পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী অশোক রায় ভিআইপি রোডে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন প্রায় দশ মাস আগে। কিন্তু ইলেকট্রিক বিল আসছে না। চার মাস পরে জানা গেল ফ্ল্যাটের মিটারটিই অচল। আলো-পাখা-এসি মেশিন চললেও মিটারের চাকা ঘোরে না।
বরফ কলে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির কাছে আবেদন করেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার সামসের আহমেদ। নির্দিষ্ট সময়ে বিল এলে দেখা গেল ৫০ টাকা উঠেছে। কয়েক মাস একই বিল আসায় সামসের সাহেব গেলেন বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির দফতরে। দেখা গেল খারাপ মিটার লাগানো হয়েছে বরফ কলে।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, অশোকবাবুর ফ্ল্যাটে কয়েক মাসের বিদ্যুতের খরচ জোগাল বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি। বরফ কলে খারাপ মিটার থাকায় অতিরিক্ত বিদ্যুতের খরচও দিতে হয়েছে বণ্টন কোম্পানিকেই। বণ্টন কোম্পানি এলাকায় এমন ঘটনা যে হামেশাই ঘটে, তা সংস্থার অভ্যন্তরীণ রিপোর্টেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। একে বলা হচ্ছে অদক্ষতার কারণে আর্থিক ক্ষতি।
কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার পরে বণ্টন কোম্পানির কর্মীরা প্রতি মাসে সেখানে যান মিটার রিডিং নিতে। তা সত্ত্বেও কী ভাবে এমন ঘটনা ঘটতে পারে? বণ্টন কোম্পানির এক কর্তা জানিয়েছেন, নজরদারির অভাব এবং কর্মীদের একাংশের দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কোম্পানি সূত্রের খবর, রুগণ্ সংস্থাটি এ ভাবে ফি বছর কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব হারায়। নিজেদের আর্থিক অবস্থা যা, তাতে রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের বকেয়া মেটাতেই এখন হিমশিম খাচ্ছে বণ্টন কোম্পানি। রাজ্য সরকার তাদের যে আর ভর্তুকি দেবে না, তার ইঙ্গিতও পেয়ে গিয়েছেন কর্তারা। এই অবস্থায় নিজেদের ত্রুটিবিচ্যুতি ঢেকে কিছুটা হলেও অপচয় কমাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকারের এই সংস্থাটি।
কী ভাবে? কোম্পানি সূত্রের খবর, চলতি মাস থেকে প্রতিটি ডিভিশনে এক জন করে মেন্টর নিয়োগ করা হচ্ছে। অতিরিক্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার বা তার থেকে উঁচু পদাধিকারীদের মধ্যে এক জন করে এক একটি ডিভিশনে মেন্টরের দায়িত্ব নেবেন। মেন্টররা প্রতি ডিভিশনের কর্মীদের কাজ, গ্রাহক পরিষেবা এবং অন্যান্য অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। মাসে দু’বার করে তাঁরা কোম্পানির সদর দফতরে রিপোর্টও দেবেন। বণ্টন কোম্পানির চেয়ারম্যান রাজেশ পাণ্ডে জানিয়েছেন, নিচুতলার সঙ্গে ওপরতলার কর্তাদের বোঝাপড়ায় যাতে কোনও ফাঁক না থাকে, মেন্টররা সে বিষয়েও নজর রাখবেন। কারণ অনেক সময়ই দেখা যায়, নিচুতলার কর্মীদের অভাব-অভিযোগ ঠিক সময়ে পদস্থ কর্তাদের কাছে পৌঁছয় না।
কর্মী সংগঠনগুলি অবশ্য কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে না। তবে সিটু সমর্থিত ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি ওয়ার্কমেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক রায়চৌধুরী এ কথাও বলছেন, ইচ্ছে থাকলেও অনেক সময় পরিকাঠামো ও পর্যাপ্ত সরঞ্জামের অভাবে কর্মীরা সঠিক পরিষেবা দিতে পারেন না। এটাও কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত। আইএনটিইউসি সমর্থিত এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিলন চৌধুরী বলেন, অপচয় কমানোর দিকটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত। কর্তাদের বিলাসিতায় অনেক সময় অহেতুক অর্থ অপচয় করা হয়। |