দুর্গোৎসবের পরে এ বার পাঁচ দিনের রাস উৎসবে মেতে উঠল বিষ্ণুপুর। কৃষ্ণগঞ্জ, মাধবগঞ্জ ও বাহাদুরগঞ্জের এই রাসের মেলা শুরু হল বৃহস্পতিবার। বিষ্ণুপুর শহর ও লাগোয়া গ্রামাঞ্চল থেকে প্রতি বছরের মতো এ বারও নিয়ে আসা হয়েছে বিভিন্ন মন্দিরের রাধামাধবের প্রাচীন বিগ্রহ। এ গিন থেকেই বিভিন্ন মণ্ডপে শুরু হয়েছে সেই সব বিগ্রহ ঘিরে পুজো, আরতি।
শহরের তিনটি এলাকার মধ্যে সব থেকে বড় মেলা বসেছে কৃষ্ণগঞ্জে। উদ্বোধক হিসেবে এই মেলায় উপস্থিত ছিলেন আবাসন মন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায়। সেখানে শ্রীশ্রী রাধালালজীউ, শ্রীশ্রী কৃষ্ণরায়জীউ ও শ্রীশ্রী গোবিন্দজীউ-সহ ১৩টি প্রাচীন বিগ্রহের সুসজ্জিত মণ্ডপ রয়েছে। এক সঙ্গে সব বিগ্রহের আরতি দেখার জন্য দর্শনার্থীদের বেশ ভিড় ছিল।ভিড় জমেছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও। নজরকাড়া ভিড় মাধবগঞ্জের শ্রীশ্রী মদনগোপালজীউয়ের রাসউৎসবেও। সাবড়াকোড় গ্রাম থেকে সেখানে আনা হয়েছে ডেঙ্গা রামকৃষ্ণ-সহ আরও বহু প্রাচীন বিগ্রহ। |
বাহাদুরগঞ্জের রাসটি চৌধুরীবাড়ির। সেখানে শ্রীশ্রী রাধাদামোদর ঠাকুর জীউ-এর রাসপর্বও সমানভাবে আকর্ষণ করে বিষ্ণুপুরবাসীকে। ফলে, তিনটি মেলা ঘিরে বৃহস্পতিবার থেকেই শহরে তৈরি হয়েছে উৎসবের মেজাজ। পুজোর অঙ্গ হিসেবে দুপুরে থাকে ঠাকুরের মহাপ্রসাদ, সন্ধ্যায় শীতল ভোগ ও আর রাত ১০টা থেকে শুরু হয় সমবেত আরতি। বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পরে মল্লরাজারা যখন তাঁদের রাজধানী বিষ্ণুপুরকে ‘গুপ্ত বৃন্দাবন তীর্থ’ হিসেবে গড়ে তুলছিল, তখন প্রায় ১৬০০ খ্রীস্টাব্দে মল্লরাজা বীর হাম্বীর তৈরি করেন ১০৮ দরজার পিরামিড আকৃতির রাসমঞ্চ। সেই রাসমঞ্চে মল্লরাজাদের আমলে বিখ্যাত রাস বসত। মন্দিরটি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের নিয়ন্ত্রণের আসার পরে ঠিকানা বদল করে রাস উৎসব ছড়িয়ে পড়ে শহরের তিনটি স্থানে। বাহারি আলোকসজ্জা, পাপড়ভাজা, মনোহারি দোকানে ক্রমে জমে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। এর টানে বহু বহিরাগত পর্যটকও বিষ্ণুপুরে আসছেন।
রাস উৎসবের কৃষ্ণগঞ্জ আটপাড়া ষোলোআনা কমিটির সভাপতি রবিলোচন দে বলেন, “এই উৎসবের মঞ্চে এ বার ঐতিহ্যবাহী বিষ্ণুপুর ঘরানার ধ্রুপদের পাশাপাশি সমানভাবে জায়গা দেওয়া হয়েছে এই শহরের ঐতিহ্যবাহী লোক নৃত্য ‘রাবনকাটা’ এবং টুসু গানের দলকে। থাকবে আধুনীক গান, হোলির গানও। তিন উৎসব কমিটির কর্তাদের আশা, “এ বার রেকর্ড জনসমাগম হবে।” |