বলিউডের ‘বাদশা’ শাহরুখ খানকে পশ্চিমবঙ্গের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ হওয়ার প্রস্তাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার প্রতি তাঁর ‘টান এবং ভালবাসা’র কথা জানিয়ে শাহরুখও ‘দিদি’কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী ডাকলে ‘দু’দিনের মধ্যে’ তিনি হাজির হয়ে যাবেন! সে পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন!
শাহরুখের আগ্রহ বুঝেই মুখ্যমন্ত্রী এ বার তাঁর প্রস্তাবকে আনুষ্ঠানিক চেহারা দিতে তৎপর হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের পুনর্জাগরণকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার অনুরোধ জানিয়ে দ্রুত মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের তরফে চিঠি পাঠানো হচ্ছে ‘কিং খান’-এর কাছে। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনের অবসরেই বৃহস্পতিবার একান্ত বৈঠকে শাহরুখের কাছে ঝটিতি প্রস্তাব দিয়ে তাঁর প্রাথমিক ‘সম্মতি’ আদায় করে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, চলচ্চিত্র উৎসবকে ‘জনতার উৎসবে’ পরিণত করার আসর থেকেই শাহরুখের জন্য প্রস্তাব এবং তাঁরও পাল্টা উৎসাহ আখেরে রাজ্যের জন্য ‘ভাল খবর’। যুব ‘আইকন’ হিসেবে শাহরুখের বিশ্বজোড়া পরিচিতি পশ্চিমবঙ্গের ভাবমূর্তি দুনিয়ার বাজারে তুলে ধরতে কাজে আসবে।
বস্তুত, রাজ্যের জন্য ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ হিসেবে কাউকে রাখার উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গে প্রথম। বলিউডের তারকারা এমনিতে বিভিন্ন রাজ্যের নানা উদ্যোগের সঙ্গে নিজেদের ‘ব্র্যান্ড’কে সংযুক্ত করে থাকেন। মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চন যেমন গুজরাত পর্যটনের ‘দূত’ হিসেবে কাজ করেছেন। শাহরুখের ক্ষেত্রে রুপোলি পর্দার স্বাভাবিক বিস্তৃত পরিসর ছাড়াও তাঁর সঙ্গে কলকাতা নাইট রাইডার্সের যোগসূত্র রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীকে বাড়তি উৎসাহ জুগিয়েছে। বলিউডে নায়কের মুকুট, যুব ‘আইকন’, ক্রিকেট-সূত্রে কলকাতার সঙ্গে বন্ধন এবং সংখ্যালঘু তারকা (যদিও শাহরুখের পরিচিতি ঠিক এই গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়) এই ‘প্যাকেজ’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা হাতের কাছে পেয়েছেন। ‘সদ্ব্যবহার’ করতে চেয়েছেন এবং শাহরুখও ‘সাড়া’ দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “শাহরুখ রাজি বলে আমাকে জানিয়েছেন। খুব তাড়াতাড়িই আনুষ্ঠানিক ভাবে ওঁর কাছে চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”
শাহরুখের জন্য ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’-এর প্রস্তাব অবশ্য পূর্বপরিকল্পিত পদক্ষেপ ছিল না একেবারেই। চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে শাহরুখের বক্তব্য শুনতে শুনতে মঞ্চে বসেই মমতার মাথায় এমন ভাবনা ঝলকে ওঠে! বাংলার সংস্কৃতির ভূয়সী গুণকীর্তন করে শাহরুখ যখন বলছিলেন, “গোটা দেশ ও বিশ্বের কাছে এই দিকটা তুলে ধরা উচিত। বিদেশি যে সব অতিথিরা চলচ্চিত্র উৎসবে এসেছেন, তাঁদের বলব, সিনেমা দেখার ফাঁকেই কলকাতার রাস্তায় হাঁটবেন। যে বাতাসটা পাবেন, সেটা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ।” দার্জিলিঙে তাঁর ‘ম্যায় হুঁ না’র শুটিংয়ের কথা বলে শাহরুখ আবেদন জানাচ্ছিলেন, বলিউডের কলাকুশলীদের আরও বেশি করে এ রাজ্যে ‘শুটিং লোকেশন’ রাখা উচিত (প্রসঙ্গত, অনুরাগ বসুর একটি ছবির শু্যটিংও সম্প্রতি দার্জিলিঙে হয়েছে)। শুনতে শুনতে মুখ্যমন্ত্রীর মনে হয়েছিল, এই ভদ্রলোক তো তাঁর কাজই করে দিচ্ছেন!
এর পরেই একান্ত আলাপচারিতায় শাহরুখকে ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ হওয়ার প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। চলচ্চিত্র শিল্পের ক্ষেত্রেই আরও বেশি বিনিয়োগ যাতে বাংলায় আসে, তার জন্য শাহরুখকে উদ্যোগী হতে আর্জি জানান। বৈঠকে আগাগোড়া মমতাকে ‘দিদি’ বলে সম্বোধন করা শাহরুখ জানান, চলচ্চিত্র উৎসবকে যে ভাবে সিনেমা হলের বাইরে আম জনতার মধ্যে নিয়ে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, তা দেখে তিনি ‘অভিভূত’। এই রাজ্য সরকারের সঙ্গে তিনি কাজ করতে আগ্রহী। ক্রিকেটে শাহরুখের বিনিয়োগের প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী আরও প্রস্তাব দেন, ফুটবলের দিকেও তিনি নজর দিন। কারণ,
এ শহরে ফুটবল কিছু কম যায় না। শাহরুখও জানান, ফুটবলে বিনিয়োগের ভাবনা তাঁর মাথায় আছে। আর ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’-এর প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে দেন, মমতার ডাকে হাজির হওয়ার জন্য তাঁকে শুধু দু’দিন সময় দিলেই চলবে! মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সেরেই হংকং উড়ে গিয়েছেন ‘জি-ওয়ান’।
রাজ্য সরকারের একাংশের ব্যাখ্যা, ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’-এর সেতু মমতা এবং শাহরুখ, দু’পক্ষের জন্যই ফায়দাজনক। ‘পরিবর্তন’-এর পরে পশ্চিমবঙ্গের নতুন পরিচিতি নির্মাণে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে ব্রতী হয়েছেন, শাহরুখ সেখানে তাঁর তূণে আদর্শ ‘হাতিয়ার’। আর বিনোদন কর নিয়ে বিগত বামফ্রন্ট সরকারের সঙ্গে শাহরুখের সংস্থার ঈষৎ টানাপোড়েনে জড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপট মাথায় রাখলে নতুন সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে হৃদ্যতা তাঁর পক্ষেও ‘অর্থবহ’! সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে ‘অপাংক্তেয়’ করে দেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগে নাইট রাইডার্স কর্তৃপক্ষের উপরে এক সময় ‘অভিমান’ ছিল কলকাতার। ‘দাদা’কে ‘আউট’ করা-জনিত সেই অভিমান ‘দিদি’র হাত ধরে নতুন ইনিংসে মেটাবেন শাহরুখ? |