বার্তা দফতরে দফতরে
পড়ে থাকা সব আয়-উৎসের সন্ধান চান মমতা
র্থিক সঙ্কট মোকাবিলার জন্য শুধু কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকলে চলবে কি?
চলবে যে না, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা বিলক্ষণ জানেন। আর তাই তিনি জোর দিচ্ছেন রাজ্য সরকারেরই নিজস্ব রাজস্বের ‘পড়ে থাকা’ উৎসগুলো খুঁজে বার করতে।
এবং তার জেরে বিভিন্ন দফতরের সচিবদের বলা হয়েছে অবিলম্বে এই ধরনের অব্যবহৃত (আনট্যাপড) রাজস্ব-উৎসের খোঁজ করে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে রিপোর্ট জমা দিতে। আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে এই মর্মে লিখিত নির্দেশ গিয়েছে খাদ্য সরবরাহ, কৃষি বিপণন, সেচ এবং জলসম্পদ অনুসন্ধানে। পরে অন্যান্য দফতরে একই নির্দেশ পাঠানো হবে বলে মহাকরণ-সূত্রের খবর।
এই উদ্যোগের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী আনন্দবাজারকে জানান, “বিভিন্ন দফতরে এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যেখান থেকে সরকার রাজস্ব পেতে পারে। কিন্তু বাম আমলে হয় সে সব দিকে কেউ নজর দেয়নি। কিংবা নজর দিতে চায়নি বিশেষ কোনও উদ্দেশ্যে।” মমতার কথায়, “আগের সরকার পশ্চিমবঙ্গকে কতটা আর্থিক দুর্গতির মধ্যে ফেলে গিয়েছে, তা সবাই জানে। আমরা চুপ করে হাত গুটিয়ে থাকতে পারি না। তাই দফতরগুলোকে বলছি, তারা খুঁজে দেখুক কোন কোন আনট্যাপড জায়গা আছে, যেখান থেকে রাজস্ব আদায় হতে পারে।”
রিপোর্ট পেলে সরকারের এক বিশেষ কমিটি তা পরীক্ষা করবে। এবং জানিয়ে দেবে, কোন কোন প্রস্তাব কার্যকর হতে পারে। সেই অনুযায়ী সচিবদের উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলা হবে। অর্থ দফতরের এক সূত্রের প্রাথমিক হিসেবে, এ বিষয়ে দফতরগুলো সক্রিয় হলে বছরে অতিরিক্ত প্রায় সাতশো থেকে হাজার কোটি টাকা রাজ্যের কোষাগারে জমা পড়ার আশা রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগটির বাস্তবায়ন নিয়ে দফতরগুলির চিন্তা-ভাবনা কী?
কিছু ভাবনা
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যেমন মনে করছেন, কাজে না-লাগানো বিভিন্ন উৎস থেকে তাঁর দফতরে বছরে বাড়তি ২০-২২ কোটি টাকা আদায় হতে পারে। কী ভাবে?
খাদ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, “আমার দফতরে বহু গুদাম খালি পড়ে আছে। বাজারদরে সেগুলো ভাড়া দেওয়া যায়। অনেক গুদাম ভাড়া দেওয়া আছে বটে, তবে নামমাত্র দরে। বর্গফুটপিছু ৬৫ পয়সায়। অথচ ভাড়া হওয়া উচিত বর্গফুটপিছু অন্তত ২০ টাকা।” মন্ত্রী জানান, এ বার খালি সমস্ত গুদাম বর্তমান দরে ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। উপরন্তু রেশন-ব্যবস্থায় যুক্ত সাত রকম ডিস্ট্রিবিউটর, ডিলার, এজেন্টদের লাইসেন্স ফি-ও বাড়ানো হবে। “ওই খাত থেকেও বেশ কয়েক কোটি টাকা আসবে।” আশা খাদ্যমন্ত্রীর।
কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় জানাচ্ছেন, তাঁরা কলকাতা বাদে রাজ্যের মোট ৪৩টি নিয়ন্ত্রিত বাজারে কৃষিপণ্য-ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স ফি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন। কলকাতায় এত দিন নিয়ন্ত্রিত বাজার ছিল না। নভেম্বরে সংশ্লিষ্ট নির্দেশ জারি হয়েছে। ফলে আগামী দিনে কলকাতার বাজারে কৃষিপণ্যের ব্যবসায়ীদের নতুন দামেই লাইসেন্স নিতে হবে। অরূপবাবু বলেন, “আমরা কৃষিপণ্য পরিবহণ সহজ করতে টোল ট্যাক্স তুলে দিয়েছি। এতে ২০ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হলেও নিয়ন্ত্রিত বাজারের ব্যবসায়ীদের থেকে মোট বিক্রির এক শতাংশ কর হিসেবে আদায়ের নির্দেশ জারি করেছি।”
এই খাতে বার্ষিক প্রায় দু’শো কোটি টাকা সরকারের ঘরে আসবে বলে মন্ত্রীর দাবি।
রাজস্ববৃদ্ধির জন্য অব্যবহৃত বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র খুঁজে পেয়েছে সেচ দফতরও। সেচ-সচিব অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় জানান, দফতরের বেশ কিছু জলাজমি, ছোট বাঁধ ও পুকুর মাছ-চাষের জন্য লিজ দেওয়ার প্রস্তাব সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া মারফত মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো হবে। এ ছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন বাঁধ-এলাকায় সেচের বহু বাংলো, রেস্টহাউস ইত্যাদি আছে। পর্যটকদের সেগুলো আকছার ভাড়া দেওয়া যেতে পারে। আয় বাড়াতে পর্যটন-উপযোগী আরও কিছু ব্যবস্থার কথাও ভাবছেন সেচ-কর্তারা।
তবে অভিনবত্বের পরিচয় দিয়েছে জলসম্পদ অনুসন্ধান দফতর। বাড়তি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে তারা যে সব প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পাঠাচ্ছে, তার অন্যতম হল, ‘ব্যাপক জলচুরি’ আটকানোর উদ্যোগ। ব্যাপারটা কী?
দফতর-সূত্রের খবর: গ্রাউন্ডওয়াটার রিসোর্সেস (ম্যানেজমেন্ট, কন্ট্রোল অ্যান্ড রেগুলেশন) আইন মোতাবেক, গ্রামে-গ্রামে সেচের জল নিতে কুয়ো খোঁড়া হয়। ভূগর্ভস্থ জল তুলতে পাম্পও বসানো হয়। প্রতি একরে ১ ইঞ্চি জল জোগানোর বিনিময়ে সেচ দফতর ১৫ টাকা ও জলসম্পদ অনুসন্ধান দফতর ১৭ টাকা নেয়। কিন্তু সেই টাকা তো নিয়মিত জমা পড়েই না, উপরন্তু শ্যালো পাম্প বা টিউবওয়েল চালানোর জন্য আইনমাফিক যে পারমিট লাগে, তারও ধার ধারে না বহু মানুষ। ফলে সরকারের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়ে চলেছে।
সরকারি হিসেবেই ক্ষতির একটা আন্দাজ মেলে।
আইন অনুযায়ী, কুয়ো ও পাম্প বসিয়ে নির্দিষ্ট মাত্রার জল তুলতে গেলে আবেদনপত্রের সঙ্গে ৫০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত ফি দিতে হয়। তার পরে সরকার আবেদন স্বীকার করলে ফি লাগে ১০০০-৫০০০ টাকা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সব বিধি-নিয়মের পরোয়া না-করে লক্ষ লক্ষ গ্যালন জল তুলে নেওয়া হচ্ছে। এমনকী, সরকারের দেওয়া জল তুলে ঢালাও বিক্রিও চলছে বলে জানিয়েছেন জলসম্পদ-কর্তারা। জল অনুসন্ধান দফতরের এক সূত্রের হিসেবে, শুধু মুর্শিদাবাদ-নদিয়া-মালদহ-উত্তর ২৪ পরগনা মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ এই ধরনের টিউবওয়েল/পাম্প চলছে বিনা পারমিটে।
আর এই চুরি বন্ধ করেই বাড়তি আয়ের কথা ভেবেছে জলসম্পদ অনুসন্ধান দফতর। যে জন্য প্রতিটি নলকূপ এবং পাম্পের পারমিট যাচাই করা হবে। এবং তা থেকে বছরে প্রায় চারশো কোটি টাকা আদায় হতে পারে বলে মনে করছেন দফতরের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.