্যায়ালয় চালু হলে এক দিকে যেমন ওই মামলাগুলি তাড়াতাড়ি শেষ হবে, তেমনই মহকুমা বা জেলা আদালতগুলিতে মামলার চাপ কমবে। আইন দফতরের হিসেব, রাজ্যে এমন মামলার সংখ্যা এই মুহূর্তে ২৫ লক্ষেরও বেশি। ন্যায়ালয় তৈরি হলে এই মামলাগুলি বিচারের জন্য তাদের কাছে পাঠানো হবে।
গ্রাম ন্যায়ালয় তৈরির পুরো টাকাটাই দেবে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক। এমনকী বিচারক ও কর্মীদের বেতন-সহ প্রথম তিন বছর আদালতের সমস্ত খরচও দেবে তারাই। রাজ্য সরকার অবশ্য এতে সন্তুষ্ট নয়। আইন-বিচার দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “ন্যায়ালয় পিছু পরিকাঠামো তৈরির জন্য ১৮ লক্ষ টাকা এবং অন্যান্য খরচ বাবদ বছরে পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বলেছে কেন্দ্র। যখন এই আইন তৈরি হয়েছিল তখন ওই বরাদ্দ ঠিক ছিল। এখন তো সব খরচই বেড়েছে।” তাই পরিকাঠামো খাতে ন্যায়ালয় পিছু অনুদান বাড়িয়ে ৫০ লক্ষ টাকা এবং অন্যান্য খাতে তা ১০ লক্ষ টাকা করতে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছে রাজ্য। |